দেশের সময় , কলকাতা: সাত সকালে বেলেঘাটায় টান টান উত্তেজনা!আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তে শহর এবং জেলা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একযোগে বেলেঘাটা থেকে টালা, কেষ্টপুর থেকে হাওড়া বেশ কয়েক জনের বাড়ি এবং অফিসে যায় সিবিআই। সঙ্গী কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এর আগে এ ভাবে একসঙ্গে রাজ্যের কয়েক জায়গায় হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। রবিবার সকালে সেই ছবিই ফিরে এল বাংলায়।
এদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ির বাইরে ডাকাডাকি শুরু করেছিলেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। বারংবার বেলও বাজানো হয়। কিন্তু দরজা খোলেনি। ভেতর থেকে কেউ সাড়াও দেয়নি। হাঁক ডাকে সারা পাড়া জেগে গেলেও আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে কারও সাড়া না মেলায় আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনাও শুরু করেছিলেন তদন্তকারীরা।
ঠিক তখনই, ঘড়ির কাঁটায় ৮টা বেজে ৩ মিনিটে বাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বাড়ির ভেতরে ঢুকেছেন! সূত্রের খবর, আরজি করের দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তেই এদিন সন্দীপবাবুর বাড়িতে হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
ঠিক তখনই, ঘড়ির কাঁটায় ৮টা বেজে ৩ মিনিটে বাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বাড়ির ভেতরে ঢুকেছেন! সূত্রের খবর, আরজি করের দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তেই এদিন সন্দীপবাবুর বাড়িতে হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
সন্দীপবাবুর পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতাল, কেষ্টপুরে আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের কর্তা দেবাশিস সোম, এন্টালিতে হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের বাড়ি এবং হাওড়ায় বিপ্লব সিং নামে এক ব্যক্তির বাড়িতেও তল্লাশি অভিযানে নেমেছে সিবিআই। জানা যাচ্ছে, এই বিপ্লব হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারীর কাজ করেন।
আরজি করে দুর্নীতির তদন্তে এদিন সকাল থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মোট ১৫টি এলাকায় তল্লাশি অভিযান নেমেছে সিবিআই।
৮ অগস্ট গভীর রাতে আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে। এরপরই হাসপাতালে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে। সব অভিযোগেরই কেন্দ্রে ছিলেন প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ডক্টর সন্দীপ ঘোষ। তিনিই নানা বিষয়ে হাসপাতালকে দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এ ব্যাাপারে সন্দীপের বিরুদ্ধে সরব হন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে আখতার বলেন, “আরজি করের দুর্নীতির মূলে ওই সন্দীপ ঘোষ।”
শুক্রবার ওই দুর্নীতি মামলার তদন্তভারও সিবিআইকে দিয়েছে আদালত। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চেও গিয়েছিলেন সন্দীপ। তবে তাঁর আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত।
প্রসঙ্গত, ছাত্রী খুনের ঘটনায় গত শুক্রবার থেকে টানা ৯দিন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে জেরা করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। শনিবারও দিনভর সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। এরপরই রবিবার ভোরের আলো ফুটতেই বেলেঘাটায় সন্দীপ ঘোষের বাড়ির সামনে পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দুপুর ১২টা পর্যন্তও সন্দীপের বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা।
কী কারণে বাড়ির দরজা খুলতে সন্দীপবাবুর এত সময় লাগল, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
শুধু সন্দীপ নয়, সিবিআই সূত্রে খবর, রবিবার মোট ১৫টি জায়গায় হানা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। আরজি করে প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের এন্টালির বাড়িতেও সিবিআইয়ের একটি দল গিয়েছে। এ ছাড়াও, কেষ্টপুরে দেবাশিস সোম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে সিবিআই। জানা গিয়েছে, আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ডেমনস্ট্রেটর। অনেকেই দাবি করছেন, দেবাশিস আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের ‘ঘনিষ্ঠ’।
