দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলায় শীত কার্যত উধাও! তাও উত্তরের পাহাড়ি জেলাগুলোতে শীতের হাল্কা আমেজ থাকলেও দক্ষিণে শীতের কোনও সন্ধানই পাওয়া যাচ্ছে না। জানুয়ারির শেষে এসে শীত একেবারে নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছে। প্রতিবার সরস্বতী পুজোর সকাল মানেই হিমেল হাওয়া, কখনও হাল্কা বৃষ্টি। তাতেই জমে ওঠে বাগদেবীর আরাধনা।
সরস্বতীর এই নানা রূপ রং তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী মোহিনী বিশ্বাস। ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী। দক্ষিণ কলকাতায় দেশপ্রিয় পার্কের কাছে তনুস আর্ট উইন্ডো গ্যালারিতে মোহিনীর প্রদর্শনী চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। শিল্পীর কথায়, সরস্বতীকে নানা নামে যেমন ডাকা হয়, তেমনই তাঁর রূপও ভিন্ন।
বেদে কীভাবে সরস্বতীর বর্ণনা করা হয়েছে, বৌদ্ধ শাস্ত্রেই বা সরস্বতীর মাহাত্ম্য কী, সবটাই ছবিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। সঙ্গে মিশেছে তাঁর ভাবনা, শিল্পিসত্ত্বা। দর্শকদের জন্য ছবি কেনার সুযোগও থাকছে প্রদর্শনীতে। ছবি বিক্রির অর্থ দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য দান করতে চান শিল্পী।
প্রদর্শনী দেখতে এসে এক ছবিপ্রেমী তাপস বিস্বাস বলেন, এবার আবহাওয়ার বদল ঘটেছে, উষ্ণ মাঘে মায়ের আরাধনা করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে৷
গ্যালারিতে মোহিনীর আঁকা দেবী সরস্বতীর ছবি দেখতে এসে স্কুল শিক্ষিকা দোলন বিশ্বাস বলেন, শীত উধাও হয়েছে মনে হচ্ছে ফাল্গুন মাস ৷ হালকা হাওয়া গায়ে মেখে ছবি দেখে মুগ্ধ হলাম ৷ কিন্তু শীতের আমেজ না থাকায় মন কেমন করছে৷ আর কটাদিন শীতের আমেজ থাকলে ভাল হত ৷
প্রদর্শনী দেখতে এসে অনুষ্ঠান সঞ্চালক দেবাশিষ বসু জানান, মোহিনীর আঁকা মা সরস্বতীর ছবি দেখে মুগ্ধহলাম তবে এবার শীতের শিরশিরানি তো দূর, বরং সরস্বতী পুজোর সকালে তাপমাত্রা আরও কয়েক ডিগ্রি বাড়বে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস, তাই হাওয়া বদলের কারণে একটু মন খারাপ৷
আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, কলকাতা তথা দক্ষিণের জেলাগুলিতে শীত এখনই ফিরছে না। কবে ফিরবে তাও জানা নেই। বসন্তের আগেই গরমে হাঁসফাঁস করবে তিলোত্তমা। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠে যেতে পারে। মঙ্গলবার রাত থেকেই গরমটা বেশ ভালভাবেই মালুম পাওয়া যাচ্ছে। ভারী লেপ-কম্বল আবারও ওয়ার্ডরোবে ঢুকে গেছে। আজ বুধবার সকালে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রার পারদ আরও চড়বে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের। সকালে হাল্কা কুয়াশার প্রলেপ থাকলেও বেলা বাড়লে চড়চড়ে রোদ উঠবে। আজও সকালের দিকে হাল্কা কুয়াশা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চড়া রোদ উঠেছে। আগামী কয়েকদিন আকাশ পরিষ্কার থাকবে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই।
আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা একইরকম আবহাওয়া থাকবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। তারপর থেকে পরবর্তী দু’তিন দিনে তাপমাত্রা বাড়বে দুই থেকে তিন ডিগ্রি। শীতের আমেজ ক্রমশ কমবে উত্তরেও।
জোড়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে উত্তুরে হাওয়া থমকে গেছে। তাই শীত কার্যত উবে গেছে বাংলা থেকে। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের জেরে এ রাজ্যে জলীয় বাষ্প ঢুকবে বলেও জানা গেছে।
আফগানিস্তানে জোরালো পশ্চিমি ঝঞ্ঝা।তার প্রভাবে উধাও উত্তুরে হাওয়া। এটির প্রভাব কাটার আগেই শুক্রবার আরও একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা দানা বাঁধবে। এর কারণে দক্ষিণবঙ্গে সপ্তাহ খানেকের জন্য উধাও হতে চলেছে শীতের আমেজ। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে শীতের আমেজ আর পাওয়া যাবে না। উল্টে হাওয়ায় জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় আরও কিছুটা চড়তে পারে পারদ। মঙ্গলবার পূর্বাভাসে এমনটাই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।
রবিবার থেকে ফের একবার চড়তে শুরু করেছে পারদ। মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। কলাইকুন্ডায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মেদিনীপুরে ৩০.৪, দমদমে ৩০.০। উত্তরবঙ্গে অবশ্য জমজমাট শীতের আমেজ রয়েছে। এবার শীতে দু–তিন দফায় দিন কয়েকের জন্য জমজমাট শীতের আমেজ পাওয়া গেছে। বাকি সময়টা হালকা আমেজ ছিল। বৃষ্টিও হয়নি। ফলে কনকনে আমেজও আসেনি। এবার যে জমজমাট শীতের আমেজ পাওয়া যাবে না তা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল মৌসম ভবন। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আফগানিস্তানে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা দানা বাঁধলে উত্তুরে হাওয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যবার দু’টি ঝঞ্ঝার মধ্যে ব্যবধান থাকায় উত্তুরে হাওয়া গতি পায়। যা উত্তর ও মধ্য ভারত হয়ে চলে আসে গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গে। টানা হাওয়া বইতে থাকায় হাওয়ায় আর্দ্রতা কমে আসে রুক্ষভাব। পাওয়া যায় কনকনে আমেজ। এবার উত্তুরে হাওয়ার গতি না থাকায় সেই রুক্ষভাব আসেনি। উল্টে বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমাগত জলীয় বাষ্প ঢুকে ভোরের আকাশ হয়েছে কুয়াশাচ্ছন্ন। বেড়েছে তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিনেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কোথাও কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।