শীতের ডিউটি শেষ। এ বার গরমের দিন শুরু।’ বাংলা ক্যালেন্ডার মতে তারিখটা ১৬ মাঘ। হিসেব মতো এত তাড়াতাড়ি ‘ডিউটি শেষ’ করে অফিস ছুটির কথা নয় শীতের। কিন্তু ক্যালেন্ডারকে কাঁচকলা দেখিয়ে বহু দিন আগে থেকেই তো স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে ঋতুর দল। ট্রেনে -বাসে নিত্য যাত্রীরা বলতে শুরু করেছেন এমনই কথা । এটা শুধু কথার কথা নয় বাস্তবেও তাই ।
হাতে মাত্র এক দিন । তার পরেই সরস্বতী পুজো। তবে বাসন্তী পঞ্চমীকে আবহাওয়া যে ছাড় দেবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। রবি ও সোমবারও ঋতুর এমন স্বেচ্ছাচারিতা বজায় থাকবে বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদরা। ওই দিন যাঁরা পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় বেরোবেন, তাঁরা জহরকোট না পরলেই ভালো করবেন , এমনই পরামর্শ আবহবিদদের। শাড়ি পরিহিতাদের জন্যে তাঁরা জানাচ্ছেন, সঙ্গে শাল নিলে সেটা বোঝা হয়ে থাকবে। রোদ থেকে বাঁচতে সঙ্গে ছাতা এবং ঘাম মোছার জন্যে রুমাল রাখাই যুক্তিযুক্ত।
জানুয়ারির শেষ পর্যায়ে যে এমনটা ঘটতে চলেছে, কয়েক দিন আগেই অবশ্য তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আবহবিদরা। জানিয়েছিলেন, উত্তর–পশ্চিম ভারতে তৈরি হওয়া জোড়া ঝঞ্ঝায় ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার প্রবেশপথ অবরুদ্ধ হবে। তার প্রভাবেই ‘হঠাৎ করে’ শীতের আমেজ লোপ পেতে চলেছে বাংলা থেকে। শুধু কলকাতা নয়, প্রায় গোটা দক্ষিণবঙ্গেরই এক অবস্থা। একমাত্র পুরুলিয়াই (১০.১) শীতের আমেজ ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
বাকি প্রায় সব জেলাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির উপরে চলে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে আপাতত শীতের আমেজ পুরোপুরি লোপ পেলেও মাঝে মাঝে তার ‘ঝটিকা সফর’–এর সম্ভাবনা অবশ্য একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। জানাচ্ছেন, হঠাৎ করেই কয়েক ঘণ্টার ঠান্ডা হাওয়ায় শীত নিজের অস্তিত্ব জানান দেবে। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী তিনদিনে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও দু’-চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। পরের সপ্তাহের শুরুতেও তাপমাত্রার বিশেষ কোনও হেরফের হবে না। অর্থাৎ জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, ভরা মাঘেও শীতের আমেজ মিলবে না।
দক্ষিণবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় ভোরে হালকা কুয়াশা থাকতে পারে। আগামিকাল, শুক্রবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় হালকা কুয়াশার পূর্বাভাস রয়েছে।
শনিবার থেকে বদল হবে আবহাওয়া। ভারী বৃষ্টি হবে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কেরালা, কর্ণাটক, অরুনাচল প্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পাশাপাশি ঘন কুয়াশার দাপট থাকবে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, চন্ডীগড়, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং ওড়িশার সীমান্তে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে।
আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের বিভিন্ন প্রান্তে হালকা বৃষ্টি হবে। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই যে বৃষ্টি হবে তা নয়। হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে বরফের চাদর রয়েছে। ফলে সেখান থেকে ফের শীতের ইঙ্গিত রয়েছে।
হালকা বৃষ্টি হবে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে। লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশে নতুন করে তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গুলমার্গ থেকে শুরু করে সেখানকার বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থাকলেও সেখান থেকে ফের মাইনাসে নেমে যেতে পারে তাপমাত্রা।