এ ছাড়াও, হাওড়ার একটি জায়গায় বিপ্লব সিংহ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েছে সিবিআই। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহকারী হিসাবে কাজ করেন। তাঁর এক প্রতিবেশী রিঙ্কু রায় জানান, বিপ্লব আঁকার কাজ করতেন। ছোট দোকান ছিল তাঁর। বিভিন্ন সাইনবোর্ড আঁকার কাজ করতেন তিনি। তাঁর বাবা কাজ করতেন আরজি করে। বেলগাছিয়ার জেকে ঘোষ রোডে এক ক্যাফে মালিকের বাড়িতেও গিয়েছে সিবিআইয়ের অন্য একটি দল। পাশাপাশি, টালায় চন্দন লৌহ নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে যায় সিবিআই। তবে তাঁদের সম্পর্কে বিশদে কিছু জানা যায়নি।
আরজি করেও সিবিআইয়ের একটি দল পৌঁছয়। আরজি করের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তল্লাশি অভিযান চালায় তারা। পাশাপাশি, আরজি করের বিভিন্ন জায়গায় যান আধিকারিকেরা। আরজি করের নতুন অধ্যক্ষ মানসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়কে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলেও খবর।
তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।
গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ ওঠে, ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে তাঁকে। সেই নিয়ে হইচই পড়েছে গোটা দেশে। এই আবহে অভিযোগ উঠেছে, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে। তার তদন্তের জন্য গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন আইপিএস অফিসার প্রণব কুমার। রাজ্য পুলিশের সিটের উপর আস্থা নেই, এই দাবিতে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তভার ইডিকে দেওয়ার আর্জি কলকাতা হাই কোর্টে জানান হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। সেই মামলায় শুক্রবারই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল, একাধিক সংস্থা তদন্ত করলে বিষয়টি আরও জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে। এর পরেই সিবিআইকেই আর্থিক দুর্নীতি মামলার তদন্তভার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই শনিবার এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। রবিবার সকাল থেকেই দুর্নীতির চক্রসন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
প্রশ্ন উঠছিল আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়রের পলিগ্রাফ টেস্ট কবে হবে? কারণ, ইতিমধ্যে সন্দীপ ঘোষ সহ মোট চারজনের পলিগ্রাফ টেস্ট শনিবারই করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তবে ধৃতের কবে টেস্ট করা হবে সেই নিয়ে জল্পনা ছড়ায়। অবশেষে রবিবার অভিযুক্তের পলিগ্রাফ টেস্ট শুরু করেছেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা।
বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন অভিযুক্ত। শনিবার সেখানেই পৌঁছে যান সিবিআই আধিকারিকরা। তবে টেকনিক্যাল কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। জেলে কতটা এই টেস্ট সম্ভব তা খতিয়ে দেখে আসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সি। এরপর আজ শুরু হয় অভিযুক্তের পলিগ্রাফ টেস্ট। জানা যাচ্ছে, পলিগ্রাফ টেস্টের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সিবিআই-এর স্পেশাল টিম। এছাড়াও সিএফএসএল (CFSL)-এর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে পলিগ্রাফ। ২ টি ডিভাইস রয়েছে এসসিবি-র হাতে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় বারবার গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এর আগে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, ওই সিভিক ভলান্টিয়র নিজের দোষ কবুল করে ফাঁসির দাবি করেছিলেন। তবে কেন্দ্রের গোয়েন্দাদের সামনে পড়তেই তিনি কার্যত বয়ান বদল করছেন বারেবারে। কখনও বলছেন, ঘটনার দিন তিনি সেমিনার রুমে যাননি। উঁকি মেরে দেখেছিলেন শুধু। কখনও বলছেন সেমিনার রুমে নাকি কেউ ছিল না। ফলত, বয়ান বদল করে তিনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে জানা যাচ্ছে সিবিআই-এর তরফে। সেই কারণে অভিযুক্তের পলিগ্রাফ টেস্ট প্রয়োজন বলেই মনে করেছেন গোয়েন্দারা। আজ সিভিক ভলান্টিয়র ছাড়াও বাকি দুই চিকিৎসক এর পলিগ্রাফ টেস্ট করা হচ্ছে।