দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তিনটি ফ্যাক্টরের কারণেই শেষ পর্যন্ত পরাজিত হতে হল কমলা হ্যারিসকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা ও ইজরায়েল এবং ইউক্রেন সংক্রান্ত বিষয়ে অবস্থান ঠিক না থাকায় লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়তে হল কমলাকে। মূল্যবৃদ্ধি এবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। গ্রামীণ ভোটারদের বড় অংশ আগাগোড়া রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক।
অন্যদিকে, শহরের শ্রমিক কর্মচারি শ্রেণি ভোট পান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যু ঘুরিয়ে দিয়েছে অঙ্ক। রিপাবলিকান পার্টিকে অপছন্দ করলেও আমেরিকার শহরাঞ্চলের শ্রমিক কর্মচারিরা শেষ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে আস্থা রেখেছেন ট্রাম্পের উপরেই। অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থক আবার বুথেই যাননি। ফলে যেখানে ভোটব্যাঙ্ক ডেমোক্র্যাট দলের, সেখানেই পিছিয়ে পড়েছেন কমলা। আমেরিকায় আর্থিক মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদন শিল্পের অধোগতির মতো বিষয়গুলিকে সামনে রেখে ট্রাম্প মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। বোঝাতে পেরেছিলেন, এভাবে চললে আউট সোর্সিং হতে বাধ্য। ছাঁটাইও হতে পারে।
ফলে শহরাঞ্চলের শ্রমিক কর্মচারিরা ট্রাম্পের উপর ভরসা রেখেছেন। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গেই ট্রাম্পের জয়ের পিছনে অনুঘটকের কাজ করেছে অভিবাসন সমস্যা। ট্রাম্প তাঁর প্রচারে বারবার বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে পা রাখলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবেন। সুরক্ষিত করবেন কলকারখানা, দফতরের কর্মী শ্রেণির আমেরিকানদের আর্থিক নিরাপত্তা। এই প্রচার কাজে এসেছে। এসব ছাড়াও যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান বিরাটভাবে তাঁর জয়ের পথকে মসৃণ করে দিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পেনসিলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ায় এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, তিনি জিতলে পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থামিয়ে দিতে পারেন। রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে ভলোদিমির জেলেনস্কির বাহিনীকে ধারাবাহিকভাবে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছে বাইডেন সরকার।
অন্যদিকে গাজা থেকে প্যালেস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইজরায়েলে হামলা চালানোর পর শুরু হয়েছে ধারাবাহিক অশান্তি। লেবাননের হিজবুল্লা ও ইরানের সঙ্গে ইজরায়েলের সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে তিন দফায় উপসাগরীয় অঞ্চলে বাড়তি সেনা পাঠাতে হয়েছে পেন্টাগনকে। এর খরচ তোলা হয়েছে আমেরিকার করদাতাদের পকেট কেটে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার মানুষের বড় অংশ বিশ্বাস করেছেন, স্বভাবে বেপরোয়া ট্রাম্প ইজরায়েল ও ইউক্রেন পরিস্থিতিকে বাগে আনতে পারবেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের পুরনো সমীকরণও মাথায় রেখেছেন অনেকে।
ট্রাম্প স্লোগান দিয়েছেন, মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন। এই স্লোগানে ভরসা রেখেছেন সেখানকার মানুষ। একইসঙ্গে ইসলামিক মৌলবাদে ভীত জনগণের একাংশ ট্রাম্পকে নীরবে সমর্থন জুগিয়েছেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের গর্ভপাতের অধিকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। সেবার বাইডেনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবার অবশ্য অতি সন্তর্পণে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন তিনি। নারীবাদীদের নিশানা এড়ানোই ছিল তাঁর লক্ষ্য।
এদিকে, ইজরায়েলকে সমর্থন বন্ধ করুন। ট্রাম্পকে এমনই বার্তা দিল প্যালেস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তাদের তরফে বলা হয়েছে, জো বাইডেন অন্ধভাবে ইজরায়েলকে সমর্থন করেছেন। গাজা ভূখণ্ডে প্যালেস্তানি নারী, শিশুদের উপর হত্যালীলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ট্রাম্প যেন সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি না করেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোটের ফল স্পষ্ট হতেই বুধবার দুপুরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাতে এক্স পোস্টে জানালেন, হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দার সঙ্গে টেলিফোনে তাঁর কথোপকথনের কথা।
প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার দুপুরে সমাজমাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কিছু পুরনো ছবি পোস্ট করে মোদী লিখেছিলেন, ‘‘চলুন একসঙ্গে কাজ করি!’’ ভারত এবং আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আহ্বানও জানান তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বে শান্তি, সুস্থিতি বজায় রাখতে মিলিত ভাবে কাজ করার কথাও বলেন।
সমাজমাধ্যমে মোদী লিখেছেন, ‘‘আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি দুর্দান্ত কথোপকথন হল। অসাধারণ জয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, শক্তি, মহাকাশ এবং অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য আবার এক সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ।’’
অন্যদিকে, আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের কারণেই আমেরিকার মানুষ তাঁর উপর আস্থা রেখেছেন। ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হতেই হাসিনা স্মৃতিচারণা করেছেন। তাতে ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্ত তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্পের হাত ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে।
তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসও ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি শুভেচ্ছাবার্তায় লিখেছেন, আমি আমেরিকা ও বাংলাদেশের অংশীদারিকে আরও শক্তিশালী করতে ও সুস্থিত উন্নয়নের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ।