শম্পা গুহ মজুমদার , কলকাতা : মুম্বইয়ের যৌনকর্মীদের জন্য আলিয়া ভট্টের লড়াকু ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ চরিত্রের সঙ্গে এখনও পরিচয় ঘটেনি সোনাগাছির অনেক মেয়েরই। তবে গাঙ্গুবাঈয়ের মতোই অধিকার বুঝে নেওয়ার প্রখর দাবির জেদ বিন্দুমাত্র কমাতে চান না যৌনকর্মীরা। সে কথা বোঝাতেই-
সোমবার,নীলমনি মিত্র স্ট্রিটে আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী অধিকার দিবসে তাই ফের শ্রমিকের অধিকার-সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে অনলাইনে সরব হল ”আমরা পদাতিক”, সোসাইটি ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকশন এবং ঊষা কোঅপারেটিভের সদস্যরা ।

৩রা মার্চ দিনটা আন্তর্জাতিক যৌন কর্মী অধিকার দিবস হিসাবে পালিত হয়। নীলমনি মিত্র স্ট্রিটে ”আমরা পদাতিক”, সোসাইটি ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকশন এবং ঊষা কোঅপারেটিভের সহযোগিতায় ৩রা মার্চ একটি বিশেষ অনলাইন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী অধিকার দিবস উদযাপন হলো। এই বছর, থিম হল: “অপরাধীকরণ এবং মর্যাদা: যৌনকর্মীদের জন্য মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ।”
এই অনুষ্ঠানটি যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলনের দুই অগ্রণী ব্যক্তিত্বকে উৎসর্গ করা হলো : ডঃ স্মারজিৎ জানা, যিনি যৌনকর্মী আন্দোলনের একজন দূরদর্শী এবং পথিকৃৎ। মিস কাজল বোস, একজন প্রবীণ নেত্রী এবং এই লক্ষ্যের জন্য অক্লান্ত কর্মী। ২০ জন যৌনকর্মী কে সম্মানিত করা হলো যাদের অমূল্য অবদান আন্দোলনকে শক্তিশালী করেছে এবং পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০২২ সালে, ভারতের মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট যৌনকর্মীদের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: নির্যাতন থেকে সুরক্ষা -পুলিশকে যৌন হয়রানির অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হবে এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

যৌন কর্মীদের সন্তানরা নাচ গানের মাধ্যমে তাদের প্রতিভার পরিচয় দিলেন। বয়স্কা দিদিরা তাদের সংগ্রাম ও বঞ্চনার কাহিনী শোনালেন। সমাজ আজকে তাদের খানিকটা স্বীকৃতি দিলেও এই লড়াই অনেক র্দীঘ। যৌনকর্মীদের পাশে জন্মলগ্ন থেকেই ছিল দুর্বার মহিলা সংঘটন। সমিতির পরিচালনার কাজে যুক্ত করার জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের মধ্যে থেকেই তুলে আনা হচ্ছে প্রতিনিধি। এই সংগঠনের জন্য আজ কিছুটা হলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছেন যৌনকর্মীরা। কিছুটা হলেও আটকানো গেছে বহিরাগতদের অন্যায় অত্যাচার। যাতে কোনওভাবেই যৌনকর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা না হয় সেই দিকে রাখা হচ্ছে কড়া নজর। যেটুকু সমস্যা আছে, আশা করা যায় আগামী দিনে সমাধান হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, যৌনকর্মীরা এই সমাজের অংশ।
বহু বাধা পেরিয়ে ২০০১ সালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ‘মিলেনিয়াম মিলনমেলা’র আয়োজন করার সরকারি অনুমতি মিলেছিল সেই বছরের ২ মার্চ, মধ্যরাতে। তাই তার পর থেকে ৩ মার্চ দিনটি ‘যৌনকর্মী অধিকার দিবস’ হিসেবে পালন করেন যৌনকর্মীরা।
সমাজে আর পাঁচজনের মতো তাঁদেরও স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার আছে। যৌন কর্মীদের অধিকারের লড়াইতে প্রথম থেকেই অগ্রণী ভূমিকাতে আছেন মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়। যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে তিনি ঘুরে বেড়ান সারা রাজ্যে। মহিলাদের কথা শোনেন, চেষ্টা করেন সমস্যা সমাধানের। আগে তাদের সন্তানদের কোনো স্কুলে ভর্তি করা যেত না। এখন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা পাল্টালেও অনেক পথচলা বাকি। সমাজের মানসিকতার উন্মেষ ঘটুক এবং যৌন কর্মীদের মানবাধিকারের লড়াইতে সাধারণ মানুষও এগিয়ে আসুন।