US Citizenship আদালতে ধাক্কা খেয়েও নাগরিকত্ব নিয়ে কড়া পদক্ষেপের পথে ট্রাম্প, উদ্বেগে ভারতীয় অভিবাসীরা

0
16

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভয়ানক এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব রদ করা হবে। অর্থাৎ, আমেরিকায় জন্মালেই সে আর নাগরিকত্ব পাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। সাফ বলে দেওয়া হয়েছে, সেদেশে বসবাসকারী দম্পতির মধ্যে একজনেরও গ্রিন কার্ড না থাকলে তাঁদের সন্তান জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাবে না।

উদ্বেগের বিষয় হল, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে অশনী সঙ্কেত দেখা দিয়েছে পৃথিবীর বহু দেশে। এমনকী ভারতেও! কিন্তু কেন? কারণ, বিশ্বের ৩৩টি দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংবিধান-প্রদত্ত অধিকার। এর মধ্যে আমাদের দেশও রয়েছে। বাকি ৩২টি দেশের মধ্যে অবশ্য বিধিনিষেধ রয়েছে কিছু। যেমন, পোল্যান্ডে সন্তানকে সেদেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে বাবা-মা দু’জনকেই সেখানকার নাগরিক হতে হবে। আবার অ্যান্ডোরার মতো দেশে সন্তানের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু মা সেখানকার নাগরিক হলেই চলবে।

বাহারিন, ইরানের মতো দেশে বাবার নাগরিকত্বই প্রধান শর্ত। এসব দেশেও সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরে নানা প্রশ্ন উঠছে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অধিকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন কিছু মানুষ। কিন্তু কোনও দেশ এখনও পর্যন্ত সরাসরি ওই অধিকার বাতিল করে দেওয়ার মতো সাহস দেখায়নি।

ট্রাম্পই প্রথম সেই সাহস দেখাচ্ছেন। ফলে চর্চা শুরু হয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ যদি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলিও সেই পথে হাঁটতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো ভারতের মতো দেশেও জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রদের দাবিতে উঠতে পারে আওয়াজ। যদিও আমেরিকার ফেডারেল আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্পের ওই ফরমান দেশের সংবিধানের পরিপন্থী। ফলে তা এখন কার্যকর করা যাবে না।

আদালতের এই নির্দেশে আপাতত স্বস্তিতে আমেরিকায় বসবাসকারী কয়েক লক্ষ অভিবাসী। বিশেষ করে ভারতীয় অভিবাসীরা।  

ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ট্রাম্পের এই নির্দেশের পিছনে আসলে রয়েছে বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল। আর দ্বিতীয়বার মসনদে বসে সুকৌশলে সেটাই করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আসল টার্গেট, ভিন দেশ থেকে আসা মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গরা বিশেষ করে আফ্রিকানরা।

আমেরিকায় এইসব মানুষের বিরুদ্ধে বেশ কিছুকাল ধরেই বিদ্বেষ বেড়ে চলেছে। এদের রোষে পড়ে কয়েকজন ভারতীয় বিনা কারণে খুনও হয়ে গিয়েছেন। ট্রাম্প এই বিদ্বেষপন্থীদের সমর্থনে ফের ক্ষমতায় এসেছেন। তাই তাঁদের স্বার্থ দেখতে হবে ট্রাম্পকে। সেজন্যই যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এত তৎপরতা, তা জলের মতো স্বচ্ছ।

কিন্তু ট্রাম্প এত সহজে তাঁর লক্ষ্য পূরণে সফল হবেন বলে মনে হয় না। কারণ, ১৮৬৮ সালে আমেরিকার সংবিধানে সংশোধনী এনে দেশে জন্মালেই নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। এখন এই সংশোধনী বদলাতে গেলে আমেরিকার দুই সংসদেই দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার।

সেইসঙ্গে সিংহভাগ প্রদেশেরও সমর্থন প্রয়োজন। তাই ট্রাম্প চাইছেন, সংসদকে এড়িয়ে আদালতের মাধ্যমে তাঁর লক্ষ্য পূরণ করতে। কিন্তু সেই আদালতেই ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প। তাঁর ওই নির্দেশের বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয় ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা সহ ডেমেক্রাট শাসিত চারটি প্রদেশ। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন স্টেট ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট।মামলার পরবর্তী শুনানি ৬ ফেব্রুয়ারি।

