দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা সংক্রমণ রুখতে চতুর্থ দফার লকডাউন শুরু হয়েছে দেশে। কিন্তু এই লকডাউনের মধ্যেই যেখানে সম্ভব সেখানে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দিকে নজর দেবে সরকার। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সড়কপথে এবং আকাশপথে গণপরিবহণ চালানোর ক্ষেত্র ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে। তবে এ ব্যাপারে কোথায় কী কী চলবে কতটা পরিমাণে, তার পরিকল্পনা করার দায়িত্ব থাকবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতেই।
গত সপ্তাহেই যখন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হয়, তখন মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি করেছিলেন রাজ্যের হটস্পট কোনগুলি, তা নির্ধারণের দায়িত্ব রাজ্যকেই দেওয়া হোক। এই দাবি রাখা হতে পারে কেন্দ্রের তরফে, এমনটাই খবর সূত্রের। ইতিমধ্যেই সংক্রমণ প্রবণতা অনুসারে রাজ্যগুলির কাছ থেকে একটি করে ব্লু প্রিন্ট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার উপর ভিত্তি করেই কোথায় কোথায় কীভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হবে বা কোন কোন এলাকায় বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে, তার নির্দেশিকা তৈরি করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷
প্রধানমন্ত্রী দু’দিন আগে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, সেখানেও তিনি উল্লেখ করেন, যে চতুর্থ দফার লকডাউন শুরু হতে চলেছে, তা আগের চেয়ে একেবারে আলাদা হবে। নতুন ‘রং ও রূপ’ হবে তার। নিয়মাবলিও হবে নতুন। অনেকের মতে, এই লকডাউনে যে ধীরে ধীরে বেশ কিছু ক্ষেত্র শিথিল করা হবে, সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন মোদী।
একটি সূত্রের খবর, নন-হটস্পট জ়োনগুলিতে বাস পরিষেবা চালু হবে। সীমিত সংখ্যক যান চলবে এবং কম সংখ্যায় মানুষ উঠবেন তাতে। অটো ও ট্যাক্সিও চলতে শুরু করবে এবার। পাস থাকলে এক রাজ্যে থেকে আর এক রাজ্যেও যাওয়া যাবে। সামনের সপ্তাহ থেকে চালু হয়ে যেতে পারে ডোমেস্টিক বিমানও। ট্রেন চলার কথা ঘোষণা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
শুধু জরুরি জিনিসের বাইরে সমস্ত জিনিসের হোম ডেলিভারিও অনুমোদিত হতে পারে। কিন্তু করোনা যাতে আর সংক্রমণ না বাড়ায় সে জন্য যথেষ্ট কড়াও থাকতে হবে সরকারকে। হটস্পটগুলিকে আরও কঠোর নিয়মে বাঁধতে হবে। কিন্তু বাকি জায়গাগুলিতে ছাড় দিতেই হবে এবার।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ দেশের নানা প্রান্তে কোয়ারেন্টাইনে আছেন বা নজরদারির আওতায় আছেন সম্ভাব্য করোনা রোগী হিসেব। এখনও কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি তাঁদের, হয়নি পরীক্ষাও। কিন্তু এঁদের মধ্যে একটা অংশেরও যদি করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে, তাহলে তা চরম বিপজ্জনক হবে। কারণ তাঁদের সংস্পর্শে আসা মানুষের সংখ্যাটা আরও বিশাল।
সারা দেশের অনেকগুলি রাজ্য লকডাউন শিথিল করে ক্রমে স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগোনোর কথা ভাবলেও, মহারাষ্ট্র অবশ্য এখনই তুলছে না লকডাউন। অন্য কোনও জেলার সঙ্গে কোনও যাতায়াতেরও অনুমতি দেবে না তারা। গ্রিন জ়োন বা অরেঞ্জ জ়োনে কিছু কাজের জায়গা খুললেও, তা খুবই সীমিত থাকবে। সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
তার পরেই আছে গুজরাত। তবে আশাজনক বিষয় হল, এ রাজ্যের সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত বড় শহরগুলিতেই সীমাবদ্ধ। তার বাইরে বেরোয়নি। ফলে কিছু জায়গায় কড়াকড়ি শিথিল করা যেতে পারে।
তবে সব রাজ্যের মধ্যে করোনা দমনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কেরালা। ফলে এবার বাস, ট্রেন, মেট্রো, ডোমেস্টিক বিমান– সবই চালু করার কথা ভাবছে তারা। খোলা হবে হোটেল ও রেস্টুব়্যান্টগুলিও। এই মুহূর্তে সে রাজ্যে পাঁচশোরও কম মানুষ কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
তবে এর মধ্যেই চিন্তা বাড়িয়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি। কারণ সেখানে বহু অভিবাসী শ্রমিক ফিরতে শুরু করেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁদের থেকে।