প্রাক্তন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট যখন ছাত্র আন্দোলনের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁকে এবং তাঁর বোন রেহানাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি অডিওতে এই অভিযোগ করেছেন শেখ হাসিনা।
হাসিনা বলেন, “রেহানা আর আমি, মাত্র ২০-২৫ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। এটি প্রথমবার নয়, এর আগেও আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা জানান, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া, কোটালিপাড়ার বোমা বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া বা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনার পরও আমি বেঁচে রয়েছি—এগুলো আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহর কৃপায় আমি এখনও জীবিত, কারণ তিনি চান আমি আরও কিছু কাজ করি।”
ছাত্র-আন্দোলনের চাপে পড়ে পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই ছাত্র-আন্দোলনকে বিরোধী দল মদত দিয়েছিল। রাজধানী ঢাকা দখল করতে আসা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ৬০০-র বেশি মানুষ নিহত হন, আহত হন আরও শতাধিক।
ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় স্মৃতিচারণ করে হাসিনা বলেন, “আমি খুব কষ্টে আছি। আমি আমার দেশ ছাড়া, বাড়ি ছাড়া, আমার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।”
৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বিতীয় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি “গুমের ঘটনার” সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, দেশের নিরাপত্তা কর্মীরা ৫০০-র বেশি মানুষকে গুম করেছে বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে অনেকে গোপন কারাগারে বছরের পর বছর বন্দি ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকার ভারতকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার একটি ‘নোট ভারবাল’-এর মাধ্যমে এই অনুরোধ জানায়।
শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া যেন এক অলৌকিক ঘটনা। তবে তাঁর মতে, এই জীবনকে কাজে লাগিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা।