দেশের সময়,কলকাতা: রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য। তদন্তে ইডি জানতে পেরেছে শঙ্কর আঢ্যর সংস্থা ‘আঢ্য ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রবিবার এই প্রসঙ্গেই মুখ খুললেন শঙ্কর। বিপুল টাকার বিষয়ে দল জানে কি না তার উত্তরও দিলেন তিনি।
আপতত, ইডি হেফাজতে রয়েছেন শঙ্কর। রবিবার তাঁকে বিআরসিং হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তাঁর অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকার হদিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের ব্যবসায় এটা হয়ে থাকে।” অর্থাৎ তৃণমূল নেতার দাবি, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ব্যবসায়ে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েই থাকে। যদিও, এই বিষয়ে দল কিছু জানে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন শঙ্কর।
‘নিজের মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও ভাইয়ের নামে বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা খুলেছিলেন শঙ্কর আঢ্য। রেশন দুর্নীতির তদন্তে ৯৫টি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার হদিশ মিলেছে। ৬টি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের নামে, বাকি সংস্থা ছিল ভুয়ো নামে’, আদালতে জমা দেওয়া তালিকায় দাবি ইডির ।
ইডি-র দাবি, ধান-চাল-গম কেনাবেচা নয়, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা কোন পথে, কীভাবে ঘুরিয়ে সাদা করা হবে, সেই পরিকল্পনায় শঙ্কর আঢ্যর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিটে শঙ্কর আঢ্যর কারেন্সি লেনদেনের সংস্থা, আঢ্য ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস। ফুল ফ্লেজ মানি চেঞ্জার হিসেবে কাজ করে এই কোম্পানি। ইডি-র দাবি, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা দিয়ে তৃণমূল নেতার এই কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরিয়ে কেনা হয়েছে সোনা, বিদেশি মুদ্রা। হাওয়ালার মাধ্যমে বাইরে টাকা পাঠানো হয়েছে। নইডি-র দাবি, রেশন দুর্নীতি তদন্তে উঠে আসে শঙ্কর আঢ্যর নাম। তারপরই তার বিভিন্ন আস্তানায় তল্লাশি ও শেষমেষ গ্রেফতার করা হয়।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির স্ক্যানারে শঙ্করের পরিবার। ইডি-র তলবে শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন ধৃত তৃণমূল নেতার মা, মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী।
কেন্দ্রীয় এজেন্সির অনুমান, শুধু নিজে নন, সপরিবারে রেশন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। আর সেই কারণে তাঁর পরিবারকেও তলব করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় এজেন্সির (Central Agency) অনুমান, সপরিবারে রেশন দুর্নীতিতে জড়িত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য (Shankar Adhya)। এবিষয়ে শঙ্কর আঢ্যকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া তদন্তের স্বার্থে এজেন্সি ডাকতেই পারে।
কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে দাবি, শঙ্কর আঢ্য শুধু নিজে নন। মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, এমনকি শ্যালককে ডিরেক্টর বানিয়ে বিভিন্ন ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন তিনি। ইডি সূত্রে দাবি, যে সব মুদ্রা বিনিময় বা ফোরেক্স সংস্থার মাধ্যমে দুবাই ও বাংলাদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে, তার মধ্যে একাধিক সংস্থা রয়েছে শঙ্কর আঢ্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, শঙ্কর আঢ্যর নিজের নামে যেমন রয়েছে এস আর আঢ্য ফিনান্স প্রাইভেট লিমিটেড, তেমনই তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যর নামে রয়েছে অর্পণ ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড।
শঙ্কর আঢ্যর পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও এস আর আঢ্য ফিনান্স প্রাইভেট লিমিটেডের অংশীদার। শঙ্কর আঢ্যর ছেলে শুভ আঢ্যর নামে রয়েছে শঙ্কর ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড। মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্যর নামে রয়েছে অর্পণ ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড। ভাই মলয় আঢ্যর নামে রয়েছে আঢ্য ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড। মা শিবানী আঢ্যর নামে রয়েছে আঢ্য ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড। শ্যালক অমিত ঘোষের নামে রয়েছে সঙ্কর ফোরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড। ইডি সূত্রে দাবি, এভাবেই নিজের মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও ভাইয়ের নামে বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা খুলে বিদেশে টাকা পাচারের কারবার ফেঁদে বসেছিলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সহ সভাপতি শঙ্কর আঢ্য।
প্রসঙ্গত,ইডি-র তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, আঢ্য ফরেক্সের খাতায় কলমে ডিরেক্টর হচ্ছেন দু’জন। মলয় আঢ্য যিনি শঙ্করের ভাই, ও বছর আশির মা শিবানি আঢ্য। তবে সংস্থার কর্মীদের বয়ান অনুযায়ী, এই কোম্পানি চালান শঙ্কর আঢ্যই। ইডি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই টাকার উৎস কী, তা নিয়ে কিছু স্পষ্ট জানাতে পারেননি শঙ্কর আঢ্য। FEMA আইন অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা কনভার্ট করলে, পাসপোর্টের ডিটেল বা ভ্রমণকারীর ডিটেইল জমা করতে হয়। অভিযোগ, শঙ্কর আঢ্য আইনের তোয়াক্কা না করে এই সব কিছু না উল্লেখ করেই বিদেশি মুদ্রায় পরিবর্তন করেন।
বস্তুত, বালুর বিরুদ্ধে ‘রেশন দুর্নীতি’র তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই ফিরে ফিরে আসছে বাংলাদেশ-যোগের কথা। এমনকি, রেশন দুর্নীতির টাকা জলপথে না কি স্থলপথে গিয়েছে, সে তথ্যও সংগ্রহ করেছে ইডি। ইডি সূত্রে এ-ও খবর, শঙ্করের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাওয়া সব অর্থই যে রেশন দুর্নীতির এমনটা নয়। সেই মোটা অঙ্কের অর্থের উৎস জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা।