দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত রবিবারের মধ্যে শেষ করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সিবিআইয়ের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ১৮ অগস্টের মধ্যে তদন্ত শেষ করে দোষীদের গ্রেফতার করতে না পারলে তিনি হেস্তনেস্ত করে ছাড়বেন।
এখন দেখার বিষয়, ওই পাশবিক ঘটনায় কলকাতা
পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করার পর নতুন আর কোনও গ্রেফতার হয়নি। সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ৬ দিন কেটে গেলেও দ্বিতীয় কাউকে গ্রেফতার করেনি।
এর পরই নতুন কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তা হল, সিবিআই তাঁর দেওয়া ডেডলাইন ফেল করার পর এবার কোন পথে হাঁটবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনা ঘটে গত ৮ অগস্ট। পরদিন ৯ অগস্ট অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তার পর পরই বড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, রবিবার তথা ১৮ অগস্টের মধ্যে পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করে তদন্ত শেষ করতে না পারলে তিনি তদন্তের ভার সিবিআইকে দিয়ে দেবেন। কিন্তু ততদিন অপেক্ষা না করে গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে তদন্তের ভার সিবিআইকে দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমি রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার মধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল। অথচ কলকাতা পুলিশ মঙ্গলবারের মধ্যেই ৩৪ জনকে জেরা করে ফেলেছিল। ১৬৪ জনের টিম তৈরি করা হয়েছিল, যাঁরা গত এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেছিলেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, আরজি কর কাণ্ডে সরকারের লুকনোর কিছু নেই। কিন্তু পর পর কয়েকটি ঘটনায় অনেকের মধ্যেই ভিন্ন ধারণা তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে বসানো বা হাসপাতালের দেওয়াল ভেঙে দেওয়া। মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাবও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা হয়েছে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেও চ্যালেঞ্জ হল এই ন্যারেটিভের অভিমুখটা ঘোরানো।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ডেডলাইন পেরিয়ে গেলেও শাসক দল বা সরকার সোমবার দুপুর পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কিছু বলেননি।
তবে এও ঘটনা যে সিবিআইয়ের উপরেও চাপ বাড়ছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সিবিআই অনেককেই জেরা করেছে। আরজি কর হাসপাতালেও কয়েক দফা গিয়েছে তদন্তের জন্য। কিন্তু সঞ্জয় রায় ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি।
অথচ মৃতের বাবা এদিনও একাধিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে, ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে তাঁদের সন্দেহ, কোনও একজনের কাজ এটা নয়। আরও কেউ থাকতে পারে। অপরাধীরা সবাই শাস্তি পেলে তবেই মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।
তবে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে লাগাতার জেরা করে চলেছে সিবিআই। চার দিন পর পর তাকে সিবিআই দফতরে ডাকা হয়েছে। সোমবারও জেরা চলছে সন্দীপের। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার ফের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। উচ্চ আদালতে সিবিআই কী প্রাথমিক রিপোর্ট দেয়, সেটাই এখন দেখার ।