দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিনোদন দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন।
প্রয়াত হলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। গত ১৫ দিন ধরে তিনি এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দিন কয়েক আগেই তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তবে বিপদ কাটেনি, তা আগেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন দাদার কীর্তির পরিচালক। গত সপ্তাহে তা মারাত্মক হয়ে গেলে তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। কিডনির সমস্যার সঙ্গে ফুসফুসেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁর।
সূত্রের খবর, সময় গড়ালেও উন্নতি হয়নি পরিচালক তরুণ মজুমদারের শারীরিক অবস্থার। অতি সঙ্কটজনক হয়ে ওঠে তা আজ, সোমবার সকালে। পরিচালকের শরীরে ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। ডায়ালিসিস চলছিল একটানা। তবে শেষমেশ কাটল না বিপদ।
রবিবার তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।সোমবার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে মৃত্যু হয় প্রবীণ পরিচালকের।সেই সঙ্গেই যেন অবসান হল বাংলা সিনেমার একটি যুগের।
১৯৬২ সালে কাচের স্বর্গ ছবির জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান পরিচালক। মোট চারটি জাতীয় পুরস্কার জয়ী চলচ্চিত্র পরিচালককে কেন্দ্র পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে ১৯৯০ সালে। এ ছাড়াও ফিল্মফেয়ার, বিএফজেএ পুরস্কার আনন্দলোক পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছিল পরিচালককে।
১৯৩১ সালে ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার বোগরায় জন্ম তরুণের। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তরুণের পড়াশোনা কলকাতাতেই। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে ছাত্র তরুণ পরে রসায়ন নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তরুণের ফিল্ম জগতে পদার্পন ১৯৫৯ সালে পড়াশোনা শেষ করার বেশ কয়েক বছর পর। তখন তাঁর বয়স ২৮।
সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন ততদিনে নিজেদের ঘরানা তৈরি করে ফেলেছেন। সেই ঘরানার মধ্যে থেকেও তাঁর যাত্রা ছিল সতন্ত্র৷ যেখানে সবটাই কথার কথা৷ আবার তার ব্যপ্তিও সমুদ্রের মতো৷ শুধু বিনোদনের কথা তিনি ভাবেননি৷ শুধু ব্যবসাও না৷ বরং গল্প থেকে বানিয়েছেন অন্য এক নতুন গল্প৷ পরিচালনায় তাঁর অভিষেক ‘যাত্রিক’-এর হাত ধরে ৷ ১৯৬৩ পর্যন্ত শচীন মুখোপাধ্যায়, দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘যাত্রিক’-এর মাধ্যমেই ছবি পরিচালনা করেন তরুণ মজুমদার ৷
শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি ছবির পরিচালনার কৃতিত্ব তরুণ মজুমদারকেও দেওয়া হয়।
এর পর ১৯৬৩ সালে তিনি একক পরিচালক হিসবে কাজ শুরু৷ ১৯৬৫ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নায়ক করে ‘একটুকু বাসা’এবং ‘আলোর পিপাসা’পরিচালনা করেন বসন্ত চৌধুরীকে নায়কের ভূমিকায় রেখে ৷ এর পর টালিগঞ্জে তাঁর যাত্রা ক্রমশই মজবুত হয়ে ওঠে –
‘পলাতক’ (১৯৬৩), ‘বালিকা বধূ (১৯৬৭), ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ (১৯৭৩), ‘গণদেবতা’ (১৯৭৮), ‘দাদার কীর্তি’ (১৯৭৯), (১৯৮৫), ‘আলো’ (২০০৩)৷ তাঁর গল্পে দর্শক দেখেছে সাহিত্যের সেরা এক সময়৷ তরুণ মজুমদারের পরিচালনাতেই বাংলা চলচ্চিত্র দুনিয়ায় পরিচিত হন তাপস পাল, দেবশ্রী রায়, মহুয়া রায়চৌধুরীর মতো শিল্পীরা ৷
বাংলা সাহিত্যনির্ভর ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধুর্য ছিল তরুণ মজুমদারের ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷ পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘কাচের স্বর্গ’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘গণদেবতা’ এবং ‘অরণ্য আমার’ ছবিগুলি জাতীয় পুরস্কার পায়৷