দেশের সময় ,কলকাতা : বাংলায় একাধিক দুর্নীতির মামলায় তদন্ত চালাচ্ছে ইডি-সিবিআই। বিভিন্ন মামলার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আদালতে বিভিন্ন সময়ে
রেশন দুর্নীতিতে হাওয়ালা যোগ রয়েছে সে কথা আগেই জানিয়েছিল তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা ইডি।
কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে খবর, এবার হাওয়ালার লেনদেনের চিরকুট পেয়েছেন আধিকারিকরা। শুধু তাই নয়, তল্লাশিতে মিলল নগদ পাঁচ লক্ষ অর্থও।
মঙ্গলবার রেশন দুর্নীতি মামলায় ছয় জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের দাবি, সেই তল্লাশিতে মিলেছে নগদ টাকাও।
সূত্রের খবর, বড়বাজার এলাকায় তল্লাশি চালাতে গিয়েই মিলেছে টাকাগুলি। জানা গিয়েছে, হাওয়ালা লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত ১ টাকা ও ৫ টাকার প্রচুর নোট উদ্ধার হয়েছে। এই নোটগুলোই হাওয়ালা লেনদেনের কাজে ব্যবহার করা হত বলেই অনুমান করছেন গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, বুধবার সল্টলেকে নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন বনগাঁর দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস। রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, শঙ্কর ঘনিষ্ঠ বিশ্বজিতের বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার ব্যবসা রয়েছে, সোনার ব্যবসা রয়েছে, এছাড়াও এক্সপোর্ট ইমপোর্ট সংস্থা রয়েছে। ইডি-র সন্দেহ এই সংস্থার মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণ রেশন দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে।
ইডি সূত্রে খবর, হাওয়ালা সংক্রান্ত প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে। এরপর তদন্ত যত এগিয়েছে তত প্রকাশ্যে আসছে বিস্ফোরক সব তথ্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল যখন বিশ্বজিতের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালাচ্ছিল, তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। জানা যাচ্ছে, তিনি ছিলেন বাংলাদেশে। ইডির অফিসাররা গতকালই বিশ্বজিতকে ফোন করেন এবং তারপর রাতেই বিমানে কলকাতায় ফেরেন বিশ্বজিৎ। এরপর বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিশ্বজিৎকে।
বুধবার যখন বিশ্বজিৎ দাসকে বিশেষ ইডি আদালতে পেশ করা হয়, তখন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডির আইনজীবীর যুক্তি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে বিশ্বজিতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সেই কারণে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে বিশ্বজিতকে আট দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চায় ইডি।
সেই সময়েই বিশ্বজিৎ দাসের আইনজীবী বলে ওঠেন, একাধিক রোগ রয়েছে তাঁর মক্কেলের। ফলে তাঁর যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হয়, সেই বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। একইসঙ্গে আদালতের কাছে আইনজীবীর আরও আর্জি, ইডি হেফাজতে যেন অত্যাচার না করা হয় তাঁর মক্কেলকে।
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত বিশ্বজিৎ দাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মঙ্গলবার সকালেই বিশ্বজিৎ দাসের সল্টলেকের বাড়িতে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশি চালানো হয় সেখানে। একইসঙ্গে কৈখালিতে এই মামলায় ইতিমধ্যেই ধৃত বাকিবুক রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হানিস তোসিবালের ফ্লাটেও চালানো হয় তল্লাশি। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে তল্লাশি চালান ইডি আদিকারিকরা। হানিসের বিরুদ্ধে জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো একই কায়দায় ফোন ছুড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে।
কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, বিশ্বজিৎ দাস আদতে বনগাঁর বাসিন্দা। শংকর আঢ্য এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বিশ্বজিৎ দাসের নাম উঠে আসে তদন্তকারীদের কাছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় যে কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে সে সংক্রান্ত বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার অভিযান চালায় ইডি। কোন টাকা কোথায় এবং কী ভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা।
যদিও সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের ওই অভিযান শুধুমাত্র রেশন দুর্নীতির তদন্তের জন্য ছিল না, পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ সংক্রান্ত বিষয়েও খোঁজখবর নেন তদন্তকারীরা। ধৃত বিশ্বজিৎকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ইডি। সেক্ষেত্রে দেখার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কী কী তথ্য উঠে আসে তদন্তকারীদের হাতে।