দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা। তারপরেই ফাঁসি নির্ভয়া কাণ্ডের চার দোষীর। ৩ মার্চ তিহাড় জেলে সকাল ৬টায় পবন গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা এবং মুকেশ সিংয়ের ফাঁসি হওয়ার কথা। যদিও এর আগে দু’বার নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনায় চার দোষীর ফাঁসির সাজার দিন ঘোষণা হয়েছিল। তবে আইনি ব্যবস্থার নানা বেড়াজাল এবং টালবাহানায় পিছিয়ে গিয়েছিল ফাঁসির দিন।
প্রথমবার ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর থেকেই বারবার প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিল দোষীরা। রাষ্ট্রপতির দরবারে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও আপিল করেছিল দোষীরা। তবে শেষ পর্যন্ত তিন দোষী অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা এবং মুকেশ সিংয়ের ক্ষমাভিক্ষার সমস্ত আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছে। বাকি ছিল বছর ২৫-এর পবন গুপ্তা। তার সামনে আর একবার আবেদনের সুযোগ ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করেছে পবন গুপ্তা।
প্রাথমিক ভাবে দিল্লির বিশেষ আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে বলেছিল, ২২ জানুয়ারি ৪ দোষীর ফাঁসি দিতে হবে। এর পর সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনের আর্জি জানিয়েছিল দুই অভিযুক্ত। সেই আর্জি খারিজ হওয়ার পর দিল্লির নিম্ন আদালতের ওই মৃত্যু পরোয়ানার রায় চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে মুকেশ সিং।
এর পরেই নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসি পিছিয়ে যায়। ২২ জানুয়ারি ফাঁসি দেওয়া যাবে না বলে রায় দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। পরবর্তী নির্দেশে বলা হয় ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ছ’টায় ফাঁসি হবে নির্ভয়া-কাণ্ডের অপরাধীদের। আগের ফাঁসির তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার পরে ফের নতুন তারিখ ঘোষণা করে দিল্লি আদালত। কিন্তু দোষীরা নানা ভাবে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোয় ফের পিছিয়ে যায় এই তারিখও।
২০১২ সালে ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী শহরের রাতের রাস্তায় এক প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়ার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায় ছ’জন। গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে। কয়েকদিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তরুণীর। ঘটনার সাত বছর পর রায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। যদিও এদের মধ্যে একজন দোষী নাবালক হওয়ায় নির্দিষ্ট সময় জেল খাটার পর ছাড়া পায় সে। আর এক দোষী রাম সিংয়ের মৃত্যু হয় তিহাড় জেলেই। একটি সূত্রের খবর, আত্মহত্যা করেছিল সে। আবার অনেকে বলেন জেলের মধ্যেই মেরে ফেলা হয়েছিল তাকে।
অন্যদিকে সাত বছর পর রায়দানের পরেও চলছিল টালবাহানা। বারবার ফাঁসির তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় এতদিনের কার্যকর হয়নি সাজা। এই ঘটনায় দেশবাসীর পাশাপাশি হতাশ এবং ক্ষুব্ধ নির্ভয়ার পরিবারও। নির্ভয়ার মা আশাদেবী কখনও প্রকাশ্যেই চোখের জল ফেলেছেন। কখনও বা মনকে শক্ত করে অপেক্ষা করেছেন ন্যায়বিচারের। ফাঁসি নিয়ে বারবার বিলম্ব হওয়ায় নির্ভয়ার মা আশাদেবীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “মনে হচ্ছে আমাদেরই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সাতবছর ধরে তিলে তিলে মরছি আমরা। এতদিন পর রায় এল। তারপর এত টালবাহানার কি খুব দরকার ছিল।“ তবে এর পাশাপাশি রায়দানের পর খানিক স্বস্তিতেও ছিল নির্ভয়ার পরিবার। তাঁর মা বলেছিলেন, “বিচারব্যবস্থার উপর অন্তত সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে। আমার মেয়েটা এবার ন্যায় পাবে।“
তবে ফাঁসির চারদিন আগে পবন গুপ্তার সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভি পিটিশন দাখিলের ব্যাপারটি নতুন করে জল্পনার সৃষ্টি করেছেন। আদৌ ৩ তারিখ সকালে ফাঁসি হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন কেউই। পবন গুপ্তার নয়া আবেদন ফের পিছোবে ফাঁসির তারিখ নাকি নির্দিষ্ট দিনেই সাহা কার্যকর হবে এখন সেদিকেই নজর রয়েছে গোটা দেশের।