দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মঙ্গলবার আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ট ট্রাম? কে জিততে চলেছেন? সেদিকেই এখন তাকিয়ে গোটা বিশ্ব? কোন পথে আমেরিকা? তা নিয়েই নজর দুনিয়ার। কমলা হ্যারিস জিতলে তিনিই হবেন কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় ঐতিহ্যের আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে, ডোনাল্ট ট্রাম্প হলে কেমন হবে মার্কিন দুনিয়ার বিদেশ নীতি? কমলা হ্যারিসের চিন্তাভাবনার সঙ্গে কতটা পার্থক্য রয়েছে তাঁর? এসব নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এদিকে, নির্বাচনের আগেই আমেরিকার ৬ কোটি ২০ লক্ষ নাগরিক আগাম ভোট দিলেন। সংখ্যাটা যথেষ্টই উল্লেখযোগ্য। ভোটের দিন ভিড় কমানোর জন্য আমেরিকায় আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তথ্য বলছে, ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যত মানুষ ভোট দিয়েছিলেন, এবার তার ৪০ শতাংশ নাগরিক আগাম ভোট দিলেন।
এই সংখ্যাটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমেরিকার জনগণের মধ্যে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে কতটা উৎসাহ রয়েছে। এবং তাঁরা এই নির্বাচনকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কয়েকটি রাজ্য থাকে রিপাবলিকানদের দখলে। কিছু রাজ্য যায় ডেমোক্র্যাটদের দখলে। কিন্তু কিছু রাজ্যের জনগণের মতামত থাকে স্যুইং। অর্থাৎ তারা যে কোনও দিকে ঝুঁকতে পারেন। এমন স্যুইং রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়ার মতো সাতটি দেশ। হিসেব বলছে, এই স্যুইং রাজ্যগুলির ভোট যেদিকে বেশি যায়, সেই দলের প্রার্থীরই জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। সেই হিসেবে স্যুইং স্টেটের আগাম ভোটের সমীক্ষা বলছে, কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ট ট্রাম্পের মধ্যে এবার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
আমেরিকায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমে জো বাইডেন তাঁর দ্বিতীয়বারের মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। কিন্তু বয়সের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন। তারপর দলের তরফে কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করা হয়।
ইতিমধ্যেই ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস তাঁদের বিদেশ নীতি প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন। দেখা যাচ্ছে, দু’জনের ভাবনা চিন্তার মধ্যে যথেষ্টই ফারাক রয়েছে। কমলা হ্যারিস রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে আমেরিকার সহায়তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ইউরোপের বন্ধু দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি জো বাইডেনকে সাহায্য করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাতবার দেখা করেছেন কমলা।
অন্যদিকে, ডোনাল্ট ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর এই আহ্বান মেনে নেওয়ার অর্থ হল, শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ট্রাম্প বলে আসছেন, ইউক্রেনকে আর অর্থ সাহায্য দেবেন না। এবং দেশটিকে সহায়তা দিতে কংগ্রেসে আনা প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। অবশ্য ট্রাম্প এটাও বলেছেন, আমেরিকার স্বার্থের জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলা যুদ্ধ তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু তা কীভাবে?
এনিয়ে ট্রাম্প অবশ্য কিছু বলতে চাননি। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছেন কমলা হ্যারিস। তবে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রমেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচক হয়ে উঠেছেন তিনি। কমলা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তুলনামূলক বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। যদিও বাইডেন প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য কোনও প্রস্তাব দেননি তিনি। ট্রাম্প অবশ্য ইজরায়েলের কড়া সমর্থক। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় মার্কিন দুতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন তিনি। কয়েকটি আরব দেশ ও ইজরায়েলের মধ্যে একের পর এক চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের রীতিমতো অপ্রাসঙ্গিক করে তোলেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে তিনি বলেছেন, দ্রুত এই সঙ্ঘাতের অবসান হওয়া প্রয়োজন। সামরিক জোট ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে মার্কিন প্রশাসনে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন কমলা হ্যারিস।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে এই জোটের সম্প্রসারণের বিষয়টির তদারক করেছিলেন তিনি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে এই জোটের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করেন কমলা হ্যারিস। মিত্রদের মধ্যে যারা ন্যাটোর জন্য ব্যয় করবে না, তাদের ওপর হামলা চালাতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোয় ট্রাম্পের সমালোচনা করেন তিনি। অন্যদিকে, ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ন্যাটোর কারণে আমেরিকার সম্পদের অপচয় হচ্ছে। তিনি এই জোট থেকে সরে আসারও হুমকি দিয়েছেন।
ইউক্রেনকে দেওয়া ২০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র, গোলাবারুদের অর্থ আমেরিকাকে পরিশোধ করতে হবে ইউরোপের দেশগুলিকে, এমনটাই বক্তব্য ট্রাম্পের। জাপান ও ফিলিপাইন থেকে ভিয়েতনাম ও চীনের উত্থানে শঙ্কিত এশিয়ার দেশগুলির নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সময় দেওয়ার কথা বলেছেন কমলা। তাঁর লক্ষ্য, চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোট তৈরি করা। বাইডেনের মতো চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার প্রচেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একইসঙ্গে চীনে আমেরিকার তৈরি চিপ রফতানিও কমিয়ে আনতে পারেন কমলা।
অন্যদিকে, ট্রাম্প চীনের আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। এতে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প আমেরিকার আবাসন ও জ্বালানি অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি খাতে চীনা কোম্পানির মালিকানা নিষিদ্ধ করতে চান। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাইওয়ান ও আমেরিকার কূটনীতিকদের মধ্যে যোগাযোগ চালু করেছিলেন, যা চীনকে ক্ষুব্ধ করে। তবে চীন আগ্রাসন চালালে তাইওয়ানকে আমেরিকা রক্ষা করবে কি না এমন প্রশ্নে গতবছর ট্রাম্প কোনও মন্তব্য করতে চাননি।