কলকাতা : আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফের এই মামলার শুনানি হবে শিয়ালদহ কোর্টে।
দেখুন ভিডিও ~
আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় শনিবার টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে গ্রেফতার করে সিবিআই। একই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও। ধৃতদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্র এবং সরকারি কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ এনেছে সিবিআই।
এদিন ধৃতদের ৩ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। অন্যদিকে টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিতের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান। প্রশ্ন তোলেন সিবিআইয়ের অ্যারেস্ট মেমো নিয়েও। দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পর বিচারক তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আরজি করের ঘটনায় এর আগে সুপ্রিমকোর্টেও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল পুলিশ। ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে কেন ক্রাইম সিন সুরক্ষিত রাখা হয়নি, সকালের ঘটনায় কেন রাতে এফআইআর, বিকেল ৪টের পর কেন ময়নাতদন্ত, তাড়াহুড়ো করে সৎকার কেন- পুলিশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই উঠেছে একাধিক অভিযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই টালা থানার বিরুদ্ধে গাফিলতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এদিন আদালতেও সেই প্রসঙ্গ টেনে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে নয়, ঘটনার একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিজিৎ মণ্ডলকে।
ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর পর হাসপাতালের তরফে পরিবারকে যেভাবে অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ এবং সবশেষে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যৌন নির্যাতন হয়েছে। তা সত্ত্বেও কীভাবে আত্মহত্যার কথা বলা হল?”
সকাল ১০ টার সময় ঘটনার খবর পাওয়ার পরই কেন সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর করা হল না, আদালতে সেই প্রশ্ন তোলে সিবিআই। সেই সূত্রে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলের যোগসূত্র দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের মামলার শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আগেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত।
নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত থেকে মৃতদেহ সৎকার- পুরো প্রক্রিয়ায় পুলিশ-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগে বারে বারে সরব হয়েছেন নির্যাতিতার মা-বাবা থেকে শুরু করে আন্দোলনকারী পডু়য়ারা। সন্ধে ৬টার পর কীভাবে ময়নাতদন্ত তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এবার এবিষয়ে শিয়ালদহ আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে দাবি করা হল, ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র! সন্দীপ ঘোষ-অভিজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত রয়েছেন বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, কাদেরকে আড়াল করতে এই ষড়যন্ত্র তা খতিয়ে দেখতে সন্দীপ-অভিজিৎকে প্রথমে পৃথক পৃথক ভাবে জেরা করা হবে। পরে সত্যতা যাচাই করতে দু’জনকে মুখোমুখি জেরার ভাবনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে অনেক রহস্যের সমাধান হবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
প্রসঙ্গত. ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর পর হাসপাতালের তরফে পরিবারকে যেভাবে অসুস্থ, গুরুতর অসুস্থ এবং সবশেষে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রথম থেকেই তদন্তকারীদের স্ক্যানারে ছিলেন সন্দীপ। এমনকী মা-বাবা আসার পরেও দেহ দেখতে না দিয়ে কেন ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল, তড়িঘড়ি ময়নাতদন্ত, দেহ সৎকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশের ভূমিকাও।
নির্যাতিতার মা-বাবা এও বলেছিলেন, “আমরা দেহটা রেখে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এত প্রেসার তৈরি করা হয়েছিল। বাড়ির বাইরে চারশো পুলিশ ব্যারিকেড করে রেখেছিল। বাধ্য হয়েছিলাম সৎকার করতে।” এমনকী পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা দেওয়ার অভিযোগও এনেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। তার আগে দুই অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে
সিবিআই ম্যারাথন জেরার পথে হাঁটতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এর আগে আরজি করের দুর্নীতি মামলায় ১৪ দিনে সন্দীপ ঘোষকে প্রায় ১৯৩ ঘণ্টা জেরা করেছেন তদন্তকারীরা।