সম্পাদকীয়ঃ-গোটা দেশ জুড়ে এখন এক অন্য ছবি সামনে আসছে।গোটা দেশ দেখছে নাগরিক সংশোধনী আইন ও সএএর বিরোধিতায় এখন এদেশের ভেতর থেকেই উঠে আসছে এক নতুন জাতীয়তাবোধ,জাতীয় চোতনা।কেন্দ্রীয় শাসক দল ভেবেছিল হিন্দু-মুসলমানের বিভাজন তৈরি করে সহজ অংকে কিস্তিমাত করতে পারবে।ভেবেছিল এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের মনে মুসলিম বিদ্বেষ ঢুকিয়ে তারা গোটা দেশে মুসলিমদের কোণঠাসা করে হিন্দু ভাবনাকে জাতীয়তাবাদ বলে চলিয়ে দিতে পারবে।কিন্তু দেখা গেল বিষয়টা অত সহজ হচ্ছে না,প্রতিবাদী মানুষ জানিয়ে দিচ্ছে তারা হিন্দু-মুসলমান বিভাজন চান না,বিদ্বেষ চান না,ঘৃণার উন্মেষ চান না।বরং এদেশের সাধারণ মানুষ চায় বহু ধর্মের সহাবস্থান,চান সবাই মিলে পাশাপাশি-কাছাকাছি থাকতে।ঠিক এই মূহুর্তে গোটা দেশে যে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন তার নেতৃ্ত্ব কোন বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল দিচ্ছে না,দিচ্ছে দেশের ছাত্র সমাজ ও অগণিত সাধারণ মানুষ।এরা সম্মিলিত কন্ঠে ভারতের জাতীয় সংগীত গাইছেন আর আন্দোলিত করছেন ভারতের জাতীয় পতাকা।এদের দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া কেন্দ্রীয় শাসক দলের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না আবার এদের প্রতিবাদকে মেনে নিতে পারছেন না কেন্দ্রের শাসক দল। তারা মহা মুশকিলে পড়েছেন।এই কারণেই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নানা সময়ে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে নানা বিভ্রাল্তি মূলক মন্তব্য করে চলেছেন।
ঘৃণার প্রতিরোধে উঠে আসছে নতুন জাতীয়তাবাদ
আসলে বিজেপি এ দেশে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম বলে যা প্রচার করে আসছিল এবার দেশের ছাত্র সমাজ ও নাগরিক সমাজ তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে,তারা বলতে চাইছে দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা,দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন,দেশের সমৃদ্ধি।এসব বাদ দিয়ে শুধু হিংসা আর ধর্মীয় বিভাজন দেশপ্রেম হতে পারে না।এবার তাই প্রতিবাদী আন্দোলনে সমবেত মুসিম সম্প্রদায়ের মানুষ মিছিলে হেঁটেছেন জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে।আর সব রাজনৈতিক ঝান্ডা ছেড়ে দিয়ে দেশের কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদে অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছেন তেরঙ্গা পতাকাকে।যাদের মুখে জাতীয় সংগীত আর হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা কোন যুক্তিতে তাদের দেশদ্রোহী বলে চিনতে চাইবে মানুষ?এখানেই সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন দেশের কেন্দ্রীয় শাসক দল।এভাবেই হিংসা আর বিদ্বেষের প্রতিরোধে দেশের ভেতর থেকেই উঠে আসছে এক নতুন দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ।ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ এক নতুন ভারতের গান গাইতে শুরু করেছে।লড়াইটা কোন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক দলের নয়,এ লড়াই ভারতের ঐক্য ও ধর্মীয় সহাবস্থান বজায় রাখতে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর লড়াই।ধর্মীয় হিংসা কে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে গিয়ে বিজেপি আসলে এদেশের জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে জাগিয়ে তুলেছে।সেই জাতীয়তাবাদ দেশপ্রেমই এখন বিজেপির প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে।আপমর ভারতবাসী এখন দাঁড়িয়ে নতুন এক ভারতের উম্নেষপর্বে।যে নতুন ভারতের কারিগড় কোন রাজনৈতিক দল নয় মানুষ,অগুন্তি সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা।এ বড় কঠিন সময়,এ বড় সুখের সময়ও বটে।