কথা ছিল মাত্র ৮ দিনের, কিন্তু কপালে লিখন খন্ডাবে কে? ৮ দিনের জন্য গিয়ে ৯ মাস মহাকাশেই থেকে যেত হল সুনীতা উইলিয়ামসকে। অবশেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি।
অবশেষে ন’মাস পরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দিলেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী নভশ্চর বুচ উইলমোর। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ১০টার (ভারতীয় সময় অনুসারে) কিছু পরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছেড়ে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেয় স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। সোমবার সকাল থেকেই গোটা অবতরণ প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার করছে নাসা।
নাসার বিবৃতি বলছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতের ঘড়িতে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে।

সুনীতাদের ফেরাতে রবিবার সকালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছোয় স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। তাতে ছিলেন নাসার অ্যান ম্যাক্লেন, নিকোল আইয়ার্স, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার প্রতিনিধি টাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রতিনিধি কিরিল পেসকভ। তাঁদের মহাকাশ স্টেশনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনীতা এবং বুচ।
আগেই আইএসএস-এ সুষ্ঠু ভাবে যানটির ডকিং প্রক্রিয়া (অবতরণ) সম্পন্ন হয়েছিল। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আন ডকিং প্রক্রিয়া শেষ হয়। অর্থাৎ, সুনীতাদের নিয়ে আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয় মহাকাশযানটি।

গত বছরের জুন মাসে আট দিনের সফরে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু তাঁদের বাহক বোয়িং স্টারলাইনারে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে সুনীতাদের ঘরে ফেরা আটকে যায়। তার পর থেকে বার বার তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বার বার নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছে। আট দিনের সফর ন’মাস দীর্ঘায়িত হয়েছে। অবশেষে মাস্কের সংস্থার মহাকাশযান তাঁদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরছে।

নাসার তরফে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, স্পেস স্টেশন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুনীতারা এবং তার আগে শেষবার ছবি তোলা হচ্ছে তাঁদের। সুনীতাদের ফেরাতে রবিবার সকালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছেছিল স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। নাসার বিবৃতি বলছে, স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতীয় সময়ে তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে।
https://x.com/NASA/status/1901857449084145767?t=ogXBY6PpRYs4515ibxx_9Q&s=19
প্রথম মহাকাশ যাত্রা –
মহাকাশ নিয়ে সুনীতার পথচলা শুরু ১৯৯৮ সালে। সেই বছর মহাকাশচারী হিসাবে নাসা বেছে নেয় সুনীতাকে। দীর্ঘ ৮ বছরের ট্রেনিং শেষে ২০০৬ সালে প্রথম মহাকাশে পাড়ি দেন তিনি। সেই বারেও ছয় মাসের জন্য মহাকাশে গিয়ে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে সাত মাস কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন অন্তরীক্ষে।
রেকর্ড –
নিজের দীর্ঘ কেরিয়ারে বহু ছোট বড় রেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত এই মহাকাশচারী। সুনীতাই হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীতে নয়, মহাকাশে ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ট্রেডমিলে তিনি বোস্টন ম্যারাথন শেষ করেন।
২০১৭ সালে মহিলা হিসাবে সবচেয়ে বেশিদিন স্পেসফ্লাইটে কাটানোর রেকর্ড গড়েন। ১৯৫ দিন অরবিটে কাটিয়েছিলেন সুনীতা।

এর আগেও ৩২২ দিন মহাকাশে আটকে ছিলেন তিনি। একজন মহিলা মহাকাশচারী হিসাবে নজির গড়েছেন।
সাতটি স্পেস ওয়াক সম্পন্ন করেছেন তিনি, ৫০ ঘন্টার বেশি সময় মহাকাশে ভেসে কাটিয়েছেন সুনীতা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে টানা ৬২ ঘন্টা ৬ মিনিট স্পেস ওয়াক করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
২০১২ সালে একটি নতুন ধরনের রেকর্ড গড়েন। সুনীতাই প্রথম ব্যক্তি যিনি মহাকাশে ট্রায়াথলন সম্পন্ন করেন। সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো অনুশীলন করেন। যা মাধ্যাকর্ষণহীন মহাবিশ্বে করাটা কার্যত অসম্ভব।

মহাকাশ গবেষণায় এই অনন্য অবদানের জন্য নৌবাহিনীর প্রশংসা পদক, নাসা স্পেসফ্লাইট পদক পেয়েছেন। ২০০৮ সালে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। এখন গোটা বিশ্ব তাকিয়ে শুধু সুনীতা উইলিয়ামসদের ঘরে ফেরার দিকে।