দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিজেপি-র উপর আরও চাপ বাড়ালেন মতুয়া সম্প্রদায়ের সাংসদ এবং বিধায়কেরা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপি-র চার মতুয়া বিধায়ক। সেই বৈঠকের পর সংগঠনে বেশ কিছু রদবদল দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
বিজেপি বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছিলেন পাঁচ মতুয়া বিধায়ক। জেলা সভাপতি নির্বাচন এবং রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধিদের গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ তুলে গ্রুপ ছেড়েছিলেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী এবং কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। সোমবার বিজেপি-র সমস্ত হোয়াসটঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান শান্তনু। এর পরই মতুয়া জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে চাপ বা়ড়ে বিজেপি-র। আগামিদিনের রণকৌশল তৈরি করতে মঙ্গলের সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডেকেছিলেন শান্তনু ঠাকুর ৷
সেই পরিস্থিতিতেই বৈঠকে যোগ দেন অশোক, সুব্রত, অসীম এবং মুকুটমণি। আমন্ত্রণ থাকলেও বৈঠকে ছিলেন না অম্বিকা। বৈঠক সেরে বেরনোর পর সাংগঠনিক রদবদলের জন্য বেশ কয়েক দফা দাবি তুলেছেন বিজেপি-র মতুয়া জনপ্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের দাবির কথা জানান। তিনি বলেছেন, ‘‘মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এক জনকে বিজেপি-র সহ-সভাপতি পদে নিয়োগ করতে হবে। এবং রাজ্যে বিজেপি-র এসসি মোর্চার বিভিন্ন পদে কাকে রাখা হবে তা শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’’ বনগাঁ এবং নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পরিবর্তনের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। নবদ্বীপ জোনের অবজার্ভার পরিবর্তনের কথাও উঠে এসেছিল মুকুটমণির গলায়। যদিও এই দাবি আদায়ের কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
যদিও সাংগঠনিক রদবদলের একাধিক দাবি রাখলেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাঁরা ‘যুদ্ধ-ঘোষণা’ করেননি বলে দাবি করেছেন ওই চার বিধায়ক। এ নিয়ে ওই বিধায়কেরা জানিয়েছেন, ‘ঠাকুরমশাই’ যা করছেন তা বিজেপি-র ভাল চিন্তা করেই করছেন।
এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে মতুয়াদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন অসীম সরকার। তিনি বলেন,”পশ্চিমবঙ্গে ৮৩টি বিধানসভার আসন, যেগুলি মতুয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত। জয়-পরাজয়ও তাদের উপরেই নির্ভর করে। রাজ্য কমিটি বা জেলা কমিটি তৈরি করতে গেলে মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভাগুলির জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও আলোচনা না হওয়ার কারণেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয় দল নেতাদের মধ্যে। এমতাবস্থায় ঠাকুরমশাই বলেছেন তাই আমি প্রথমে গ্রুপ ছেড়েছিলাম। খুব দ্রুত অবস্থানও পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
যদিও বৈঠকের পরে তাদের দলত্যাগ নিয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক । এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে খানিক ঘুরিয়েই তিনি উত্তর দেন,”আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যদি বলতে পারেন যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া ভাল। সেখানে আমরা তো আর লাথি দিতে চাইনি। হয়তো কিছু মর্যাদা দাবি করা হয়েছে। এখানে দল ছাড়ার কোনও প্রশ্ন ওঠে বলে আমি জানি না।”
এদিকে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটিতে ও সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়েন মতুয়া সম্প্রদায়ের একগুচ্ছ প্রতিনিধি। পরবর্তীতে ফের তাদের গ্রুপে প্রত্যাবর্তনও দেখা যায়। জে পি নাড্ডার ইঙ্গিতেই এই প্রত্যাবর্তন বলে জানা যায়। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েও হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার পরে আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। ওই বৈঠকে সমস্ত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পাওয়ার পরই আমরা ফের গ্রুপে ঢুকি।” যদিও এই চাপানউতরের মাঝে শান্তুন ঠাকুরের আগামীর রণকৌশল কী হয় এখন সেটাই দেখার।
বৈঠক শেষে মুকুটমণি অধিকারী জানান, কয়েকটি দাবি নিয়ে এদিনের এই বৈঠক হয়েছে। দাবিগুলি একনজরে:
ঠাকুরবাড়িতে শেষ রুদ্ধদ্বার বৈঠক, শান্তনু ঠাকুরের কাছে কয়েকদফা দাবি মতুয়া বিধায়কদের –
1.বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পরিবর্তন ৷
2.নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পরিবর্তন ৷
3.নবদ্বীপ জোনের পর্যবেক্ষক পরিবর্তন ৷
4.রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি নিয়োগ করতে হবে মতুয়া সম্প্রদায় ভুক্ত একজনকে ।
মতুয়া বিধায়কদের এই দাবিগুলি বিজেপির কাছে রাখবেন শান্তনু ঠাকুর। দাবি না মানা হলে আগামী দিনে তারা কোন পথে হাঁটবেন তা ঠিক করবেন শান্তনু ঠাকুর।