এনডিএ ছেড়ে একুশের ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধার অঙ্গীকার গোর্খা নেতা গুরুং-এর

0
429

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এ জন্যই বলে রাজনীতির খেলা!খেলাই বটে। পাহাড়ে সেই খেলাতেই পাশা বদলে গেল। যে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে বাংলার তৃণমূল সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিল, পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন যিনি, সেই গোর্খা নেতা আজ কলকাতায় অভিজাত হোটেলে বসে সাংবাদিক বৈঠক করলেন। এবং সেই বৈঠকে ঘোষণা করলেন, এনডিএ ছাড়ছেন তিনি। একুশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

  • লোকসভা ভোটে ‘অনুপস্থিত’ বিমল গুরুঙ্গ কলকাঠিতেই দার্জিলিংয়ে জেতে বিজেপি।
  • তিনি প্রকাশ্যে এসে মমতাকে সমর্থন জানালেন। স্বাভাবিক কারণেই বিধানসভা ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপির কাছে এ এক বিরাট ধাক্কা।
  • রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই বলেন, ‘পাহাড়ে বিমল গুরুঙ্গদের ফিরতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাই নিজের জায়গায় ফিরতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হল।’

একাধিক মামলায় জর্জরিত গুরুং যখন ফেরার ছিলেন, তখন রাজনৈতিক সূত্রে জানা যাচ্ছিল বিজেপির আশ্রয়ে তিনি। লোকসভা ভোটের সময়েও গুরুং প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। তবে তাঁর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তের উপর।

কিন্তু এ দিন সেই বিজেপিরই তীব্র সমালোচনা করেন এই গোর্খা নেতা। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা কী পেয়েছি? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ সকলেই আশ্বাস দিয়েছিলেন গোর্খাল্যান্ডের দাবির স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে। ভোট ইস্তেহারেও সে কথা লিখেছিলেন।

কিন্তু গত ৬ বছরে কিছুই তো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে শুধু বলেন, ‘দেখছি’, ‘হবে’। তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বরং ভাল। উনি আমাদের কথা শুনেছিলেন। তার পর কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন।

গুরুংয়ের ভোট বদলের কাহিনিতে টুইস্টের শুরু এখান থেকেই। সাংবাদিক বৈঠকে এর পরেই গুরুং বলেন, আমি কেন্দ্রে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট তথা এনডিএ-র শরিক। কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে এনডিএ ছাড়ছি। সেই সঙ্গে এই অঙ্গীকার করছি যে একুশের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ভোট লড়ব। সেই সঙ্গে গোর্খাল্যাণ্ডের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করব।

গুরুংকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার বিরুদ্ধে তো ইউএপিএ ধারায় মামলা রয়েছে, খুনের মামলা রয়েছে, পুলিশ আপনাকে খুঁজছিল? এই যে আপনি এখানে বসে রয়েছেন, পুলিশ তো কিছুই বলছে না!

জবাবে গুরুং বলেন, আমি রাজনৈতিক কর্মী। কোনও অন্যায় করিনি। এর পরেও যদিব পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে তা হলে জেলে যেতে রাজি। সেখানে বসেই কাজ করব।

বাংলায় শাসক দলের সঙ্গে তাঁর কবে এবং কী ধরনের আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। এও প্রশ্ন করা হয়েছিল, তা হলে কি পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছে তৃণমূল? জবাবে গোর্খা নেতা বলেন, এখনও তৃণমূলের কারও সঙ্গে আমার আলোচনা হয়নি।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের কথায়, গুরুংয়ের কথা হাস্যকর! শাসক দলের কারও সঙ্গে ওঁর আলোচনা হয়নি, অথচ তৃণমূলের সঙ্গে তিনি জোট করবেন ঘোষণা করে দিলেন!

বস্তুত এক মাস আগে থেকেই রাজনৈতিক পরিসরে জল্পনা ছিল যে গুরুং তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু তখন গুরুং সে কথা বেমালুম অস্বীকার করেন। এমনকি একটি অডিও বার্তায় বলেন, তাঁর নামে মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে।

সে কথা যে তখন মিথ্যা ছিল না তা হয়তো আজ প্রমাণ হয়ে গেল। গুরুংয়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তৃণমূলও কিছু বলেনি। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, এ হল সুবিধাবাদী রাজনীতি। এই ধরনের লোকেদের কেউ বিশ্বাস করে না। তিনি অবশ্য সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের দিকে। বলেন, ‘ভোট আসতেই এবার হিসেব পালটানোর খেলায় নেমেছে তৃণমূল। রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা থাকা ব্যক্তিও এখন তৃণমূলের সঙ্গী হবে। এটাই তৃণমূলের ভোট জেতার মন্ত্র।’

Previous articleহঠাৎ বিমল গুরুংয়ের আবির্ভাব কলকাতায়, দীর্ঘদিন ফেরার থাকার পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতাকে ঘিরে চাঞ্চল্য
Next articleবিজেপির বিরুদ্ধে পাহাড়ে একজোট হওয়ার ডাক তৃণমূলের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here