দেশের সময় কলকাতা :তৃণমূলের অন্দরে রদবদল। এই জল্পনার মাঝেই সোমবার কালীঘাটে বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের ন্যাশনাল ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে থাকবেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সংসদে শীতকালীন অধিবেশন রণনীতি ঠিক করতে বৈঠক বলে সূত্রের খবর। রাজ্যের কোনও ইস্যুকে হাতিয়ার করে কোন পথে নামবে তৃণমূল, তা ঠিক হবে এই বৈঠকে। ১২ টা সাংগঠনিক জেলা, ৭০ টি পুরসভায় তৃণমূলের রদবদল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে তৃণমূলের এই মিটিংয়ে।
শনিবার বিধানসভার ৬টি আসনে উপ নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে। তার পরই সোমবার বিকেল ৪টের সময়ে কালীঘাটে তাঁর বাসভবনে তৃণমূলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে রাজ্যের নেতারা ছাড়াও রাজ্যসভা ও লোকসভায় দলনেতারা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ডেরেক ও ব্রায়েন ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। তবে কী কারণে সোমবার বৈঠক ডাকা হয়েছে, অর্থাৎ বৈঠকের অ্যাজেন্ডা কী তা এখনও স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, দুটি বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। তার প্রথম বিষয় হল, সংসদ ও বিধানসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন। সংসদের অধিবেশন এবার গুরুত্বপূর্ণ।
গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষ প্রথম দিন থেকে এ ব্যাপারে উত্তাল থাকবে। কংগ্রেস ইতিমধ্যে গৌতম আদানিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। প্রশ্ন হল, তৃণমূলও কি সেই পথে হাঁটবে?
নাকি আদানি গ্রেফতারের দাবি না তুললেও তদন্তের দাবি জানাবে। এই ব্যাপারে দলনেত্রীর মনোভাব এখনও ডেরেকদের কাছে পরিষ্কার নয়। সোমবারের বৈঠকে সম্ভবত সে বিষয়ে দিশা দেখাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অতীতে আদানির বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর কংগ্রেস যৌথ সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্তের দাবি তুলেছিল। কিন্তু তৃণমূল সেই দাবিতে সায় দেয়নি। তারা সংসদের বাইরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকতেই তৃণমূলে রদবদলের ব্যাপারে জল্পনাও গতি পেয়েছে। শাসক দলের সংগঠনে রদবদল অনিবার্য। তা শনিবারের পর যে কোনওদিন হতে পারে। মমতা বৈঠক ডাকার পর কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে সোমবার রদবদলের কথা ঘোষণা করা হবে কিনা।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, শুরুতে জেলা সংগঠনে রদবদল হওয়ার কথা। সে জন্য ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার দরকার ছিল না। এও হতে পারে যে সোমবারের আগে রবিবারই রদবদলের ব্যাপারে প্রাথমিক ঘোষণা হয়ে গেল। তবে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সাংগঠনিক দায়িত্ব বন্টনের ব্যাপারে কিছু আলোচনা হতে পারে।
তৃণমূল অন্দরের রদবদল নিয়ে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা যে সঠিক সিদ্ধান্ত, তা পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনের বিপুল জয়ের মধ্যেও সেটা প্রমাণিত হয়েছে।” যদিও এই বিষয়টিকে কটাক্ষ করে বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “মুখ্য়মন্ত্রীর নেতৃত্বে এই বাংলা এগোয়নি, বরং একশো বছর পিছিয়ে গিয়েছে। কাউকে পাল্টে লাভ হবে না, একমাত্র লাভ হবে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পরিবর্তন হলে।”
প্রসঙ্গত, ২৩ নভেম্বর রাজ্যে উপনির্বাচনের ফল। আর তারপরই রদবদলের তালিকা এক প্রকার চূড়ান্ত। রদ-বদলের শীর্ষে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি সাংগঠনিক জেলা। পরিবর্তন আসতে পারে পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলাতেও। বাঁকুড়া সংগঠন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। উত্তরবঙ্গে সংগঠনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পরিবর্তন হতে পারে দুই দিনাজপুরেও। এছাড়াও মালদহ জেলা সংগঠনে দ্বন্দ্ব নিয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে পারে দল। দার্জিলিং জেলা সমতলে সংগঠন দুর্বল। প্রভাব পড়ছে ভোটে। এই জেলা সংগঠন ও নজরে।