দিনভর বিক্ষোভের আঁচ স্তিমিত হল না রাতেও। রাত বাড়ার পর জমায়েত শুরু হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতর তথা আচার্য সদনের বাইরে। বুধবার রাত ১০ টার কিছু আগে থেকে শুরু হয়েছে সেই জমায়েত। কয়েকজন চাকরিহারা শিক্ষক উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। তাঁরা আচার্য সদনের বাইরেই রাত কাটাবেন বলে জানিয়েছেন।
জমায়েত হওয়ার পর সেখানে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশের তরফে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা হয়। পরে আচার্য সদনের বাইরে বিএনএস-এর ১৬৩ ধারার নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাতেও পিছপা হতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। রাতেই সেখানে পৌঁছলেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
১৬৩ ধারার নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়ার পরও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সেখানেই রাত কাটাবেন। এক আন্দোলনকারী বলেন, “আমাদের একটাই দাবি, ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ করা হোক। এই অফিসের সামনেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
এই খবর শোনার পরই সেখানে যান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের বলেন, “চোয়াল শক্ত করে লড়াই করে যান। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।” কোনও অঘটন ঘটেছে, খবর পেলেই ছুটে যাবেন তিনি, এ কথা জানিয়ে এসেছেন উপস্থিত আন্দোলনকারীদের।
এদিকে, ক্রমশ আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়ছে চাকরিহারাদের। পরপর দু’দিন কলকাতার রাজপথে মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ এবং শুক্রবার সল্টলেকের এসএসসি ভবন অভিযান করবেন চাকরিহারা। তবে দু’দিনের দু’টি মিছিলের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশি অনুমতি নেননি তাঁরা।
বুধবার সন্ধ্যায় শহিদ মিনারের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চাকরিহারারা। তাঁদের এক প্রতিনিধি মেহবুব মণ্ডল জানান, বৃহস্পতি ও শুক্রবার পরপর দু’দিন দু’টি কর্মসূচি রয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে জমায়েত। সেখান থেকে মিছিল যাবে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত। শুক্রবার এসএসসি ভবন অভিযান। সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষকে মিছিলে পা মেলানোর আহ্বান জানিয়েছেন চাকরিহারারা। তবে কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই মিছিলে যোগ দিক, তা চাইছেন না তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল, সুপ্রিম কোর্টের এক আঁচড়ে চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। তারপর থেকেই রাজ্যজুড়ে হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। গত ৭ এপ্রিল, নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সমাবেশে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। চাকরিহারা শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ডিআই অফিস অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন চাকরিহারারা। আর তা ঘিরেই উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করা হয় তা স্বীকার করে নেন নগরপাল। তবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, পুলিশের উপর হামলা-সহ একাধিক অভিযোগে চাকরিহারাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন তিনি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের তরফে সম্প্রতি X হ্যান্ডেলে পোস্টও করা হয়। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিহারারা।