দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে আর মাত্র কয়েক মাস। তাই আর সময় নষ্ট করতে রাজি নয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । জনসমর্থন ধরে রাখতে তাই এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েতে অন্যতম ফ্যাক্টর মহিলা ভোট। সেই জন্যই মহিলা সংগঠন নিয়েই গোটা রাজ্য জুড়ে হবে সভা।
দলের মহিলা সংগঠনের সভাপতি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘মহিলাদের আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রী যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তাদের সংগঠনে গুরুত্ব দেন। এত সংখ্যক কর্মী অন্য দলে নেই। নিরঙ্কুশ কাজ করে যাচ্ছেন। জেলায় জেলায় আমাদের সংগঠন শক্তিশালী হচ্ছে। ১৮ এপ্রিল সংগঠন দায়িত্ব কারা সামলাবেন তা ঘোষিত হয়েছিল। যদিও তা স্থগিত করা হয়। ফের নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হল। ২০১২ সালে পঞ্চায়েতে মহিলাদের ৫০% আসন সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
২০১৩, ২০১৮, ২০২৩ সালে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ সামনে পঞ্চায়েত ভোট। ১ নভেম্বর থেকে ৩৬ সাংগঠনিক জেলার, মধ্যে পঞ্চায়েত হবে যে সব জেলায় সেখানে আড়াই মাস ধরে মহিলা পঞ্চায়েতী সভা হবে। আগামী সপ্তাহে রাজ্য কমিটির বৈঠক হবে। ৩১ সাংগঠনিক জেলায়, আমাদের পঞ্চায়েত নিয়ে সভা হবে। মহিলা পঞ্চায়েতি সভা হবে। ১২ জানুয়ারি অবধি হবে।’’
২০১৩ ও ২০১৮ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসনই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এখন যেন উলটপুরাণ। নেতাদের আর বাড়ি বাড়ি ছুটতে হচ্ছে না গৃহকর্তাকে অনুরোধ করতে। বরং এখন ঘরের মহিলাদের প্রার্থী করার জন্য নেতাদের কাছে তদ্বির করছেন গৃহকর্তারাও। এমনকী একটি মহিলা আসনের জন্য একাধিক জন দাবিদার হয়ে উঠছেন। আগে হন্যে হয়ে খুঁজতে হত।
গত দুই পঞ্চায়েত ভোটে, অনেকের মধ্যে একজনকে একটি আসনে চূড়ান্ত করতে গিয়েও সমস্যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা আসনের প্রায় দ্বিগুণ মহিলা চাইছেন পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত হতে। একইভাবে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও মহিলাদের দ্বিগুণ দাবিদার।
শাসকদলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের যতটা আগ্রহ, বিরোধীদের ক্ষেত্রে অবশ্য ততটা নয়। তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারীশক্তির বিকাশে যেভাবে পদক্ষেপ করেছেন এটা তারই সুফল। মহিলাদের নিরাপত্তা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া, শিক্ষার আঙিনায় টেনে আনতে বিশেষ বিশেষ প্রকল্প চালু করা-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ এইভাবে মহিলাদের আরও বেশি সংখ্যায় রাজনীতির আঙিনায় আসতে অনুপ্রাণিত করেছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতেই তাই সময় নষ্ট করতে রাজি নয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ পাশাপাশি জনসমর্থন ধরে রাখতে তাই বিজয়া সম্মিলনীকেও হাতিয়ান করছে তারা।
আগামী ১০ দিনে ৫০০টিরও বেশি বিজয়া সম্মিলনী করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। নিজের বিধানসভা এলাকা ভবানীপুরের বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি , গরুপাচার , কয়লাপাচার , মামলায় জেরবার তৃণমূল। গত কয়েকমাসে একাধিক মামলার তদন্তে সক্রিয় হয়েছে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকা ও গয়নার ছবি দেখে অবাকই রয়েছে আম নারকিকরা। তৃণমূলের নীচু তলার কর্মী-সমর্থকরাও এনিয়ে খানিকটা হতাশ। এছাড়াও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মতো হেভিওয়েট নেতারা এখন জেলে। সব মিলিয়ে খানিকটা কাদায় পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। দলের ভাবমূর্তিও ধাক্কা খেয়েছে। আর সেই সুযোগে বিরোধীরা আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে।
তাই দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে নজর দিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে জনসংযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে নেতাদের। আর এক্ষেত্রে হাতিয়ার বিজয়া সম্মিলনী।
দলের সব স্তরের কর্মীদের এক ছাদের তলায় নিয়ে এসে রাজ্য সরকারের সাফল্যের খতিয়ান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্রের খবর, বিজয়া সম্মিলনীতে দলের পুরনো কর্মীদের সংবর্ধনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।