দেশের সময়: একদিকে রাজ্যজুড়ে এসইউসিআই (SUCI)-এর ধর্মঘট কর্মসূচি। অন্যদিকে বিজেপির শ্যামবাজারে ধরনার আগেই আরজি কর হাসপাতালের পুলিশ মোতায়েন করা হল বাড়তি। অন্যদিনের থেকে কিছুটা অতিরিক্ত বাহিনী প্রস্তুত করা হয়েছে আরজি কর হাসপাতালের বাইরে। সেখানে আইপিএস পদমর্যাদা অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদা অফিসার সকলেই নিরাপত্তার নজরদারি চালাবেন।
১৪ অগস্ট আরজি করে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার ১২ ঘণ্টা বাংলা বনধের ডাক দিয়েছে এসইউসিআই। সকাল থেকেই জেলায় জেলায় দলীয় কর্মী সমর্থকরা পথে নেমেছেন।
অন্যদিকে, আরজি কর কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে প্রতিবাদে সরব বিজেপি। দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে প্রতীকী অবরোধের ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত মোমবাতি মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি-র মহিলা মোর্চা। এদিন দুপুর ২টোয় শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা রোকো-র ডাক দিয়েছে বিজেপি।
এদিন সাধারণ ধর্মঘটে বিশেষ প্রভাব পড়ল না হাওড়া স্টেশনের পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব শাখার ট্রেন চলাচলে। রেল সূত্রে খবর, দুটো শাখাতেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে বা স্টেশনে পৌঁছেছে। কোথাও কোনও রেল অবরোধের খবর নেই। হাওড়া স্টেশনের বাইরেও অন্যদিনের মতো ট্যাক্সি পরিষেবা এবং বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
SUCI এর বাংলা বনধ-এর সমর্থনে রাজ্যের বারাসাতের বিভিন্ন অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে একটি মিছিল এসে বারাসাত চাঁপাডালি মোড় অবরোধ করে। রাত দখলের লড়াইয়ে দুষ্কৃতীরা আর জি কর মেডিকেল কলেজে যে তাণ্ডব চলেছে তার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে তাঁরা। তবে গোটা জেলায় অনেকটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি। খোলা স্কুল-কলেজ। বনধের মধ্য দিয়েই পড়ুয়া, অফিস যাত্রীরা পৌঁছচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। বারাসত থেকে দিঘা যাওয়ার একটি বাসে অশান্তির আশঙ্কায় চালককে হেলমেট পরে বাস চালাতে দেখা যায়।
আজ সকাল থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে মিশ্র প্রভাব বনধের। তবে প্রভাব পড়েছে রেলপথে। ভোর থেকেই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ডায়মন্ড হারবার ও লক্ষ্মীকান্তপুরে রেললাইনে কলাপাতা ফেলায় ট্রেন পরিষেবা বিঘ্নিত হয়।
ডায়মন্ড হারবার শাখায় ধামুয়া স্টেশনের ঠিক আগে এদিন অবরোধের ঘটনা ঘটে। ধর্মঘটীরা সকাল ৭টা নাগাদ রেললাইনের উপর বসে পড়েন। হাতে প্ল্যাকার্ড, লাইনে বসেই স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের একটাই দাবি, ডাক্তার ছাত্রীর উপর অমানবিক হামলার ঘটনায় যারা প্রকৃত দোষী তাদের শাস্তি দিতে হবে। এই অবরোধের জেরে ঘণ্টাখানেক এই শাখায় রেল চলাচল ব্যাহত হয় বলে খবর। এরপর পুলিশ এসে ধর্মঘটীদের সরিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিষেবা।
অন্যদিকে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুরেও রেললাইনে কলাপাতা ফেলে চলে বিক্ষোভ। মথুরাপুর, কুলপি, মগরাহাট এলাকায়ও বনধের ভাল সাড়া পড়েছে বলে খবর। সকাল থেকেই রায়দিঘি বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লক এসইউসিআই নেতৃত্ব, কর্মী সমর্থকরা। রায়দিঘি বাস স্ট্যান্ড, কলেজ মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ধর্মঘটীরা। পথ অবরোধ করে বিক্ষোভের জেরে রায়দিঘি-ডায়মন্ড হারবার রোডে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। রায়দিঘি বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়রামহল পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রচুর বাস ট্রেকার ও অটো। ধর্মঘটকে ঘিরে যাতে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে রাস্তাতে মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
কোচবিহারে সকাল সকালই অশান্তি। এখানে পুলিশ এসইউসিআই-এর মিছিল আটকালে বাম কর্মীদের সঙ্গে তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কোচবিহারের হাসপাতাল চৌপথি থেকে বনধ সমর্থকদের গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। দিনহাটায়ও বনধ সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের অশান্তি বাধে। ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও পথে নেমেছে এসইউসিআই-এর কর্মী সমর্থকরা। সকাল থেকেই শহরে মিছিল, পথ আটকে বিক্ষোভ চলছে। মহাত্মা গান্ধী রোড, এনএস রোডে অবস্থান বিক্ষোভ, মিছিল। যানচলাচল ব্যাহত হয়। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বালুরঘাট-সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়ও মিশ্র প্রভাব পড়েছে। ফাঁকা বালুরঘাট পুরসভার বাসস্ট্যান্ড। যদিও সকাল থেকে সরকারি বাস চলাচল করছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শুক্রবার সকালে বনধ সমর্থনকারীরা মেদিনীপুর কালেক্টরেট অফিসের সামনে বাস আটকাতে যায়। বাস চালককে মারধর করে বাস থেকে নামানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দেয় পুলিশ। এরপরই পুলিশকে ঘিরে ধরে বনধ সমর্থনকারীরা। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এরপরই পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয় বনধ সমর্থনকারীদের। আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় বনধ সমর্থনকারীদের। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
SUCI এর ডাকা বনধকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় কোচবিহার শহরের সাগরদিঘি চত্বরে। সকাল ১০ টা নাগাদ বনধ সমর্থকেরা মিছিল করলে মিছিল আটকে দেওয়া হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কোচবিহার জেলা আদালতের সামনে। সেখান থেকে বনধ সমর্থকদের আটক করে পুলিশ। স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে থেকে মহিলা বনধ সমর্থকদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। SUCI নেতা নেপাল মিত্র বলেন, ‘পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করছে না। অথচ আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর হামলা করছে।’
জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় প্রশাসনও। বনধ ব্যর্থ করার ব্যাপারে আগেই কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।