সম্পাদকীয় – দেশের সময়ের জন্য)-ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৃণাঙ্কুর নাগের মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী তৃণাঙ্কুর খেলোয়াড় কোটাতে পূর্ব রেলের কর্মী পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন।তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা যত কমই থাক না কেন,যেহেতু তিনি জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন,রাজ্য স্তরের একজন চ্যাম্পিয়ান ছিলেন তাই তাকে তো জাতীয় সম্পদ বলেই বিবেচনা করার কথা।অথচ মর্মান্তিক সত্য হল এই যে, এরকম একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে কোন গুরুত্ব না দিয়ে পূর্ব রেলের কর্তা ব্যক্তিরা তাঁকে দিয়ে ট্রেনের তার সারাইয়ের মত বিপজ্জনক কাজ করাতেন।যে কাজে তৃণাঙ্কুরের কোন প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা ছিল না।আর এই কাজ করতে গিয়েই ট্রেনের হাইপারটেনশন তারে পৃষ্ট হয়ে দেশের এক প্রতিভাবান ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় গত সোমবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।তৃণাঙ্কুরের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বার বার বলা সত্ত্বেও তৃণাঙ্কুরকে কাজের জায়গা বদল করতে দেয় নি পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ।এমন ভয়াবহ ঘটনা গটে যাবার পর রেল বলছে তদন্ত করে দেখা হবে।আমাদের প্রশ্ন কোন সভ্য দেশে এই ঘটনা ঘটতে পারে?একজন খেলোয়াড় যে কিনা জাতীয় দলে খেলে এসেছেন,যে রাজ্য স্তরে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন,তাকে এভাবে দেশের একটা সরকারি সংস্থা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে?যে ছেলেটার কাঁধে দেশের মুখ জগত সভায় উজ্জ্বল করার ভার তাকে এভাবে রেলের বিপজ্জনক ইলেকট্রিক তার সারাই করতে পাঠাতে পারে কী ভাবে রেল কর্তৃপক্ষ?কোন যুক্তিতে এই ছেলেটা রেলের একজন বড় কর্তা-ব্যক্তির চেয়ে কম সম্মান পায়?রেলের যে সব বড় বাবুরা বড় পরীক্ষায় পাশ করে রেলে মোটা মাইনের চাকরী করেন,তাদের চেয়ে তৃণাঙ্কুরের সম্মান অনেক বেশী হওয়ার কথা কারণ তৃণাঙ্কুর জাতীর ও দেশের হয়ে খেলে বিশ্ব সংসারে ভারতের নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন।অথচ তাকেই কিনা রেলের এক শ্রেণীর অপদার্থ অফিসারের আদেশ মানতে গিয়ে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই জীবন থেকে ছুটি নিতে হল!!এ আমাদের জাতীয় লজ্জা,এ আমাদের চরম ব্যর্থতা যে আমরা পারি না এই তরুণ খেলোয়াড়দের জাতীয় সম্পদ বলে বিবেচনা করতে।খেলোয়াড় কোটায় কোন সরকারি সংস্থায় নিম্ন পদে চাকরি করতে যাওয়া মানেই তার খেলোযাড়ি সম্মান তুলে রাখতে হবে,এ বোধহয় আমাদের এই পোড়া দেশেই একমাত্র হয়।গোটা পৃথিবীতে খেলোয়ারদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে,সেখানে পুঁথিগত বিদ্যাকেই একমাত্র শিক্ষার মাপকাঠি করা হয় না,সেখানে ক্রিড়া শিক্ষাকেও বিদ্যার মর্যাদা দেওয়া হয়।তাই পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা গুলোতে চোখ ধাঁধানো সাফল্য দেখাতে পারে,আর আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হয়েও ক্রিড়া ক্ষেত্রে পেছিয়েই চলেছি।একমাত্র ক্রিকেট যা কিনা আবার বিশ্বের মাত্র কয়েকটা দেশ খেলে,সেটা ছাড়া আমাদের আর কোন খেলা নেই যা নিয়ে গর্ব করতে পারি।তৃণাঙ্কুররা নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে এগুতে চায় আর ওদের এভাবে চলে যেতে হয়।আমরা চাই রেলের সব আধিকারিকের শাস্তি,এমন ভয়াবহ ঘটনার জন্য।তৃণাঙ্কুরের মৃত্যু তার পরিবারের ক্ষতি নয়,ক্ষতি দেশের,রাজ্যের।তাই এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় রেলকে নিতেই হবে।রেলের ভূমিকা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি-তুলবো।আবারও বলছি তৃণাঙ্কুরের মত জাতীয় সম্পদ নষ্ট হওয়ায় রেল আধিকারিকদের শাস্তি দিতে হবে,যাতে ভবিষ্যতে এই ঘটনা আর না ঘটে।