দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বাঁকুড়ার সভা থেকে বিজেপি, বাম, কংগ্রেসকে এক সারিতে বসিয়ে তীব্র আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে হারাতে তিন দল এক হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘জগাই,-মাধাই-এক হয়েছে।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে টাকা ছড়ানোর অভিযোগও তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, টাকা নিয়ে নেবেন, কিন্তু ভোট দেবেন না।
বিজেপির বিরুদ্ধে ভয়-ভীতির রাজনীতির অভিযোগ তুলে মমতা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বাংলায় একটাও আসন পাবে না বিজেপি। আমি জেলে থাকলেও তৃণমূলকে জেতাব।’’
দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন, এই জেলায় পর্যবেক্ষক কে, ওই জেলায় পর্যবেক্ষক কে। আমি বলছি সারা বাংলায় আমিই পর্যবেক্ষক। কোথায় কী হচ্ছে, কে কোথায় যাচ্ছে, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, আমি সব জানি। সব বুঝেও তাঁদের ছেড়ে রেখেছি।’’ তৃণমূল নেত্রী এ দিন আরও বলেন, ‘‘এত দিন সরকারের কাজে বেশি মন দিয়ে দলকে একটু ঢিলে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার পুরো দলটাই আমি দেখব। এই বাঁকুড়ার মাটি থেকেই সেই কাজ শুরু করলাম আমি।’’
একটা সময় ছিল, যখন বাঁকুড়ায় দিদির সভা হলে মঞ্চে উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকত দলের তরুণ ও দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
আর বুধবার সেই বাঁকুড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা যখন শেষ হল, দলের অনেকেই বলাবলি শুরু করেছেন, শুভেন্দুর উদ্দেশেই কি বার্তা দিতে চাইলেন দিদি?
‘দল যে ভাবে চলছে’ তা নিয়ে শুভেন্দুর যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে সে ব্যাপারে আর কোনও রহস্য নেই। মিটমাট করার জন্য দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন দিদি। দু’দফায় সেই বৈঠকের পর, দলীয় সূত্রে খবর, আর পাঁচটা কারণ ছাড়া জেলা পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়ার জন্যও শুভেন্দু রুষ্ট। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষক ছিলেন তিনি।
দিদি অবশ্য এদিন শুভেন্দুর নাম করেননি। তবে বলেন, “একটা কথা বলতে চাই, অনেকে ভাবেন, বাঁকুড়া জেলার পর্যবেক্ষক কে, পুরুলিয়ার কে, মেদিনীপুর কে দেখবে, আসানসোল কে দেখবে, জলপাইগুড়ি দেখবে কে? আগে দলকে মেসেজ দিয়ে বলছি, সারা বাংলায় আমি একজন কর্মী হিসাবে আমিই এখন অবজার্ভার।”
একই সঙ্গে মমতা বলেন, “প্রত্যেকটা ব্লক থেকে ব্লকে কে কী করছে, কে কে কনট্যাক্ট করছে, কার সঙ্গে কে যোগাযোগ রাখছে, প্রত্যেকটা হিসাব আমি এ টু জেড আমি খবর রাখি। দল আমাকে এ জন্য সাহায্য করছে।”
এ কথা বলার পাশাপাশি দিদির এদিনের বক্তৃতায় বারবারই উঠে আসে বিজেপির প্রসঙ্গ। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, টাকা দিয়ে তৃণমূল ভাঙাতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তারা তৃণমূলের কর্মী, বিধায়কদের লুব্ধ করতে চাইছে। এ ব্যাপারে দিদি আরও বলেন, “দু-একজনকে দেখতে পাবেন, হয়তো তৃণমূল করেন আবার এদিক ওদিক যোগাযোগও রাখেন। ভাববেন না দিদি জানে না, দিদি ওঁদের ছেড়ে রেখেছে। ছাগলের একটা ছানাকে ছেড়ে রাখতে হবে তো।”
রীতিমতো আগ্রাসী মূর্তি নিয়ে তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, “আমরা মনে করি তাঁরা ধান্দাবাজ। এই ধান্দাবাজদের একটা গোষ্ঠী রয়েছে। তাঁদের সংখ্যা খুব কম। রাতের অন্ধকারে দেড়টা দুটোয় কে যাচ্ছে, নজর রাখুন। কে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। কে কোনও কাজ ছাড়া গাড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে খেয়াল রাখুন।”
লোকসভা ভোটের সময়েই বাংলায় প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তৃণমূলের অন্তত চল্লিশ জন বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অর্থাৎ তৃণমূল যে ভাঙতে পারে তার ইঙ্গিত তখন থেকেই দিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। একুশের ভোট আসছে। তার আগে এ ব্যাপারে তৃণমূলের একাংশের মধ্যে আশঙ্কা আরও জাঁকিয়ে বসছে। অনেকে মনে করছেন, সেই কারণেই এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “এ তো ভবিতব্য ছিল। পাপ করলে প্রায়শ্চিত্তও করতে হবে। কংগ্রেস, সিপিএমের বিধায়কদের অনৈতিক ভাবে ভাঙিয়েছিল তৃণমূল। তাঁরা নির্লজ্জের মতো তৃণমূলের মঞ্চে ঝাণ্ডা নিয়ে দাঁড়িয়েছে, অথচ বিধানসভায় খাতায়-কলমে পুরনো দলে রয়ে গিয়েছেন। উপ নির্বাচন হয়নি। এই পাপের শাস্তি হবে না?”