দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অগ্নিপথের আঁচে উত্তপ্ত দেশের বিভিন্ন রাজ্য।একের পর এক ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।শুক্রবার বেশ কয়েকটি রাজ্যে কেন্দ্রের অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে উত্তাল হয় পরিস্থিতি!
অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনা নিয়োগের নয়া নিয়ম বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা একাধিক ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে, চলে ব্যাপক ভাঙচুর! সেকেন্দ্রাবাদ রেলস্টেশনে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে পুলিশ গুলি চালালে ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই হিংসার জেরে একজনের মৃত্যুও হয়। এই ভয়াবহ হিংসার জেরে ট্রেনের আর্থিক লোকসানের খতিয়ান পেশ করেছে ভারতীয় রেল। অগ্নিপথের জেরে ভারতীয় রেলের মোট ক্ষতি হয়েছে ৩,২৯,৯৭,৭২৫ টাকা!
ক্ষতির বিশদ বিবরণ পেশ করে রেল জানিয়েছে, আক্রান্ত প্রায় সমস্ত ট্রেনেরই জানলা বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গিয়েছে রেলে প্রদত্ত চাদর বালিশও! ভারতীয় রেল জানিয়েছে, শুধু স্মোক গ্লাস ভেঙেই ক্ষতি হয়েছে ৪ লক্ষাধিক টাকার। জানলার কাঁচ ভেঙে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫ লক্ষের কিছু বেশি। সমস্ত আসন পুড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার! ট্রেনে প্রদত্ত চাদর বালিশ ও তোয়ালে মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১১ লক্ষ টাকার বেশি।
দক্ষিণ মধ্য রেলের এক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার আন্দোলনকারীরা তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এই ঘটনায় যাত্রীদের কেউ আহত হননি। শুক্রবার লক্ষ্মীসরাই ও সমস্তিপুর স্টেশন এবং রাজ্যের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা নতুন দিল্লি-ভাগলপুর বিক্রমশিলা এক্সপ্রেস এবং নয়া দিল্লি-দারভাঙ্গা বিহার সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের অন্তত ২০ টি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা বিক্রমশিলা এক্সপ্রেসের ১২টি বগিতে আগুন লাগায়।
সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের জন্য অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি ট্রেনের আটটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় সমস্তিপুর রেলস্টেশনে। চার বছরের জন্য সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ এবং তারপরে কোনও পেনশনের সুবিধা ছাড়াই কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ কর্মীদের বাধ্যতামূলক অবসরের কথা বলায় অগ্নিপথ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের দল রাস্তায় নামে।
বিহারের সাসারাম এবং ভুভুয়া স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুড়ে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা রেলের আসনের নিচে আশ্রয় নেন।
এই অবস্থায় যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শুক্রবার একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করল পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সেই সঙ্গে কাটছাঁট করা হয়েছে আরও কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথ।
বাতিল হওয়া এই ট্রেনের মধ্যে আছে হাওড়া-নিউ দিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেস, কলকাতা-জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস। শুক্রবার বাতিল হয়েছে হায়দরাবাদ-শালিমার ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসের যাত্রাও। দূরপাল্লার বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে কাটছাঁট করা হয়েছে হাতিয়া-বর্ধমান মেমু এক্সপ্রেসের যাত্রাও। মূলত ইস্ট-সেন্ট্রাল রেলওয়ের বিভিন্ন পথে এই বিক্ষোভ চলছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার এই প্রকল্প সম্পর্কে ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল এবার থেকে ১৭-২১ বছরের বয়সীদের চার বছরের জন্য মাসিক বেতনের চুক্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন ভাগে নিয়োগ করা হবে। তাদের ‘অগ্নিবীর’ নামকরণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
চতুর্থ বছরের শেষে সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনার শূন্যপদের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। বাকিরা এককালীন অর্থের বিনিময়ে অবসর গ্রহণ করবেন। থাকবে না কোনও পেনশন। বিক্ষোভের মুখে কেন্দ্র আবেদনের সময়সীমা দু’বছর বাড়িয়ে দিলেও বিক্ষোভের আঁচ কমেনি এখনও। এ রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের রেশ।
দেশের বিভিন্ন অংশে সড়কপথে বিক্ষোভ দেখানো ছাড়াও রেলপথেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আঁচ। একাধিক স্টেশনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রেন। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই ট্রেন বাতিল করা ছাড়াও বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ কাটছাঁট করা হয়েছে।