‘একজন মুসলিমেরও নাগরিকত্ব যাবে না, টিকাকরণ শেষ হলেই শুরু নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ, ঠাকুরনগরে ঘোষণা অমিত শাহের

0
717

দেশের সময় , ঠাকুরনগর : বুধবার মালদহের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিজেপি মুসলমানদের দেয় ‘দে চিমটি’।
অনেকের মতে, দিদি সংখ্যালঘু ভোটের মেরুকরণ ঘটাতে মরিয়া। মুসলমানদের সে কারণেই বিজেপির জুজু দেখাচ্ছেন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মমতার সেই বক্তৃতার পাল্টা জবাব দিলেন অমিত শাহ। ঠাকুরনগরের সভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাখুলি অভয় দিতে চাইলেন সংখ্যালঘুদের।

অমিত শাহ পষ্টাপষ্টিই বলেন,“মুসলমান ভাইদের বলছি, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনে কারও নাগরিকত্ব যাবে না। এই পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে এ কথা বলে যাচ্ছি। কারণ ওই আইন নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। তা কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। এই যে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুনবেন না।”
দিল্লির শাহিনবাগ থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাস, ’২০ সালের গোড়ায় যখন দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধেছিল তখন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি বারবার সামনে এসেছিল। দেখা গিয়েছিল, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে উদ্বেগও কাজ করছে। তাতে রাজনৈতিক ইন্ধনও ছিল। এদিন যেন সেটাই দূর করতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিন ঠাকুরনগরে অমিত শাহর সভাকে কেন্দ্র করে মূল কৌতূহলের বিষয় ছিল একটাই। মতুয়া সম্প্রদায়ের আগ্রহ ছিল তাঁদের চিরস্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার করে কী বলেন তা শোনা। আবার ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিরও অনেকে দেখতে চাইলেন, সিএএ নিয়ে শাহ কী ঘোষণা করেন।
এদিন সভার শুরুতে অমিত শাহও বলেন, আমি জানি, সংবাদমাধ্যম থেকে তৃণমূল—সবাই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়েই কথা শুনতে চায়।

এর পরই শাহ ঘোষণা করেন, কোভিডের টিকাকরণ শেষ হলেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। তাঁর কথায়, “এখানে মতুয়া ও নমঃশূদ্র সমাজের লোক রয়েছেন। যাঁরা বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী হয়ে এসেছিলেন। দেশ ভাগের পর কংগ্রেসের নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, সম্মান দেওয়া হবে। উনিশের ভোটে আমরা বলেছিলাম, বিজেপি ক্ষমতায় এলে আমরা মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেব। উনিশ সালে জিতেছি। বিশ সালেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাশ করিয়েছি”।

ঠাকুরনগরে অমিত শাহর এই সভার কিছুদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বনগাঁয় সভা করেছিলেন। সেদিন মমতা বলেছিলেন, “বিজেপি তো বলেছিল হ্যান কর দেঙ্গা, ত্যান কর দেঙ্গা, লেকিন কুছ নেহি কিয়া।”

পাল্টা এদিন শাহ বলেন, “মমতাদিদি বলতে শুরু করলেন, ঝুটা প্রতিশ্রুতি। কিছু হবে না। নাগরিকত্ব দেবে না। আরে মমতা দিদি। আমরা যা বলি তাই করি। আজ এই পবিত্র ভূমিতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি, টিকাকরণ পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেলে, করোনা থেকে মুক্ত হলেই নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করে দেব।”

ভোটের আগে মতুয়া মন জয়ে দরাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কোভিড টিকাকরণের পরেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হবে। সঙ্গে ঠাকুরনগর স্টেশনের নাম ‘শ্রীধাম ঠাকুরনগর’ করা, দলপতিদের পেনশনের মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিঁধলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।

অন্য দিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা শুধু সমালোচনা নয়, রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছেন, রাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে দেবেন না। তা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতেও ছাড়েননি অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বহু বছর ধরে নাগরিকত্বের দাবি করে আসছেন। কেউ তাঁদের কথা শোনেননি। আমরা যখন তাঁদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি, তখন দিদি বলছেন, কার্যকর করতে দেবেন না। কেন্দ্র এই আইন কার্যকর করতে চাইলেও বাধা দেবেন।’’ এর পরই শাহের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘দিদি, এটা সংসদে পাশ হওয়া আইন। সেই আইনকে কী ভাবে বাধা দেবেন?’’

শাহের কটাক্ষ, ‘‘এপ্রিলের পর অবশ্য আপনি আর বাধা দিতেও পারবেন না। কারণ ভোটের পর আপনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।’’ একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমি এই মঞ্চ থেকেই আপনাদের আশ্বস্ত করছি, আপনারা ভারতের নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবেন।’’


নাগরিকত্বের পাশাপাশি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’ এবং ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প চালুর কথা ফের বলেছেন শাহ। মতুয়াদের জন্য এর বাইরেও আলাদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অমিত। বলেছেন, ঠাকুরনগর স্টেশনের নাম ‘শ্রীধাম ঠাকুরনগর’ করা হবে। এ ছাড়া মতুয়া দলপতিদের জন্য পেনশন, শরনার্থী কল্যাণে আলাদা প্রকল্পের কথাও মঞ্চে বলেছেন তিনি। মতুয়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের জন্য কিছু প্রকল্প চালু করা যায় কি না, তা নিয়েও কেন্দ্র ভাবনা চিন্তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত লোকসভা ভোটের আগে ঠাকুরনগরে এসে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাহ। সেই কথা মনে করিয়ে শাহ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এখানে ভোটের আগে মতুয়াদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ভোটে মতুয়ারা আমাদের ঝুলি পদ্মফুলে ভরিয়ে দিয়েছেন। আমরাও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) সংসদে পাশ করেছি।’’

মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি যাই প্রচার করুন, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটা করবই। এই পবিত্রভূমিতে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি, টিকাকরণের কাজ শেষ হলেই, করোনার থেকে মুক্তি পেলেই, আপনাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ হবে। দেশের সংসদে পাশ হওয়া আইন, আপনি কী করে আটকাবেন? আর আপনি তো আর মুখ্যমন্ত্রীও থাকবেন না।’ সংখ্যালঘু সমাজকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, ‘CAA হলে মুসলিমদের নাগরিকত্ব চলে যাবে এমন কোনও বিষয়ও নেই। ওঁদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

মতুয়া সমাজকে প্রণাম জানিয়ে সভা ঠাকুরনগরে সভা শুরু করেন তিনি। সাফ জানিয়েছেন, বার বার তিনি ঠাকুরনগরে আসবেন। তিনি বলেন, ‘মমতা খুব খুশি হয়েছিলেন, আমি না আসায়, কিন্তু উনি না হারা অবধি আমি বার বার আসব। বাংলায় সরকার গড়বে বিজেপি। মমতার বিদায় নিশ্চিত। আপনি দিন গোনা শুরু করে দিন।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, তাঁর এদিনের সভার পরে বিজেপি পন্থী মতুয়া শিবিরের পক্ষে মানুষের কাছে যাওয়ার রাস্তা আরও বেশি করে খুলে গেল।

Previous articleআজ ঠাকুরনগরে সিএএ নিয়ে অমিত শাহের স্পষ্ট বার্তা শোনার অপেক্ষায় মতুয়ারা
Next articleপ্রাপ্তিযোগ সিংহের, রোমান্টিক প্রস্তাবে সাড়া পেতে পারেন মীন পড়ুন রাশিফল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here