রাম লহর কি এবার কলকাতাতেও!
অযোধ্যায় রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার পূণ্যক্ষণের আর চব্বিশ ঘন্টাও বাকি নেই। এরই মধ্যে কলকাতায় নানা প্রান্তে দশ কর্মা ভান্ডার তো বটেই, মায় পোশাক আশাকের দোকানেও লেগেছে রাম ধ্বজা বিক্রিবাটার ধুম। দেদার বিকোচ্ছে সেগুলি। এর সাথে রয়েছে ” রাম দরবার” অর্থাৎ রাম- সীতা- হনুমান সম্বলিত ছবি বিক্রির ধামাকা । হনুমান চালিসা বিক্রির গড় পড়তা হারও ঊর্ধগামী। কোনো কোনো দোকানির আক্ষেপ বড়বাজারের পাইকারদের কাছে থেকে এসব আরও বেশি সংখ্যায় কিনে এনে দোকানে রাখলে ‘ নাফার” অঙ্কটা আরো একটু স্ফীত হত।
ই এম বাই পাস লাগোয়া মুকুন্দ পুর বাজারে দীর্ঘ দিন ধরেই পোশাকের দোকান চালাচ্ছেন মাধব কর্মকার। তার দোকানে ফ্যান্সি পোশাক আশাকের সাথে শীতের মরশুমে ভালো সংখ্যায় থাকে সোয়েটার, চাদর, কম্বল, উলেন টুপি, মাফলার ইত্যাদি। হালে অবশ্য নবতম সংযোজন ছোট বড় নানা সাইজের রাম ধ্বজা। তাতে রয়েছেন ‘ ধনুর ধারী শ্রী রামচন্দ্র’ আর তার পাশেই গন্ধমাদন হাতে সংকটমোচনকারি ‘ পবন পুত্র’। স্থানীয় দশকর্মা ভান্ডারে আবার যথেষ্ট সংখ্যায় মজুত রয়েছে হনুমান ধ্বজা। সোমবার রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে দিয়া বা প্রদীপ বিক্রিও চলেছে জোর কদমে।
রবিবার মাধববাবু বলেন, ” দিন কয়েক আগে বড় বাজারে মাল আনতে গিয়েছিলাম। পাইকার আমাকে খান পঞ্চাশটা রাম ধ্বজা বলতে গেলে জোর করে গছিয়ে দিল। আমি না না করছিলাম। ও ছাড়ার পাত্র নয়। বলল, নিয়ে যান, জোর বিক্রি হবে। এখন দেখছি ভুল বলে নি।” তিনি জানালেন, আগে কখনো তিনি তার দোকানে রাম ধ্বজা বিক্রি করেন নি। যে পাইকারের কাছ থাকতে তিনি এগুলি এনেছেন, সেই অভিষেক পোদ্দারের দোকান সুতাপটিতে । তার কথায়, ” দেখেছেন না খরিদ্দারের ভিড়। আমি পাইকার হয়েই আর ওগুলো দিতে পারছি না। এতো চাহিদা। ‘ তিনি জানালেন, এগুলি তৈরি হয় আহমেদাবাদের মত ভিন রাজ্যে।
রাস্তার ওপারেই দুলাল কর্মকারের ফুটপাথের উপর পত্র পত্রিকা, বাংলা সাহিত্য, স্কুলের বইয়ের সাথে ধর্ম গ্রন্থ বা ঠাকুর দেবতার রঙিন ছবি বিক্রির দোকান মন্দ চলে না। এই মুহূর্তে তার আক্ষেপ কেন তিনি বেশি করে রাম, সীতা, হনুমান সম্বলিত রাম দরবার ছবি বেশি করে রাখেন নি। কারণ যা ছবি ছিল সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। খরিদ্দারদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তার কথায়, ” রাম সীতার ছবির এত চাহিদা হবে কি করে আগে থেকে বুঝব? এখন পাইকারের কাছে বললে সে ডাটের মাথায় বলছে, বড় অর্ডার এসে গেছে, আর দেওয়া যাবে না, আমি আগে কেন বেশি করে নিই নি। তবে দোকানে যে হনুমান চালিশা বা হনুমানজির ছবি অনেক আছে। সেগুলি বিক্রি বাটা করেই সামাল দিচ্ছি। ”
এরই মধ্যে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা ঘিরে রাস্তায় রাস্তায় প্রচারেরও খামতি নেই। নয়াবাদ থেকে শুরু করে বাইপাসতক এলাকায় গলি গলি ম্যাটাডোর নিয়ে চক্কর দিয়ে বাপ্পা রায়, রাজেশ দাশের মত যুবকেরা পথ চলতি মানুষের হাতে ছোট ছোট খামে ভর্তি রামলালাকে উৎসর্গ করা চাল তুলে দিচ্ছেন। কর জোড়ে অনুরোধ করেছেন, ” এই প্রসাদি চাল বাড়িতে ঠাকুরের কাছে রেখে দেবেন। গৃহস্থের মঙ্গল হবে। ” ল্যাম্প পোস্টের উপর লাগানো হচ্ছে রাম লালা ও মন্দিরের ছবির পোস্টার।