দেশের সময় , কলকাতা: সোমবার সাকলেই তাপস রায় সাংবাদিকদের সামনে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে রওনা দেন বিধানসভার উদ্দেশে। তখনই জানা গিয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক পদথেকে ইস্তফা দেবেন তিনি। তার কিছুক্ষনেই দেখা গেল, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে পদত্যাগ করলেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা তাপস রায়।
সোমবার দুপুরে বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের সামনে জানিয়ে দিলেন তিনি তৃণমূল এবং বিধায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি কী করবেন তা ভবিষ্যতে ঠিক করবেন বলে জানালেন বরানগরের বিধায়ক।
আগেই জানা গিয়েছিল, তিনি দলীয় পদ, দল থেকে সরে দাঁড়াবেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ। তবে লম্বা বৈঠক শেষে দেখা গেল, বরফ গলেনি। বেলা বাড়তেই দেখা গেল শুধু বিধায়ক পদ নয়, দলও ছাড়লেন তাপস রায়।
দলের দুর্নীতি এবং সন্দেশখালির ঘটনার পর থেকে মুখ দেখাতে পারছেন না তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায়। একথা জানিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সামনে একরাশ ক্ষোভ ঝরে পড়ল তাঁর কণ্ঠে। এছাড়াও তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অভিমান জানিয়ে বিধানসভায় চলে গিয়েছেন বরানগরের বিধায়ক।
তাপস যোগ করেন, ‘‘রাজনীতিতে আমার সততা কারও অজানা নয়। নিজের দলের লোকই যদি আমার বিরুদ্ধে চলে যায়, সেটা দুর্ভাগ্যের। আমার বাড়িতে একটা সাজানো ইডি অভিযান হল, ৫২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। আমি এখনও মমতার ডাক পাইনি। আমার হৃদয়কে এটা ভারাক্রান্ত করেছে।’’
প্রসঙ্গত, সংকট কাটাতে সোমবার সাতসকালে তাপস রায়ের বাড়িতে পৌঁছে যান মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কুণাল ঘোষ। কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, আমি প্রায়ই তাপসদার বাড়িতে আসি। আজও এসেছি। নানা বিষয়ে গল্পগুজব হয়। তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতাই এটাকে নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘক্ষণ দুই নেতার সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়ে তাপস রায় সাংবাদিকদের সামনে তাঁর অভিমান ও ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন। যার মধ্যে মূলত তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযান নিয়ে দলনেত্রীর নীরবতা নিয়ে সরব হন।
এদিন তিনি বলেন, সন্দেশখালি ও দলের দুর্নীতির কারণে মুখ দেখাতে পারছেন না। শাহজাহানকে নিয়ে দল এবং শীর্ষ নেতৃত্ব প্রতিবাদ করলেও তাঁর সম্পর্কে একটি কথাও কেউ বলেননি। এই অবস্থায় তাঁর পক্ষে আর মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
বেশ কিছুকাল ধরেই রাজ্যের প্রবীণ বিধায়ক তাপস রায় দলবিরোধী কথাবার্তা বলছেন। দলীয় নেতৃত্বকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন বরানগরের বিধায়ক। তাঁর প্রতি দলীয় ‘বঞ্চনা’র অভিমানের সুরও শোনা গিয়েছে তাপসের মুখে। সম্প্রতি কলকাতা উত্তরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভার টিকিট দেওয়ার বিরোধিতা করে আসরে নামেন। তার পর থেকেই তাঁর সম্পর্কে দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল দলত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে।
রবিবার থেকে সেই জল্পনা আরও আকার নিতে শুরু করে। আর তা থেকেই এদিন সকালেই তাপস রায়ের বউবাজারের বাড়িতে চলে যান ব্রাত্য বসু ও কুণাল ঘোষ। তাপস এদিন সাংবাদিকদের সামনে দাবি করেন, ওরা যখন আমাকে বোঝাতে এসেছিল, তার মধ্যেই সুব্রত বক্সী শোকজ নোটিস পাঠিয়েছেন কুণাল। কুণাল ও ব্রাত্য দুজনেই আমার ভাইয়ের মতো। ওরা আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। মাঝেমধ্যেই আসে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাপস রায়কে লোকসভা ভোটের আগে দলত্যাগ না করতে বোঝাতেই গিয়েছিলেন তাঁরা। কারণ তাঁর মতো দীর্ঘদিনের মমতা-অভিষেকের সৈনিক দল ছাড়লে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। প্রসঙ্গত, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করে দলের ভিতরে গত দু-তিন ধরে হাওয়া তৈরি হয়েছে। ক্রমশ তা ঝড়ে পরিণত হতে চলেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকদিন ধরেই তাপস রায় তার বরানগর কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। উত্তর কলকাতা তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা জায়গা। ফলে সুদীর্ঘকাল বিধায়ক পদে থেকে এবার নতুন ময়দানে খেলার বাসনা হয়েছে কিনা তা সময়ই বলবে।