শ্যামবাজার মোড়ের ধর্নামঞ্চ থেকে তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন ‘সরকারের আর একটা দুর্নীতি ঢাকার অভিপ্রায় ছিল’।সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাট করেছেন মমতা, অভিযুক্ত হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই, দাবি অভিজিতের। দেখুন ভিডিও
দেশের সময় কলকাতা: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়াল গেরুয়া শিবির।আরজি কর-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে পথে নেমেছে বিজেপি।
বৃহস্পতিতে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তুলকালাম পরিস্থিতির পর শুক্রবার রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে নামল তারা। রাজ্যের জায়গায় জায়গায় থানা ঘেরাও করে অবস্থান বিক্ষোভ করলেন দলের সাংসদ, বিধায়ক-সহ অন্য নেতা-কর্মীরা।
এদিন দেখা গেল কোথাও নেতৃত্ব দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কোথাও আবার দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বেহালায় থানায় দলের অবস্থান বিক্ষোভে ছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য শ্যামবাজার মোড়ের ধর্নামঞ্চে রয়েছেন। সেখানে রয়েছেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। সেই অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় সল্টলেকে। গ্রেফতারও হন শুভেন্দু এবং দলের রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য-সহ কয়েক জন। তার পরেই থানা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সেই মতো শুক্রবার নন্দীগ্রাম থানায় বিজেপির নেতা-কর্মী এই কর্মসূচি শুরু করতেই উত্তেজনা ছড়ায়। তাঁরা থানার গেট খুলতে যাওয়ায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে বিজেপি নেতারা থানায় গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।
উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতেও বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রের নেতৃত্বে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে বসিরহাট কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রেখা। হেরে গিয়েছেন। তার পর থেকে রাজনীতির ময়দানে তেমন সক্রিয়ও ছিলেন না। এ বার আরজি কর-কাণ্ডের আবহে পথে নামলেন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা নিয়ে সারা রাজ্যে আরও প্রতিবাদ হবে। যত দিন যাবে, তত প্রতিবাদ বাড়বে।’’ হুগলির চুঁচুড়া থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড় থেকে মিছিল করে তাঁরা চুঁচুড়া থানার সামনে হাজির হন। থানার গেট খুলে ভিতরে ঢোকারও চেষ্টা করেন। তা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। এর পর থানার সামনে বসে শুরু হয় বিক্ষোভ।
শ্যামবাজার মোড়ের ধর্নামঞ্চ থেকে তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন ‘সরকারের আর একটা দুর্নীতি ঢাকার অভিপ্রায় ছিল’।সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাট করেছেন মমতা, অভিযুক্ত হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই, দাবি অভিজিতের।
শ্যামবাজারে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং নির্যাতিতার বিচার চেয়ে বিজেপির পাঁচ দিনের ধরনা কর্মসূচির আজ তৃতীয় দিন। মূলত, নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণ, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা এবং আরজি কর হাসপাতালের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে শ্যামবাজার মেট্রোর ১ নম্বর গেট সংলগ্ন এই ধরনা কর্মসূচি চলছে বিজেপির। সেই ধরনা মঞ্চে আজ উপস্থিত ছিলেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আরজি কর কাণ্ডে পুলিশকে দিয়ে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই দাবি করেন তিনি।
তিনি এদিন আরও বলেন, “যে ঘটনার সময় ১২ থেকে ১৩ জন পুলিশ আধিকারিক হাসপাতালে উপস্থিত ছিল। পুলিশ যখন এই ঘটনা জানতে পেরেছে আর কখন এফআইআর হয়েছে এই সময়ের তফাতের ব্যাখ্যা আজ আর নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া এই ঘটনা ঘটতে পারে না। মৃতদেহ তড়িঘড়ি দাহ করে দেওয়া হয়। কারণ পুলিশ জানত যে, একবার দেহ আটকে দিলে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা যাবে না। তাই একদিকে মৃতার বাবা, মাকে আটকে রাখল পুলিশ ৷ অন্যদিকে তড়িঘড়ি দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হল।”
প্রাক্তন বিচারপতির আরও সংযোজন, “এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছাড়া হতে পারে না। তাই আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই মামলায় একজন অভিযুক্ত হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি সিবিআইয়ের কাছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন অপরাধী। উনি পুলিশকে দিয়ে সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করিয়েছেন না-হলে এত তাড়াতাড়ি মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হত না। পরে পুলিশ ভ্যান করে বলল, এই মৃতদেহ তাঁর বাবা, মা পুড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, “হাসপাতালে পৌঁছনোর পরেও তাঁদের নিজের মেয়ের মৃতদেহ তিন ঘণ্টা দেখতে দেওয়া হয়নি। তারাই বলেছেন ওখানকার পুলিশ তাঁদের হেনস্তা করেছে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে তাঁদের মনে অবস্থা কী ছিল সবাই জানে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি অভিযুক্ত হিসেবে দেখছি। তাই আমি সিবিআইয়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।”