দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) তদন্তে এবারও কেন্দ্রীয় সংস্থার জালে আরও চারজন।
অনেক দিন ধরে তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, চর্চা চলেছে, তাঁর বাড়িতে হানাও দিয়েছে সিবিআই। শেষপর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাগদার চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘সৎ রঞ্জন’কে গ্রেফতার করল সিবিআই ।সেই সঙ্গে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাঁরা এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন বলে অভিযোগ।
শুক্রবার তাঁকে নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তারপর বক্তব্যে অসঙ্গতি মেলায় রঞ্জনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। শুক্রবার দুপুরে তাঁকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে সোমবার পর্যন্ত চার দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাস কয়েক আগে এই চন্দন মণ্ডলের নাম সামনে এনেছিলেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। তিনি ‘সৎ রঞ্জন’ নাম ব্যবহার করে প্রথম চন্দনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সামনে আনেন। টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চন্দনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
অভিযোগ, বাগদার এই ব্যক্তিই উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলার লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন এই বলে যে, চাকরি পাইয়ে দেবেন। কখনও তা প্রাথমিক শিক্ষক, কখনও বা গ্রুপ ডি। এও অভিযোগ, চন্দন ছিলেন এই নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম বড় এজেন্ট। প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগ ছিল।
এর আগে রঞ্জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও খতিয়ে দেখেছিল সিবিআই। জানা গিয়েছে, সেখানেও অসঙ্গতি মিলেছিল। শেষপর্যন্ত শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
এই চন্দন ওরফে ‘সৎ রঞ্জন’-এর ব্যাপার প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস। উপেনবাবু বলেছিলেন, ‘রঞ্জন বস্তা ভর্তি করে টাকা নিয়ে গাড়িতে তুলে কলকাতায় দিয়ে আসত। কার বাড়িতে দিয়ে আসত তা তো তদন্ত করতে হবে। কিন্তু কলকাতায় টাকা আসত এটা নিশ্চিত।’ এ ব্যাপারেই লার্জার কনস্পিরেসি তথা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন উপেন।
সিবিআই কর্তা হিসেবে এই ধরনের দুর্নীতি তদন্তের একেবারে গভীরে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে উপেন বিশ্বাস কর্মজীবনে দেশজুড়ে খ্যাত ছিলেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবকে জেলে পাঠানোর মূল মাথা ছিলেন তিনিই। সেই উপেন যখন এই রঞ্জনের নাম বলেন তখন কার্যত তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল বাংলায়।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, নিয়োগ দুর্নীতির যে চক্র, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল চন্দন মণ্ডলের। আদালতেও চন্দনের নাম জানিয়েছিলেন উপেন বিশ্বাস। চাকরি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রসন্ন রায়ের মতো যে সব মিডলম্যান ছিলেন, তাঁদের মধ্যে চন্দন অন্যতম বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আধিকারিকদের অনুমান, চন্দনকে জেরা করলেই সামনে আসবে কুন্তল ঘোষের মতো আর কারা টাকা নিয়েছিলেন। তা জানা গেলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত আরও কয়েক ধাপ এগোবে বলেও মনে করছে সিবিআই।
চন্দনের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘দেখা গিয়েছে চন্দন বস্তা বস্তা টাকা কলকাতায় পাঠান। এরকম পাড়ায় পাড়ায় সৎ রঞ্জনেরা আছে।’ মূল অভিযুক্তদের দ্রুত সামনে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।‘সৎ রঞ্জন’ অবশ্য দাবি করেছিলেন উপেন তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। উপেনবাবু একসময়ে বাগদার তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন। রঞ্জনের দাবি ছিল, ভোটে সাহায্য করেননি বলে উপেন বিশ্বাস তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। এখন দেখার হেফাজতে নেওয়ার পর রঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে কোন পথে এগোয়।
‘সৎ রঞ্জন’ অবশ্য দাবি করেছিলেন উপেন তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। উপেনবাবু একসময়ে বাগদার তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন। রঞ্জনের দাবি ছিল, ভোটে সাহায্য করেননি বলে উপেন বিশ্বাস তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। এখন দেখার হেফাজতে নেওয়ার পর রঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে কোন পথে এগোয়।কে চন্দন? কী করতেন? নিজে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে প্যারাটিচার পদে চাকরি করতেন চন্দন। জানা যায়, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় মামা-ভাগিনা গ্রামে দোতলা বাড়ি রয়েছে তাঁর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুসারে চন্দন সক্রিয় রাজনীতি করতেন বলে জানা যায় না। তবে, তাঁর দোতলা বাড়ির সামনে নাকি লোকজনের লাইন লেগে থাকত একসময়।
কে চন্দন? কী করতেন? নিজে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে প্যারাটিচার পদে চাকরি করতেন চন্দন। জানা যায়, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় মামা-ভাগিনা গ্রামে দোতলা বাড়ি রয়েছে তাঁর। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুসারে চন্দন সক্রিয় রাজনীতি করতেন বলে জানা যায় না। তবে, তাঁর দোতলা বাড়ির সামনে নাকি লোকজনের লাইন লেগে থাকত একসময়। অভিযোগ সামনে আসার পর বেশ কিছুদিন পলাতক ছিলেন চন্দন। তাঁর বাড়িতে গেলে দেখা যায় গেটের তালা বন্ধ।
তিনি তৃণমূল কর্মী ছিলেন, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তৃণমূলের অনেক নেতার সঙ্গে নাকি বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। কতদূর হাত ছিল চন্দনের? প্রাক্তন বিধায়ক দুলাল বরের কথায় ‘টপ লেভেল’ পর্যন্ত।
কেউ কেউ বলেন, তৃণমূল নেতারা অনেকেই চন্দনের বাড়িতে যেতেন। তবে কলকাতার নেতাদের খুব বেশি যাতায়াত ছিল বলে শোনা যায় না এলাকায়। আবার স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, একসময় সিপিএমের সদস্য ছিলেন চন্দন।
শুধুমাত্র উপেন বিশ্বাস নয়, এলাকার অনেক বাসিন্দাও স্বীকার করে নিয়েছেন, চন্দন মণ্ডল টাকা নিয়ে চাকরি দিতেন। আবার কাউকে চাকরি দিতে না পারলে টাকা ফেরতও দিতেন। যাঁদের চাকরি দিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে তেমন অনেকের চাকরিও গিয়েছে আদালতের নির্দেশে। চাকরি দিতেন প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক থেকে হাইস্কুলেও। ১০, ১৫ বা ২০ লক্ষ পর্যন্ত দর উঠত বলেও দাবি করেন বাসিন্দারা।
অভিযোগ, তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ থাকত, চাকরির ব্যবস্থা তিনি করবেন, তবে সাদা খাতা জমা দিলে তবেই। খাতায় উত্তর লিখলে চাকরি পাওয়া যাবে না। লিখতে হবে শুধু নাম ও রোল নম্বর।
এবার সেই চন্দনকে হেফাজতে নিয়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারির শিকড়ে পৌঁছতে চাইছে সিবিআই।