দেশের সময় , কলকাতা: রাজ্যে শাসক দল ও সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বুধবার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে বিজেপির সভা। তাতে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুমুল তর্কাতর্কি করে সাসপেন্ড হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন সকাল থেকে বিধানসভার ভিতর ছিল জমজমাট। তৃণমূল দুটি বিষয় নিয়ে সভায় সরব ছিল। এক, বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা ও দুই, দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপির স্লোগান ছিল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।
এই সব সাত সতেরোর মধ্যে এদিন বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, বিজেপি ছেড়ে যাঁরা অন্য দলে গিয়েছেন, তাঁরা বাইরে একরকম পরিচয় নিয়ে ঘুরে বেড়ান, আর বিধানসভার মধ্যে স্পিকার বলেন, ওঁরা বিজেপির বিধায়ক। এ কথা শুনে স্পিকার বলেন, আপনি এরকম বলতে পারেন না। আমি রেকর্ড থেকে এ কথা বাদ দিতে বলব!
এ কথা শুনেই উঠে দাঁড়ান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন এ কথা বলা যাবে না? এটুকু বলে শুভেন্দু হাতের কাছে রাখা কাগজ ছিঁড়ে শূন্যে ছুড়ে দেন। তা দেখে স্পিকার বলেন, এই আচরণ ঠিক নয়। বরদাস্ত করব না। শুভেন্দু পাল্টা বলেন, বেশ করেছি।
যদিও অধিবেশন কক্ষের বাইরে এসে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা একদম অবাঞ্ছিত ঘটনা। রাস্তায় গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে যে চিৎকার করা যায়, সেটা যে বিধানসভায় করা যায় না এই বোধটা থাকা দরকার। একদিকে সংবিধানের কথা বলবেন, অন্যদিকে সংবিধান অবমাননা করবেন এটা ঠিক নয়।”
ওদিকে শাসক দলের বিধায়করা ততক্ষণে শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলতে থাকেন। তা শুনে স্পিকার বলেন, প্রস্তাব এলে তা বিবেচনা করে দেখতে পারি। শেষমেশ শুভেন্দুকে চলতি শীতকালীন অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়।
অনেকে মনে করছেন, বিজেপি এদিন কৌশলগত ভাবেই বিধানসভায় পদক্ষেপ করেছে। বুধবার ধর্মতলায় সভার আগে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ সরগরম রাখতে পেরেছে। শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করার পর বিজেপি তথা বিরোধী দলনেতা আরও উচ্চগ্রামে স্বর চড়ানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন।
বিধানসভায় এবারের অধিবেশনে বেশ কয়েকটি বিল পাশ হওয়ার কথা। সামগ্রিক ভাবে সেগুলো নিয়ে বিজেপির বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি পাখির চোখ করতে চাইছে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। এদিন বিজেপির সমস্ত পোস্টার, তাঁদের কথা, কৌশল—সবেতেই তার প্রতিফলন ছিল।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় এদিন বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আগ্রহ নেই বিজেপির। ওদের মানসিকতাই স্বৈরাচারী। তাই বিধানসভার মধ্যে এমন কদর্য আচরণ করল সারাদিন।