দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই জোরালো ছিল গণধর্ষণের দাবি। নির্যাতিতার পরিবারের তরফ থেকে তো বটেই, জনমানসেও এই ধারণাই ছিল যে যেভাবে অত্যাচার করে মারা হয়েছে তরুণীকে, তা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। পুলিশও গণধর্ষণের সম্ভাবনা খারিজ করেনি প্রাথমিক ভাবে।
কিন্তু সিবিআই বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে একথা নিশ্চিত, যে গণধর্ষণ হয়নি আরজি করে। একমাত্র সঞ্জয় রায়ের শরীরের নমুনাই পাওয়া গেছে নিহত চিকিৎসকের শরীর থেকে। ফলে একথা মনে করা যায়, সেই রাতে সঞ্জয় একাই ধর্ষণ করে খুন করেছে তরুণী চিকিৎসককে।
কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ওই একজনই গ্রেফতার হয়েছে। কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়। তবে গোড়া থেকেই মৃতের পরিবার থেকে শুরু করে অনেকের ধারণা ও অভিযোগ হল, এই নারকীয় ঘটনা সঞ্জয় একা ঘটায়নি। যে অত্যাচার চালানো হয়েছে চিকিৎসক-পড়ুয়ার ওপর তা কোনও একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
তবে সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, গণধর্ষণের তত্ত্ব তেমন জোরালো ভাবে দাঁড় করানো যাচ্ছে না তদন্তে। এক সপ্তাহ আগে, ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনেও সিবিআইকে সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আরজি করে গণধর্ষণ হয়নি। সঞ্জয় রায়ই একাই ধর্ষণ ও খুন করেছে।
সূত্রের খবর, ডিএনএ রিপোর্টে একজনের যুক্ত থাকার প্রমাণই মিলেছে, একাধিক জনের নয়। তাই গণধর্ষণের যে সন্দেহ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন বলেই দাবি করা হয়েছিল সিবিআই-এর প্রাথমিক রিপোর্টে। তবে সেই রিপোর্টকে চূড়ান্ত বলে ধরা হয়নি। এর পরে সিবিআই ফরেন্সিক রিপোর্ট একাধিক এক্সপার্টদের দিয়ে যাচাই করিয়েছে। তার পরেই চার্জশিট গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে।
নিহত চিকিৎসক ছাত্রীর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর সারা শরীরে অনেকগুলি ছোট-বড় ক্ষত ছিল। সব মিলিয়ে তার সংখ্যা ১৬টি। মাথায়, গালে, নাকে, ঠোঁটের ভিতরে, বাম কাঁধে ও হাতে, বাম হাঁটুতে, এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। একই সঙ্গে দুই ফুসফুসে হেমারেজ অর্থাৎ রক্ত জমাট অবস্থায় পাওয়া গেছিল। বিস্তারিত রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, চিকিৎসকের এন্ডোসার্ভাইকাল ক্যানেলে গাঢ় সাদা তরল পাওয়া গিয়েছে, চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা যেতে পারে, হোয়াইট থিক ভিসিড লিক্যুইড। যার ওজন হতে পারে ১৫১ গ্রাম।
এরপরই কেউ কেউ সন্দেহ চারিয়ে দিতে চেয়েছিলেন যে, এটি গণধর্ষণের ঘটনা। কারণ ১৫১ গ্রাম সিমেন একজন স্বাভাবিক পুরুষের শরীর বেরোয় না। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে, ১৫১ গ্রাম সবটাই সিমেন নয়। তা হল এন্ডোসার্ভাইকাল ক্যানেলে থাকা হোয়াইট থিক ভিসিড লিক্যুইড।
কলকাতা পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে জানা গেছিল, সঞ্জয় সব অভিযোগ স্বীকার করেছে। তবে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই মনে করছে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। সঞ্জয় একা জড়িত নয়।
নির্যাতিতার বাবা-মাও এমনই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রথম থেকেই। তাঁদের দাবি, এটি গণধর্ষণের ঘটনা। অত্যাচার চালিয়ে ধর্ষণ করে মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় মেয়ের সহকর্মীরাও যুক্ত থাকতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন মৃতার বাবা-মা। মূলত যে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে তা দেখে কেউই বিশ্বাস করতে চাইছেন না যে এটি সঞ্জয় রায় একা করেছেন। যদিও সিবিআই রিপোর্ট এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনই শিকার করেছিল সে একাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিল রাগের বশে করে ফেলেছে। তরুণী চিৎকার করে লোক ডাকত, বারণ করা সত্ত্বেও চিৎকার করতে যাচ্ছিল তাই তাঁকে মেরেছিল সে। নির্বিকার স্বরে বলেছিল, ‘আমার ফাঁসি দিলে দিন’। অনুশোচনার কোনও লক্ষণ না দেখিয়ে পুরো নৃশংস অপরাধের বর্ণনাও নাকি দিয়েছিল সে।
এর পরে পলিগ্রাফ টেস্টে অবশ্য নানা বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছে সঞ্জয়। পাশাপাশি সঞ্জয়ের মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নে যা সামনে এসেছে, তাতেই চমকে উঠছেন তদন্তকারীরা। সঞ্জয় রায় যে বিকৃত যৌনতায় আক্রান্ত অর্থাৎ ‘সেক্সুয়ালি পারভার্টেড’, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলেই সিবিআই সূত্রের খবর।