যিনি নাটকের মঞ্চে সবার বাকরুদ্ধ করে রাখেন অভিনয় দক্ষতায়, ছোটপর্দা-বড়পর্দাতেও চরিত্রদের ফুটিয়ে তোলেন নিজের ছন্দে, এবার তাঁর কাজ গল্প বলার। তবে ক্যামেরার পিছনে। এবার চৈতি ঘোষালের নির্দেশনায় আসছে নতুন ছবি নেভার মাইন্ড। অভিনয়ে তাঁর ছেলে অমর্ত্য। দোসর টলি ক্যুইন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
সেই ছবির কাজ কতদূর এগোল, যোগ দিলেন আর কে কে !সেই গল্প লিখেছেন …
অমর্ত্য চৈতির পুত্র, এই কথা অজানা নয় কারও। তবে এটিই অমর্ত্যর প্রথম ছবি নয়। বড়পর্দায় এর আগেও কাজ করেছেন অমর্ত্য। তবে এবার মায়ের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে অমর্ত্যকে।
আর মা-ছেলের এই কাজের দোসর ঋতুপর্ণা। এই ছবির গল্প এক নারীকে ঘিরে, যে তাঁর অতীতের একটি বিষয় খুঁজতে খুঁজতে হাজির হয় একটি বার বা পানশালায়।
আর সেখানেই তাঁর দেখা হয় একজন অল্পবয়সী সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে। সে বারে গান গায়। এই ছবিতে কলকাতার কিছু মানুষদের গল্প তুলে ধরা হবে, যাদের পেশা আলাদা, জীবনের দিকগুলো আলাদা। তাঁদের নিয়েই এই গল্প ‘নেভার মাইন্ড’। দেখুন ভিডিও
এই ছবিতে পার্ক স্ট্রিটের জীবনযাত্রা, ধরণ, তুলে ধরা হবে সব কিছুই। গল্পের শেষ হবে একটি মানবিক বার্তা দিয়ে। এই ছবির গল্প লিখেছেন সম্রাট
চিত্রনাট্য লিখেছেন সম্রাট ও মিতালি ঘোষাল রুদ্র। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে দেখা যাবে গোপী ভগতকে। ছবির আবহসঙ্গীত ও গানের দায়িত্ব রয়েছে রূপম ইসলাম -এর কাঁধে।
নতুন দায়িত্বে এসে চৈতি ঘোষাল কি বলেছেন ? অভিনেত্রীর কথায়, ” অভিনয় আর পরিচালনা দুটো আলাদা ব্যাপার। একজন অভিনেতা শুধু তার চরিত্র এবং চিত্রনাট্যের দিকে মন দেয় কিন্তু পরিচালকের দায়িত্ব অনেক গুণ বেশি থাকে তাকে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হয়। শুধুমাত্র অভিনয়ের দিকেই নয়, ক্যামেরা, লাইট, এডিটিং- পুরো টেকনিক্যাল বিষয়গুলো খুঁটিয়ে দেখতে হয়। তাই পরিচালনা হলো একটা লার্জার ফ্রেম। একজন পরিচালকের দায়িত্ব অনেক গুণ বেশি। এটা অনেকটা সাদা কালোর তফাৎ-এর মতো। ভালো অভিনয় ।
পরিচালক বলেন, “ঋতুপর্ণা অভিনয়ে রাজী না হলে হয়তো এই মুহূর্তে এই ছবিটি বানানো হতো না। এমন একজন বার সিঙ্গারের চরিত্র যেটা ঋতু ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারি নি।” এই ছবিতে একদিকে যেমন তাঁর পুত্র অভিনয় করছেন তেমন অন্যদিকে ছবির কাহিনীকার ভাই সম্রাট এবং চিত্রনাট্য করেছেন বোন মিতালী। তবে সম্রাট এবং অমর্ত্যেরও চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রে একটা বিশেষ ভূমিকা আছে । আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি, এই কাজটাতে একটা আলাদা আনন্দ খুঁজে পাই। ছোটপর্দা বা বড়পর্দা যে কোন ক্ষেত্রের অভিনয় আমায় সমানভাবে টানে। আর থিয়েটারের অভিনয় থেকে রসদ খুঁজে পাই।”
গোটা একদিনের নানা ঘটনা দেখা যাবে চৈতি ঘোষালের এই ছবিতে। একদম শহুরে প্রেক্ষাপটে ছবিটি তৈরি হচ্ছে। এখানে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সামাজিক পটভুমিতে তাদের সম্পর্ক দেখানো হবে। কখনও দুই ভাইয়ের সমস্যা, কখনও অফিসের সহকর্মীদের টানাপোড়েন আবার কখনও নারী- পুরুষের এক বিশেষ সম্পর্কের রসায়ন – এই ভাবে কাহিনী সারাদিন নানা ঘটনার মধ্যে ঘুরে বেড়াবে। তবে গল্পের সমাপ্তি ঘটবে পার্ক স্ট্রিটের নেভার মাইন্ড বারে এসে। নেভার মাইন্ড কলকাতার একটি বার। কাহিনীর নায়িকা তৃণা বিদেশ থেকে কিছু খুঁজতে কলকাতায় আসে। সে একজন বার সিঙ্গার। অন্যদিকে জুডও বার সিঙ্গার। তাদের দেখা হয় এই বারে, পরিচালক এরপর আর কাহিনী ভাঙতে চান নি।
তৃণার চরিত্রটিতে ঋতুপর্ণা অভিনয় করছেন।ঋতুপর্ণার কথায় ” বার সিঙ্গারদের নিয়ে এ ধরনের ছবি আগে বিশেষ একটা হয় নি, একদম অন্যরকম একটা ছবি তৈরি হচ্ছে। আমার কাছে চরিত্রটা একেবারেই আলাদা লেগেছে। কারণ এই তৃণার চরিত্রের অনেকগুলো শেড আছে। তাই চিত্রনাট্য শুনেই রাজী হয়ে যাই।” উচ্ছ্বসিত অভিনেত্রী জানান।
অন্য দিকে জুড চরিত্রটি করতে পেরে দারুণ খুশি অমর্ত্য। তরুণ অভিনেতার কথায়,” বাস্তবে আমি গান ভালোবাসি এবং গিটার বাজিয়ে নিজের তৈরি গান গাই। এই চরিত্রটিও একজন সঙ্গীতপ্রেমীর, তাই চরিত্রের মধ্যে যেন নিজেকেই খুঁজে পাই।”
‘নেভার মাইন্ড’ ছবির সঙ্গীতেরও একটা বিশেষ ভূমিকা থাকছে, ছবির সঙ্গীত পরিচালক রূপক ইসলাম। ক্যামেরায় বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক গোপী ভগত। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন সুজয় প্রসাদ, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, অনুষা বিশ্বনাথন প্রমুখ।
চৈতি ঘোষালের পরিচালনায় অমর্ত্য-ঋতুপর্ণার যুগলবন্দি অভিনয় দেখার অপেক্ষায় আপামর বাংলা ছবির দর্শক। এমএস প্রোডাকশন ৭৪ ব্যানারে মুক্তি পাবে এই নতুন ছবি।