দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ ঠিক এক বছর আগে, ২০ মে তীব্র গতিতে বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছিল সুপার-সাইক্লোন আমফান, অশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের। ঠিক এক বছরের মাথায় আবার বিপর্যয়ের ভ্রূকুটি বাংলার আকাশে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা যে তৈরি হয়েছে, সে কথা জানিয়ে দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এবং দুর্যোগের সম্ভাব্য অভিমুখ হতে চলেছে বাংলা-ওডিশা উপকূল। মৌসম ভবন জানিয়েছে, ২২ মে আন্দামান সাগর লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় সেটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘যশ’। ওমানের দেওয়া নাম।
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২৫ মে সন্ধ্যায় বৃষ্টিপাত শুরু হবে পশ্চিমবঙ্গে। পরে বৃষ্টির দাপট বাড়বে। ঝড়ের গতি কেমন হতে পারে, তা আরও একটু সময় গেলে স্পষ্ট হবে, এমনটাই আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে নবান্ন। গত বছরের আমফান অভিজ্ঞতার পর প্রশাসন কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ। সেই জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটিদফতরের কর্মীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।
সমুদ্রে যাওয়ার উপরও নিষধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। বুধবার সন্ধ্যায় এই খবর জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন নবান্ন সভাঘরে ঝড়ের মোকাবিলায় প্রশাসনিক বন্দোবস্ত নিয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়।
আলোচনায় টেলিফোনে অংশ নেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব ছাড়া বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিব-সহ শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক এবং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের কর্তারা। যোগ দেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও আবহাওয়া দফতরের কর্তারাও। বৈঠক শেষে মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে টুকু পূর্বাভাস মিলেছে, তাতে ২৫ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে। কত গতিতে বা কোন জায়গায় তা আছড়ে পড়বে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
অতি চরম ঘূর্ণিঝড় তাউতে দেশের পশ্চিমাংশ তছনছ করার পর শক্তি হারিয়েছে। কিন্তু দেশের পূর্ব দিকে ছবিটা উল্টো। বঙ্গোপসাগরে উত্তর আন্দামান সাগরের কাছে ক্রমশ শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে নিম্নচাপ। শেষ পর্যন্ত এই নিম্নচাপ কি শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’ পরিণত হবে? আগামী ৪৮ ঘণ্টার আগে সেই বিষয়ে পুরো তথ্য পাওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। তবে উত্তর আন্দামান সাগরের উপর তাঁরা সতর্ক নজর রেখেছেন।
আলিপুর হাওয়া অফিস থেকে মে-র শেষ সপ্তাহের এই ঘূর্ণিঝড় প্রসঙ্গে জানানো হচ্ছে, ‘নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে তার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটা এখনই বলার সময় আসেনি।’ আলিপুরের আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ২২ মে নাগাদ আন্দামান সাগরের উত্তর দিকে নিম্নচাপটি তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে আবহবিদরা হিসেব কষে যা পাচ্ছেন, তা হল, ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে ২৬ মে নাগাদ। ওই ঘূর্ণিঝড় ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকবে ওড়িশা উপকূলের দিক থেকে। তার পর বাংলার দিকে ঘুরে বাংলাদেশ হয়ে মায়ানমারের দিকে চলে যাবে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২৫ মে সন্ধ্যায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু নিম্নচাপ শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’ পরিণত হলে তার দাপট কি এক বছর আগের আমফান মতো হবে? সেই সম্পর্কে পুরো তথ্য এখনও পাওয়া না-গেলেও আবহবিদরা বেশ চিন্তাতেই
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ কি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে? পুনে ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিরিওলজির তরফে আবহবিদ পার্থ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘নিউমেরিক্যাল ওয়েদার প্রেডিকশন নামে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সাইক্লোন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বা সাইক্লোজেনেসিস যে দেখা দিয়েছে, সেটা ১৫ মে স্পষ্ট হয়েছে। এর পর টানা চার দিন একই সম্ভাবনা বজায় রয়েছে দেখেই আবহবিদরা ক্রমশ নিশ্চিত হয়েছেন ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি সম্পর্কে।’ আবহবিদরা বলছেন, বর্ষার আগের তিন মাস এবং অক্টোবর ও নভেম্বর- এই দু’মাস আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা বাড়ে। বছরের ওই দুই সময়ে যে কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাবল্যও বাড়ে।
আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হলে ওই অঞ্চলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটা পূর্ণ করার জন্য উত্তর ভারতের ভূখণ্ড থেকে গরম হাওয়া ওই দিকে এগিয়ে যাবে। এর প্রভাবে বাংলার তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে আবহবিদরা অনুমান করছেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, নিম্নচাপ তৈরি হলে তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
গত বছর ২০ মে বাংলায় তাণ্ডব চালিয়েছিল আমফান। তার কী ভয়াবহ অভিঘাত হয়েছিল তা এখনও টাটকা। উপকূলবর্তী দুই চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, কলকাতা হাওড়া, হুগলি-সহ দক্ষিণ বঙ্গের একাধিক জেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল।
এই কোভিড পরিস্থিতিতে সাইক্লোন শেল্টারে মানুষকে রাখার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দূরত্ব মেনে তাঁদের সেখানে রাখতে হবে। যাতে ঝড় থেকে বাঁচতে গিয়ে কোভিড না গ্রাস করে। তাও প্রশাসনকে ভাবতে হচ্ছে বিশেষ ভাবে।