দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: একুশের ভোটযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নেও একের পর এক ভোটরঙ্গে উত্তপ্ত বঙ্গ রাজনীতির ময়দান। ১৪ বছর আগের ঘটনা নিয়ে গতকাল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিশির অধিকারী আর শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বলেছিলেন, “বাপ-ব্যাটা পারমিশন না দিলে সেদিন নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকতে পারত না।”
চব্বিশ ঘণ্টা কাটল না। পাম এভিনিউর বাড়িতে শুয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নীরবতা ভাঙলেন। বিবৃতিতে লিখলেন, “উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প আসেনি গত এক দশকে। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে এখন শ্মশানের নীরবতা। সেসময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে।”
সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে যেমন তৃণমূলের তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ, দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তেমন বিজেপি ও আরএসএস-এর বিরুদ্ধে বিভেদ ও মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ তুলে ব্যাপক আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।
তাঁর লম্বা বিবৃতিতে ঝরে পড়েছে রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান না হওয়ার আক্ষেপ। এই বিবৃতিতে তিনি আবেদন জানিয়েছেন, এবারের ভোটে বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের জয়ী করতে। তাঁর কথায়, এঁরাই পারবেন রাজ্যকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে।
গতকাল মমতা বলেছিলেন, “একটা দুটো কথা বলে রাখি। সেদিন যে নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকবে, মার্চ করবে,গণ্ডগোল হবে– সেটা কি ওই গদ্দার জানতেন না?” এরপরেই মমতা বলেন, “কতবার বুদ্ধদেববাসবুর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছিল? আমি আজকে একটা জায়গায় চিফ মিনিস্টার আছি। আমিও কিছু খোঁজ খবর রাখি।”
এরপর তিনি বলেন, “সেদিন বাপ-ব্যাটার পারমিশন ছাড়া নন্দীগ্রামে পুলিশ ঢুকতে পারত না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি।”
১৪ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের গুলিচালনার ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যুর জন্য তৎকালীন বিরোধী নেত্রী দায়ী করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাম সরকারকেই। কিন্ত গতকাল রেয়াপাড়ার সভা থেকে সেই গুলিচালনার ঘটনায় নেত্রী সব দায় চাপালেন নন্দীগ্রামে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর বাবা শিশির অধিকারীর উপর। তারপরই সেই মন্তব্য হাতিয়ার করে মাঠে নামে বামফ্রণ্ট। এদিন সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিবৃতি।
তারপর থেকেই বামেরা রে রে করে ময়দানে নেমেছিল। বলা হচ্ছিল, সেদিন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা দিদিমণি নিজেই ফাঁস করে দিয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকে দুটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এক, মমতা দাবি করেছেন বাপ-ব্যাটা বাড়ি থেকে বের হননি। ঘরে ঢুকেছিলেন। অনেক ঝক্কি পোহানো সত্ত্বেও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তাহলে পুলিশ ঢুকবে নন্দীগ্রামে তা কী করে তাঁর আগে গদ্দার জানলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন দশ বছর হল। কবে তিনি জানলেন বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে পুলিশ ঢোকা নিয়ে ফোনে কথা হয়েছিল? যদি আগে জেনে থাকেন তাহলে এত বড় অভিযোগ সামনে আনেননি কেন? আর যদি সত্যি সম্প্রতি জেনে থাকেন তাহলে কি বুঝতে হবে সরকারে তাঁর নিয়ন্ত্রণ নেই? তিনিই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!
সোমবার সকাল থেকেই সিপিএম চেষ্টা করছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের একটা অডিও বিবৃতি আনা যায়। শেষপর্যন্ত তা না হলেও লিখিত বিবৃতি দিলেন বুদ্ধবাবু।