বাংলাদেশে আচমকাই অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনী। রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি বেশ থমথমে। রাজধানীর বাসিন্দাদের বক্তব্য শুক্রবার বিকালের পর শহরে সেনার তৎপরতা অন্যদিনের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে।
নতুন করে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ভেতরে সেনাবাহিনী সন্ধ্যের পর থেকে টহল দেওয়া শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতি বিগত কয়েক মাসে দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালের মতো বিভাগীয় শহরগুলিতেও সেনার তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সেনা বাহিনী ইউনুস সরকারকে হটিয়ে দেশের ভার নিজেদের হাতে নিতে পারে। সেই কারণে ঢাকার লাগোয়া ক্যান্টনম্যান্টগুলি থেকে সেনাবাহিনীকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এই তৎপরতা এমন সময় শুরু হয়েছে যখন শেখ হাসিনাকে সরানো ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তীব্র বিরোধ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লিগকে নিয়ে। সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান আওয়ামী লিগকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। ছাত্র নেতৃত্ব বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতায় নেমেছে।
শুক্রবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে। আওয়ামী লিগের একাংশকে সামনে রেখে ওই দলের পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে বলে এক ফেসবুক পোস্টে বিস্ফোরক দাবি করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ। বর্তমানে তিনি ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হয় ছাত্ররা। হাসনাত আবদুল্লাহ, নাহিদ ইসলামরা অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনী রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছে। আওয়ামী লিগকে ময়দানে ফেরাতে চাইছে সেনাবাহিনী।
শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া হাসনাতের দাবি ‘উত্তরপাড়া’ এবং ভারত আওয়ামী লিগকে ফেরাতে তৎপর। সেনা কর্তাদের একাংশ আমাকে বলেছেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লিগকে ভোটে দাঁড়াতে দেওয়া উচিত। অবাধ নির্বাচনের জন্য এটা দরকার।
হাসনাতের এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে তুমুল শোরগোল শুরু হয়। সে দেশে উত্তরপাড়া বলতে ক্যান্টনমেন্ট বা সেনা সদরকে বোঝায়। সেনা সদর হাসনাতের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে হাসনাতের বক্তব্য নিয়ে তাদের কোনও মতামত নেই।
হাসনাত লিখেছেন, সেনা কর্তাদের একাংশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাব দেয় নতুন আওয়ামী লিগকে মেনে নিতে। তিনি জানান, দেশে থাকা আওয়ামী লিগের নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী এবং শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন আওয়ামী লিগের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে তাঁকে জানানো হয়। তিনি অবশ্য সেনার প্রস্তাবে রাজি হননি। সাবের হোসেন চৌধুরী সাবেক মন্ত্রী এবং শিরীন শারমিন জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকার।
হাসনাত দাবি করেছেন, সেনা কর্তারা তাঁকে বলেছেন, আওয়ামী লিগের ওই নেতারা আওয়ামী লিগ থেকে বেরিয়ে আসবেন৷ তাঁরা শেখ হাসিনার জমানার নিন্দা করবেন৷ তাঁরা হাসিনা জমানার অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবেন। তাঁরা শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে রাজনীতি করবেন।
রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, হাসনাতের কথা সত্যি হয়ে থাকলে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিনদের বিষয়ে শেখ হাসিনা কি ওয়াকিবহাল? আওয়ামী লিগ কি ভেঙে যাচ্ছে? এই ব্যাপারে আওয়ামী লিগ নেতারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যোগাযোগ করা হলে তাঁদের অনেকেই বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশে কোনও নেতাকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে তাঁদের জানা নেই। হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করে কোনও কোনও নেতা বলেছেন, ইউনুস সরকারের তরফে আওয়ামী লিগকে ভাঙার চেষ্টা আগেও হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে যে সভাগুলি করছেন সেগুলিতে লাখ লাখ কর্মী-সমর্থকেরা যোগ দিচ্ছেন। কেউ দল ভাঙার চেষ্টা করলেও কর্মী সমর্থকদের পাশে পাবে না৷
হাসনাত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের নামও করেছেন। ঘটনাচক্রে তিন নেতাই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। ফজলে নুর তাপস আওয়ামী লিগ নেত্রীর আত্মীয় এবং যুব লিগের সভাপতি। শিরীন শারমিন চৌধুরীকে হাসিনা প্রকাশ্যে ‘আমার মেয়ে’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। সাবের হোসেন চৌধুরীও নেত্রীর ঘনিষ্ঠ। স্বভাবতই হাসনাত আবদুল্লাহ সত্য বলছেন কিনা সেই প্রশ্নও রাজনৈতিক মহলে আছে।
হাসনাতের পোস্টের আগে আর এক ছাত্র নেতা তথা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ভাল বা মন্দ, কোনও আওয়ামী লিগকেই রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না৷ নাহিদের বক্তব্য, আওয়ামী লিগের ভাল মানুষেরা অন্য কোনও দলে মিশে যান। আওয়ামী লিগের ঝাণ্ডা হাতে আর রাজনীতি করা যাবে না। নতুন করে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন নাহিদ।