WB Budget 2025: আমরা ভোট দেখে বাজেট করি না, কেন্দ্রকে খোঁচা মমতা ,এক নজরে দেখুন বাজেটের বড় ঘোষণাগুলি

0
5

রাজ্য বাজেটকে সামনে রেখে ফের কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠক থেকে কেন্দ্রের বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “দুটো বাজেটকে পাশাপাশি রেখে দেখুন। ওরা অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়, ভোট মিটলে সেগুলো করে না। আমরা ভোট দেখে বাজেট করি না। আমরা নিজেদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও মানুষের জন্য সার্বিক উন্নয়নের কাজ করি।” 

মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “আমাদের এই বাজেটে দিশা রয়েছে। মনে রাখবেন জন্ম থেকে মৃত্যু, মানুষের জন্য ৯৪টি প্রকল্প চালু রয়েছে বাংলায়।”

১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের বাজেট পেশ হয়েছে। সামনে বিহারে বিধানসভা ভোট। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবারের বাজেটে সিংহভাগ প্রকল্প বিহারকে কেন্দ্র করে ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই ওই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেব, তারপর ভোট মিটলে আর মানুষকে চিনব না, আমরা কেন্দ্রের মতো নই। ভোটের লক্ষ্যে নয়, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই বাজেট তৈরি করি।”

কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিকে চালু রেখে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের পাশে থাকার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিএসটি থেকে সবটা তুলে নিয়ে যায়। আমাদের প্রাপ্য টাকাটুও দেয় না। তা সত্ত্বেও আমরা যথাসাধ্যভাবে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, নদী বন্ধন-সহ একাধিক প্রকল্পের জন্য এদিন আমরা নতুন করে বরাদ্দ করেছি।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “আমাদের প্রকল্প গুলি টুকলি করা হয়েছে। বিশেষ করে বিজেপি শাসিত জায়গায়। ওরা ভোটের কথা ভেবে এসব করে। তাও বিভিন্ন কনডিশন দেয়। আমরা কিন্তু এসব করি না। আমরা সর্বস্তরের মহিলাদেরই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে থাকি।”

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বাড়বে কিনা, তা জানার জন্য রাজ্যবাসী মুখিয়ে ছিলেন বাজেটের আগে। শেষমেশ তা বাড়ল না, অপরিবর্তিত থাকল ভাতার অঙ্ক। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ হল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার না বাড়লেও, এবারের বাজেটের লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প।

সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে আপাত ভাবে হতাশ করলেও, মুখ্যমন্ত্রীর এই বাজেট কিন্তু ‘গ্রামমুখী’ উন্নয়নের দিকেই ইঙ্গিত করছে। শহুরে মধ্যবিত্তদের জন্য তেমন কিছু নেই এই বাজেটে।

সব মিলিয়ে রাজ্য বাজেট ২০২৫-এ মোট প্রস্তাবিত বরাদ্দ অর্থের অঙ্ক হল, ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৯৪.০৯ কোটি টাকা (নিট)।

মমতার বাজেটের ঘোষণাগুলি এক নজরে
১৬ লক্ষ মানুষ ‘বাংলার বাড়ি’ পাবেন, ৯৬০০ কোটি টাকা

বরাদ্দের প্রস্তাব:
বাংলার আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে আগেই বড় ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাকি ১৬ লক্ষ বাড়ির যে টাকা বাকি রয়েছে, সেই কিস্তির টাকাও ২০২৬ সালের আগে দু’দফায় মিটিয়ে দেওয়া হবে। মমতা যে সেই ঘোষণা শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় করেননি তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেল রাজ্য বাজেটে। ১৬ লক্ষ অতিরিক্ত যোগ্য পরিবারকে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই পর্যায়ের প্রথম কিস্তির টাকা, পরিবার পিছু ৬০,০০০ টাকা হারে, এই বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রদান করা হবে বলে বাজেটে জানানো হয়েছে। যে কারণে ৯,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই পর্যায়ের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা বাড়ি নির্মাণের অগ্রগতির ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

ডিএ বাড়ল চার শতাংশ:
রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করা হতে পারে বলে চর্চা ছিলই।

এবারের বাজেটে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর ঘোষণা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এখন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৩ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পান। অর্থাৎ এবারে রাজ্য বাজেট ঘোষণার আগে পর্যন্ত কেন্দ্র-রাজ্য মহার্ঘ ভাতার তফাত ছিল ৩৯ শতাংশ। এদিন নতুন করে ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র ফারাক কমে দাঁড়াল ৩৫ শতাংশ।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব:

বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানান, দু’বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এরই পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে এবারের বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। একই সঙ্গে নদী বন্ধন নামে নতুন প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছে রাজ্য। এই প্রকল্পেও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আশা ও অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের মোবাইল দিতে আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব:

গত জানুয়ারি মাসেই আশা কর্মীদের ‘উপহার’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭০ হাজার আশাকর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়া হবে বলে জানালেন বাজেটে। এই জন্য বরাদ্দ করা হল ২০০ কোটি টাকা।
গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা

ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব:
গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য এই সেতুর কাজ শেষ করতে চার বছর সময় লাগবে এবং সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সেতু নির্মাণের কাজে যে গতি বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দ:

কৃষিজ বিপণন বিভাগের জন্য ৮২৬ কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়ছে। অন্যদিকে, কৃষিবিভাগের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, শস্যবিমা যোজনায় ১ কোটি ১২ লক্ষ কৃষকের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ১ কোটি ৮ লক্ষ কৃষককে দুই কিস্তিতে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

পথশ্রী প্রকল্পে:
গ্রামীণ পথঘাটের জন্য বরাদ্দ ১,৫০০ কোটি টাকা।

উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে:
৮৬৬.২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব।

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নে:
৭৫৬.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব।

Previous articleCongress: ‘অরাজনৈতিক ভুল কাজ করেছিলাম…আজ আমার দ্বিতীয় জন্মদিন’, তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরেই বললেন প্রণব পুত্র অভিজিৎ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here