যদিও দমে যাওয়ার পাত্র নন ট্রাম্প। উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত পাঁচশো জনকে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করেছে আমেরিকার সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নও। 

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জেরে আমেরিকায় এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, সেদেশের হাসপাতালে এবং চিকিৎসকদের ক্লিনিকে রীতিমতো লাইন পড়ে গিয়েছে অন্তঃসত্ত্বাদের।

প্রত্যেকেরই একটাই আবেদন, যেভাবেই হোক ২০ ফেব্রুয়ারির আগে সন্তান প্রসব করতে চান তাঁরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এমনটা সম্ভব নয়। কারণ, প্রি-ম্যাচিওরড বেবি জন্ম নিলে মৃত্যু হতে পারে সদ্যোজাতর। কিন্তু ভাবী মায়েরা নাছোড়। তাঁদের বক্তব্য, সন্তান যদি নাগরিকত্ব না পায়, তখন কী হবে! এ অবস্থায় তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না, নাগরিকত্ব না পেয়ে ওই সন্তানকে কি দেশছাড়া হতে হবে? ট্রাম্প অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু সন্তান একা নয়, তার বাবা-মাকেও আমেরিকা ছাড়তে হবে।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পাশাপাশি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়েও চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে মার্কিন মুলুকে। বিশেষ করে ত্রস্ত আমেরিকায় থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীরা।

লাঘব করতে আমেরিকায় ক্যাম্পাসের বাইরে পার্ট টাইম কাজ করেন বেশিরভাগ ভারতীয় পড়ুয়া। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির জেরে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়ায় এখন তাঁরা কীভাবে পড়াশোনা চালাবেন, কীভাবেই বা খাওয়ার খরচ জোগাড় হবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না মার্কিন মুলুকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়ারা।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় তাঁদের অনেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবে এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতেও নির্বাসন বা স্টুডেন্ট ভিসা হারানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তাঁরা। কিন্তু সবার মনে একটাই প্রশ্ন, আগামী দিনে মার্কিন মুলুকে কীভাবে টিকে থাকবেন তাঁরা?

মার্কিন প্রেসিডেন্টের মসনদে বসেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হবেন তিনি। সেটাই শুরু করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের কঠোর মনোভাবে ভারত সহ আমেরিকায় বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা যথেষ্টই চিন্তিত।

নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে ভারতীয়দের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, রিটার্ন টিকিট না থাকায় আমেরিকায় বসবাসকারী এক ভারতীয়র বাবা-মাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দম্পতি আমেরিকায় থাকা তাঁদের সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিউ ইয়র্ক বিমানবন্দরে তাঁদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই দম্পতির কাছে বি-১, বি-২ ভিজিটর স্ট্যাটাস ছিল। সেইমতো তাঁরা আমেরিকায় সন্তানের কাছে পাঁচমাস থাকবেন বলে এসেছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের অফিসাররা ওই দম্পতিকে জানিয়ে দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী আমেরিকায় থাকার জন্য রিটার্ন টিকিট দেখাতে হবে। না হলে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

ওয়াকিবহাল মহলের আরও ধারণা, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মুসলিম দেশগুলি থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে হাঁটতে চলেছেন ট্রাম্প। কারণ, অবৈধ অভিবাসন এবং শরণার্থীদের নিয়ে তাঁর কঠোর মনোভাব স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই তিনি মেক্সিকো সীমান্তে দশ হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন বিমান ও হেলিকপ্টার পাঠানোর। লক্ষ্য, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ ঠেকানো। 

শপথগ্রহণের পরই একটি নির্দেশিকায় সই করেছেন ট্রাম্প। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকাকে বিদেশি সন্ত্রাসবাদ ও জননিরাপত্তার হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য ৬০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোন কোন দেশের নাগরিক ঢুকলে আমেরিকার জন্য চিন্তার, তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। ট্রাম্পের নির্দেশে ওই কাজ শুরু করে দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র, গোয়েন্দা, বিচার ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর।

Previous articleWeather Update শীত ফিরছে ? সাধারণতন্ত্র দিবসে থেকেই হাওয়া বদল!
Next articleKolkata Book Fair 2025: বইমেলায় বিশ্ব হিন্দু বার্তার স্টল থাকছে, জানিয়ে দিলেন গিল্ড সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here