দানা’র দাপটে জল জমল কলকাতায়, রাজ্যের কোন জেলার পরিস্থিতি কী? দেখুন ভিডিও
কলকাতা : দানার প্রভাব কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় ‘দানা’র তেমন প্রভাব পড়েনি। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ‘দানা’র প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কত বৃষ্টি হয়েছে, তালিকা প্রকাশ করেছে হাওয়া অফিস।
ইতিমধ্যেই হাওড়া ও শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।অবশেষে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঘোষণা মতোই শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। ঘূর্ণিঝড় দানার মোকাবিলায় রেলের শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
শুক্রবার সকাল ১০টার পর একে একে সোনারপুর লোকাল, ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, লক্ষ্মীকান্তপুরগামী লোকাল ট্রেনগুলি ছাড়তে শুরু করে। প্রায় ১৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। ফলে এদিন পরিষেবা শুরু হওয়ার পর গতি কিছুটা ধীর হলেও পরবর্তীতে আসতে আসতে তা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। পাশাপাশি শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখাতেও পূর্ব ঘোষণামতো ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বৃহস্পতিবার রাতে ওড়িশার স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে তার ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। উপকূলে ঝড়ের দাপট থাকলেও দক্ষিণবঙ্গে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি ‘দানা’। তবে বেশ কিছু জায়গায় রাত থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে কোথাও কোথাও ছিল ঝোড়ো হাওয়া।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শুক্রবারও ভারী বর্ষণ চলবে।
দানা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ও শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির ফলে কলকাতার ভিআইপি রোডের উপর জল জমতে শুরু করেছে। ধীর গতিতে চলছে যানবাহন।
কলকাতা পৌর সভার গেটে হাঁটু পর্যন্ত জল। একদিকে যখন বিভিন্ন জায়গায় জল জমা পরিস্তিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে পৌর কর্মীরা। তখন কলকাতা পৌর সংস্থার কন্ট্রোল রুমের সামনে জমা জলের উপর দিয়েই কাজে যোগ দিতে আসছেন পৌর কর্মী থেকে আধিকারিকরা। কন্ট্রোল রুমের ভিতরে যখন তৎপরতা তুঙ্গে তখন তার বাইরে প্রায় হাঁটু পর্যন্ত জমে থাকা জল নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল এভিনিউ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, কলেজ স্ট্রিট এলাকা জলমগ্ন। কলকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পাম্প করে জল নামাবার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে কলকাতা পুরসভা সূত্রে ।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোথায় কতটা বৃষ্টি হল, তা-ও জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
গত ২৪ ঘণ্টায় ‘ দানা’র প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। সেখানে মোট ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে কলাইকুন্ডায় ৯০.৬ মিলিমিটার, সাগরদ্বীপে ৮৯.৬ মিলিমিটার এবং হলদিয়ায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৪২.৭ মিলিমিটার। এ ছাড়াও বৃষ্টির পরিমাণ বেশি ছিল উলুবেড়িয়া (৬৫.৪ মিলিমিটার), মেদিনীপুর (৫২ মিলিমিটার) এবং ঝাড়গ্রামে (৬৬ মিলিমিটার)। দিঘায় ৩৭.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার কিছু জায়গায়। এই জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে শুক্রবার।
চার জেলায় জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি চলতে পারে। উপকূলের কোথাও কোথাও বৃষ্টির সঙ্গে চলতে পারে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া।
শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমবে দক্ষিণবঙ্গে।
কলকাতা-সহ জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও শনিবার থেকে এই জেলাগুলিতে আর আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনও সতর্কতা জারি করেনি হাওয়া অফিস। শনিবার শুধু বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে এই তিন জেলায়।
রবিবার থেকে আর কোথাও সতর্কতা নেই। শুক্রবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। শনিবার থেকে মাছ ধরায় আর বাধা থাকছে না।
উত্তরবঙ্গে আপাতত তেমন বৃষ্টি হবে না। শুক্রবার মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। শুক্রবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৬ ডিগ্রি বেশি। বৃহস্পতিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.২ ডিগ্রি কম।
অন্য দিকে ,দানা’র আশঙ্কায় কলকাতা বিমানবন্দরের ১৫ ঘণ্টা উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছিল ৷ কিন্তু শুক্রবার সকালে দানা প্রভাব কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘণ্টা আগেই কলকাতা বিমানবন্দরে শুরু হল বিমান চলাচল ৷কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন সকাল 8টা থেকেই বিমান পরিষেবা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় ৷
আগাম বাজার ধরতে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় মাঠের পর মাঠে শীতের আগাম সবজির আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে পটল, বেগুন, শিম, করলাসহ বেশিরভাগ সবজির ফলন এসেছে। এছাড়া শীতকালীন অন্যান্য সবজি মাস খানেকের মধ্যে বাজারে উঠবে। কিন্তু দানার জেরে অসময়ে বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা ।