দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্যাক্টর ভারতীয়রাই। আর সেটা বুঝতে পেরে ভারতের মন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ট ট্রাম্প। কথায় বলে, ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না। কমলা হ্যারিসের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও এতদিন তাঁকে সেভাবে দীপাবলি পালন করতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার তিনি দীপাবলির উৎসবে মেতে উঠেছেন।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকায় বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়দের মন পেতেই ভোটের আগে দীপাবলিতে মেতেছেন কমলা। হোয়াইট হাউসে ভারতীয় শাস্ত্রীয় গানে দীপাবলি উদ্যাপন করতে দেখা যাচ্ছে। যা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। ওম জয় জগদীশ হরে…গানে দীপাবলি উৎসব পালিত হচ্ছে আমেরিকায়। শুধু তাই নয়, ভারতে যিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তিনিও বলিউডি গানে কোমর দোলাচ্ছেন। রীতিমতো নাচছেন। তিনি বাটার-চিকেন ভালবাসেন। রসগোল্লা ভালবাসেন, এটা বোঝাতে চেষ্টার কসুর করছেন না।
https://x.com/VP/status/1852077234225582404?t=EPLYKbZLPSXbMrpUYUV9MA&s=19
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকায় মোট ন’টি স্যুই স্টেট রয়েছে। এসব রাজ্যের ভোট যে কোনও দিকে যেতে পারে। আর পেনসিলভিনিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া সহএই ন’টি স্যুইং স্টেটে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়র সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। ফলে ভারতীয়রা যে আমেরিকার ভোটের কিং মেকার হয়ে উঠেছে, তা বলা বাহুল্য। এখানেই শেষ নয়, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিন্দুরা অনেকটাই কোণঠাসা। কোথাও কোথাও লাঞ্ছিত। এই অবস্থায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ট ট্রাম্প সরাসরি আপোষহীনভাবে হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। এটা নিসন্দেহে হিন্দু আমেরিকানদের মন জয় করে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এর পাশাপাশি আমেরিকায় ভারতীয়দের অর্থবলও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তথ্য বলছে, আমেরিকায় যে ইউনিকর্ন কোম্পানিগুলি রয়েছে, সেগুলিতে ভারতীয়রা কার্যত কিং কং। দেখা যাচ্ছে, গোটা আমেরিকায় এই মুহূর্তে ৫০০টির মতো ইউনিকর্ন কোম্পানি রয়েছে। এই কোম্পানিগুলির মালিকের সংখ্যা ১০৭৮ জন। প্রতিটি কোম্পানির ৮ হাজার কোটির বেশি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৯০জন মালিক রয়েছেন, যারা ভারতীয়। আমেরিকার ইউনিকর্ন সংস্থায় ভারতীয়দের মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এবং তাঁরা প্রায় এক লক্ষ আমেরিকানের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। তাছাড়া গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই থেকে ইউটিউবের নীল মোহন সহ আমেরিকার বিভিন্ন বড় বড় সংস্থার মাথায় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ভারতীয়রা। ফলে ভারতকে কোনওভাবেই চটাতে চাইছে না আমেরিকা।
আর সেকারণেই কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী ভারতীয়দের ভোটেই আমেরিকায় খেলা ঘুরবে। ভারতের উপর আমেরিকার দাদাগিরি খতম হয়ে গিয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বলাই যায়, আমেরিকায় ভোটের ভাগ্য ঝুলছে ভারতীয়দের হাতেই। সেকারণেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এবার ভারতই চালাবে আমেরিকাকে? মার্কিন মুলুকে যেভাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের দাপট বাড়ছে, তাতে একথা বলাই যায়। মার্কিন প্রশাসনেও ভারতীয়দের প্রভাব বাড়ছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় বিগ বস হয়ে উঠছে ভারত।
ইতিমধ্যেই ভারতের বশে এসেছে চিনা ড্রাগন। আমেরিকাকেও কার্যত পকেটে পুরে ফেলার জোগাড়। আর বাস্তব পরিস্থিতি জেনেবুঝেই ভারতকে এখন তোয়াজ করতে চাইছেন কমলা হ্যারিস থেকে ডোনাল্ট ট্রাম্প প্রত্যেকেই। ভারতীয়দের তুষ্ট করতে ঝাঁপাচ্ছেন তাঁরা। হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় ইতিমধ্যেই ট্রাম্প অ্যাডভান্টেজ পজিশনে চলে গিয়েছেন। আর এটা বুঝতে পেরেই কমলাও দীপাবলিকে হাতিয়ার করে ভারতীয়দের মন জয়ের চেষ্টায় খামতি রাখছেন না।
ভারতীয়রা মনে করছেন, ট্রাম্প জিতলে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। অনুপ্রবেশ আমেরিকানদের জন্য একটা বিশাল বড় থ্রেট। ট্রাম্প জিতলে ভারতীয়দের আমেরিকায় যাওয়ার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া ট্রাম্প জিতলে দাদাগিরি কমবে মৌলবাদীদের। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন, মৌলবাদকে কোনওভাবেই তিনি প্রশ্রয় দিতে রাজি নন। ট্রাম্প জিতলে টুকরে গ্যাং খতম হবে। ট্রাম্প জিতলে যুদ্ধ বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকানদের একটা অংশ চান না, তাদের দেশের টাকায় অস্ত্র কিনে যুদ্ধে অন্য দেশকে সাহায্য করুক আমেরিকা।
এবার কথা হল, যদি কমলা হ্যারিজ জেতেন, তাহলে কি ভারতের বিপদের শঙ্কা রয়েছে? কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদম তেমনটা নয়। ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস যিনিই জিতুন না কেন, ভারতের ভয়ের কিছু নেই। বরং ভারতের জয়। কারণ, ট্রাম্প যখন সরাসরি হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন, কমলা হ্যারিসও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাছাড়া ভারতের সঙ্গে আমেরিকার প্রচুর বৈদেশিক বাণিজ্য হয়। ফলে কেউই ভারতকে ঘাঁটাতে চাইবেন না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের কী হবে?
অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের সমস্যা রয়েছে। ট্রাম্প জিতলে আমেরিকার ডিপ স্টেট অথর্ব হয়ে যেতে পারে। আর ডিপ স্টেট কোণঠাসা হয়ে পড়লে ইউনূস সরকার বিপাকে পড়তে পারে। কারণ, ডিপ স্টেটের টাকাতেই এখন চলছে বাংলাদেশ। এছাড়াও বাংলাদেশের একটা অংশের থরথর করে কাঁপার আরও একটি কারণ রয়েছে, সেটি হল বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে পারে আমেরিকা। সেক্ষেত্রে হাসিনার আবার বাংলাদেশে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। কারণ, তিনি এখনও পদত্যাগপত্র জমা দেননি বলেই খবর।