দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ নদিয়ায় গুলি করে খুন করা হল কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে (৩৮)। শনিবার সন্ধেয় নিজের কেন্দ্র নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ফুলবাড়িতে সরস্বতী পুজোর একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানের শেষে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মঞ্চ থেকে নেমে আসতেই একদল দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করে। এরপরই তাঁকে দ্রুত শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর খবর নিমেষেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলায়। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা কংগ্রেস সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্ত অভিযোগ করেন, ‘বিজেপি ও মুকুল রায়ের নির্দেশেই তাঁকে খুন করা হল।’ নদিয়া জেলার পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিজেপি সত্যজিৎকে মেরেছে। গৌরি আমাকে প্রথম ফোনে খবরটা জানায়। আমি রবিবার নদিয়ায় যাচ্ছি।’ এরপরই ঘটনার তদন্ত চেয়েছেন তিনি। গৌরি বলেন, বিধায়ক খুন হয়েছেন, এরকম ঘটনা আগে শুনি নি। গৌরি এবং অনুব্রত দুজনেই এই খুনের ঘটনার জন্য মুকুলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
তরুণ এই বিধায়ক এলাকায় মতুয়া সঙ্ঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে উপনির্বাচনে জিতে তিনি প্রথম বিধায়ক হন। বিধানসভাতেও তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে সরব হতে দেখা গেছে। সম্প্রতি তিনি বিয়ে করেন। তাঁর দেড় বছরের সন্তান রয়েছে। বাড়ি হাঁসখালির মাজিতপুর গ্রামে। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর সেখানে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী রত্না কর ঘোষ। কিন্তু ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই অনুষ্ঠান শেষ করে বেড়িয়ে যান তিনি। তারপরই এই ঘটনা ঘটে।উনিশের ভোটের আগে এই খুনকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত সরাসরি আঙুল তুলেছেন মুকুল রায়ের দিকে। তাঁর অভিযোগ, “এই খুন করিয়েছে বিজেপি। এর পিছনে রয়েছে মুকুল রায়। তাঁর নির্দেশেই দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে।“ একই দাবি তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেছেন, দলের কিছু গদ্দার এই খুন করিয়েছে।
তাদের ছাড়া হবে না।”অন্যদিকে তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা গৌরীশঙ্করকেই বিধায়ক খুনে দায়ি করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। বলেছেন, “কোনও কারণ ছাড়াই আমার নাম নেওয়া হচ্ছে। সত্যজিৎ বাচ্চা ছেলে, খুব ভালো ছেলে ছিল। তাঁর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। প্রয়োজনে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো হবে।” সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন বিজেপি জেলা সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। ঘটনার সত্য সামনে আসবে।”মুকুল রায় বলেন,”আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে। গৌরীশঙ্করের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠাবো।” হাঁসখালি ব্লকের বগুলার ফুলবাড়ি এলাকায় বড় বাজেটের একটি সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন করতে গেছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। উদ্বোধনের পর মঞ্চ থেকে নেমে সামনের সারিতে বসে অনুষ্ঠান দেখছিলেন তিনি। আচমকাই পর পর গুলি এবং তার পরেই রক্তাক্ত লুটিয়ে পড়েন বিধায়ক। কানের পিছনে গুলি লাগে। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাঁকে। ঘটনার পরই এলাকায় তুমুল উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। ঘটনাস্থলে থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। রবিবার, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে পারে সিআইডির একটি দল।