একদিকে বিজেপির প্রার্থী নিয়ে বিতর্কিত পোষ্টার, অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী করা নিয়ে বিশেষ দাবি। আর এই নিয়েই আপাতত সরগরম বাগদা বিধানসভা এলাকা। আপাতদৃষ্টিতে এই কেন্দ্রে দুপক্ষের কর্মকান্ডে দুপক্ষেরই গোষ্ঠীবিবাদ প্রকাশ পেল উপ নির্বাচনের প্রাককালে।
দেশের সময় বাগদা : সোমবারই রাজ্যের ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের নির্ঘন্ট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর সেখানে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রও রয়েছে। এই কেন্দ্রে তৃণমূল বা বিজেপির পক্ষে কে প্রার্থী হবেন, তাই নিয়েই শুরু হয়েছে কোন্দল। দেখুন ভিডিও
উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরের দিন সকালেই বাগদার আষাঢ়ু, জিয়ালা মোড়, চুয়াটিয়া সহ একাধিক জায়গায় পোষ্টার চোখে পড়ল সাধারণ মানুষের। আর সেই পোষ্টারকে ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সেই পোষ্টারগুলি একটিতে বিজেপির নাম করে লেখা হয়েছে, ‘বাগদা বিধানসভায় সুদখোর হারাধন হালদারকে আমরা চাই না।’ অন্য আর একটি পোষ্টারে একইভাবে বিজেপির নাম করে লেখা হয়েছে, ‘বাগদা বিধানসভায় তৃণমূলের দালাল দুলাল বরকে আমরা চাই না।’
কিন্তু এই পোষ্টার কারা লাগালো?
তাই নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এটা বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল, এমনই দাবি করে তৃণমূলের বাগদা পশ্চিম ব্লকের সভাপতি অঘোরচন্দ্র হালদার বলেন, ‘এই কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটের দাবিদার ১৭-১৮ জন। আর তার থেকেই সম্ভবত এমন কান্ড।’
উপনির্বাচনে মতুয়া প্রার্থী চাই। স্পষ্ট বার্তা দিলেন মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামীরা। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বাগদা বিধানসভায় কুড়ি হাজার বেশি ভোটে হেরেছে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন বাগদারই প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। এবার বাগদা বিধানসভার উপ নির্বাচনে ভূমিপুত্র তথা মতুয়া প্রার্থী করার দাবি জানালেন তৃণমূল অনুগামী মতুয়া ভক্তরা।
মঙ্গলবার বাগদার হেলেঞ্চ হরিমন্দিরে বৈঠক করে বাগদা ব্লক অল ইন্ডিয়া মতুয়া সঙ্ঘ। বৈঠকের পর তাঁরা জানান, বাগদা বিধানসভা উদ্ধারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে বাগদার ভূমিপুত্র তথা মতুয়া প্রার্থী দিতে হবে। চিঠি দিয়ে সেই দাবি তাঁরা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতাবালা ঠাকুরের কাছে। তাঁরা বলছেন, বাগদা বিধানসভায় ৮০ শতাংশ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। ফলে তাঁরা মতুয়া প্রার্থী চান।
তাঁদের বিশ্বাস, বাগদায় মতুয়া প্রার্থী হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই আসন উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। যদি তাঁদের দাবি না মানা হয় তাহলে তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করবেন ঠিকই কিন্তু পদক্ষেপ কী হবে, সে বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিনের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাগদা পশ্চিম ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অঘোর চন্দ্র হালদার। মতুয়াদের এই দাবিকে তিনি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল নেতা বলেন, মতুয়া প্রার্থী হলে দলের সাফল্য আসবে, তা না হলে হয়তো দেখা যাবে বিগত দিনের মত অল্প কিছু ভোটে হার হবে।
বিজেপির বাগদা ২ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি সমীর কুমার বিশ্বাস বলেন, মতুয়ারা তৃণমূলের সঙ্গে নেই। সিএএ-এর বিরোধিতা করায় মতুয়ারা তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাগদার বিজেপি নেতা দুলাল বর বলেন, তৃণমূল এবারের উপ নির্বাচনে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে ।
তবে গোষ্টীকোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, ‘বাগদায় বিজেপির মাটি অনেকটাই শক্ত। তাই আগে থেকে ভয় পেয়ে তৃণমূল এমন কান্ড ঘটাচ্ছে। এতে কোনও লাভ হবে না।’
এদিকে, এদিন তৃণমূলের একটি অংশ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বাগদা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মতুয়াদের পক্ষ থেকে প্রার্থী করতে হবে, যাতে তিনি মতুয়াদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারেন। এখন দেখার, তৃণমূল এবং বিজেপি কাকে তাদের দলের প্রার্থী করে।