দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ :মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির সভা থেকে চার জেলা সভাপতি বদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
এদিন দিদি ঘোষণা করেন, রাজ্য তৃণমূলের সহ সভাপতি করা হয়েছে তাপস রায়কে। তাই তাঁকে উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। ওই জায়গায় জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুদীপ এর আগে জেলা সভাপতি ছিলেন। মাঝখানে সাংসদকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাপসবাবুকে।
বনগাঁর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে গোপাল শেঠকে।
এদিন দিদি বলেন, বনগাঁ নিয়ে একাধিক অভিযোগ এসেছিল। তাই এখানকার জেলা সভাপতি বদল করা হল। তবে মমতা ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছেন, এটাই শেষ নয়। পরে যদি মনে হয় কোনও জেলায় সভাপতি বদল করা দরকার, তাহলে তা করা হবে।
কৃষ্ণনগরের জেলা সভাপতি পদে আনা হল কল্লোল খানকে।
এদিন উত্তর কলকাতার সাংসদকে ফের পুরনো দায়িত্বে ফেরানো হল।তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হল তুষার দলুইকে। সৌমেন মহাপাত্রকে এই সাংগঠনিক জেলায় চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
পিকে-অভিষেককে মঞ্চে বসিয়ে তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সংগঠনে বিরাট কোনও রদবদল ঘটালেন না (Mamata Banerjee) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে রাজ্য কমিটি গঠনের সভায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর (PK), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তাঁদের মঞ্চে বসিয়েই পুরনো নেতৃত্বের উপরে আস্থা রাখলেন দিদি।
রাজ্য সভাপতি সেই সুব্রত বক্সীই। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রইলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ, শান্তিরাম মাহাতো, তন্ময় মাহাতোরা। ছাত্র, যুব, মহিলা, ট্রেড ইউনিয়ন—কোনও শাখা সংগঠনেই বড় কোনও বদল আনলেন না তৃণমূলনেত্রী। শুধু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চেয়ারম্যান করা হল প্রাক্তন সভাপতি জয়া দত্তকে। মহিলা তৃণমূল, আইএনটিটিইউসি, যুব তৃণমূল ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রইলেন যথাক্রমে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ এবং তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।
দলের কেউ কেউ মনে করছেন, পিকে এবং অভিষেককে মঞ্চে বসিয়ে দিদি সবক শেখালেন। পুনর্মূষিকভব হলেন অভিষেক। তাঁর ঘরে সব রইল কিন্তু চাবিকাঠি রইল দিদির হাতে।
আবার অনেকের মতে, ব্যাপারটা এরকম নয়। মমতা দলের মধ্যে স্থিতাবস্থা রাখতে চাইলেন। পিকে, অভিষেকদের সঙ্গে হয়তো পরামর্শ করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিদি। পিকে, অভিষেককে মঞ্চে বসিয়ে মমতা বোঝাতে চাইলেন দ্যাখ কেমন লাগে—মোটেও ব্যাপ্রটা তেমন নয়। বরং তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দলের ব্যাটন যাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা করতে হবে রয়েসয়ে। ঠান্ডা করকে খাও। এখানে তাড়াহুড়ো করলে অন্য পরিস্থিতি তৈরি হবে।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, কলকাতা পুরসভার ভোট, তারপর ১০৮ পুরসভার প্রার্থী করার সময়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন দিদিও। এক ব্যক্তি, এক পদ নিয়েও দলের মধ্যে যে মতান্তর রয়েছে তাও প্রকাশ্যে এসেছে ইতিমধ্যে।
এই পর্বে দেখা গিয়েছিল, প্রবীণ নেতারা নেতৃত্ব চলে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে দলের মধ্যেই উপদল তৈরি হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে মমতা কোনও ক্ষোভকে মাথাচাড়া দিতে দিলেন না। একাধিক সিদ্ধান্তে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চান।
যেমন সব্যাসাচী দত্তকে মেঘালয়ের কো-ইনচার্জ করা হয়েছে। আবার মানস ভুঁইয়া সেখানকার ইনচার্জ। কুণাল ঘোষকে নির্দেশ দিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে কারা যাবেন, কী বলবেন এ ব্যাপারে একটা গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে। অর্থাৎ পুরোটাই হবে সংগঠিত হবে। কে কোন চ্যানেলে কী বিষয়ে প্যানেল ডিসকাশনে বসবেন তা পার্টি ঠিক করে দেবে। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ঠিক করতে পারবেন না।
চুম্বকে—মমতা বুঝিয়ে দিতে চাইলেন তাঁর হাতে গড়া দল, তিনি শক্ত হাতেই নিয়ন্ত্রণ করবেন। এখানে মুখ চাওয়াচাওয়ি চলবে না। তুই বড় না মুই বড়ও না।