
কলকাতা : আকাদেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রেক্ষাগৃহে চৈতি ঘোষালের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হল রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী। বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাটকটি আজ ১০০ বছর পরেও সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক। তাই রক্তকরবী কালজয়ী। মানব জীবনের শোষণ, যন্ত্রের প্রতি মানুষের নির্ভরতা, এবং প্রকৃতির প্রতি মানুষের সম্পর্ক নিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। নাটকটি একটি রূপক-সাংকেতিক রচনা, যেখানে লোভী রাজতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজের শোষণ এবং মানুষের যন্ত্রে পরিণত হওয়ার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । নাটকটি মানুষের লোভ এবং শোষণমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ। এখানে যক্ষপুরীর রাজার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যিনি প্রজাদেরকে শোষণ করে সোনার খনিতে কাজ করতে বাধ্য করেন । এই চিত্রটি আজও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়।
নাটকটিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানুষের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। যক্ষপুরীর বিপরীতে, প্রকৃতির প্রতি মানুষের সহজ জীবন ও সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায় । এটি প্রকৃতির প্রতি মানুষের সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেয়। যান্ত্রিকতা মানুষের সহজ শক্তি ও সৌন্দর্যকে নষ্ট করে এবং মানুষের যন্ত্রে পরিণত হওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই নাটকটি মানুষের মানবিকতা এবং আত্মপরিচয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে। কেউ কেউ এই নাটকে রবীন্দ্রনাথের শ্রেণী সংঘাত চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। আর সেই একই বক্তব্য ফুটে উঠেছে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার নাটকটি দেখতে বিশিষ্ট্যজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়,

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল সহ আরও অনেকে।
জয়ন্ত ঘোষাল দেশের সময়কে জানান, “রক্তকরবীর বিষয়বস্তু আজও সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক। এটি বিশেষ কোনও দেশ, রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দলকে চিহ্নিত করে না। এটি অতি সাধারণভাবে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের কথা বলে। রাষ্ট্র যেভাবে আজ সমাজকেই দখল করছে। কিন্তু মানবতার জয়গান যে আজও কতটা প্রয়োজন সেইগুলোই এই নাটকের পরতে পরতে দেখা গেছে”। দেখুন ভিডিও
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভীক মজুমদার জানান, “রবীন্দ্রনাথ রক্তকরবী ১০০ বছর আগে লিখেছিলেন কিন্তু এরমধ্যে এমন উপাদান আছে যা মনে হয় এ যেন গতকালের ঘটনা। যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পৃথিবী এই মুহুর্তে চলছে তাতে মনে হয় রক্তকরবীর একটা ভাষ্য আমাদের সামনে ভেসে উঠছে”।
নন্দিনী চরিত্রের উপস্থাপনাও অনবদ্য যেখানে একদিকে নারী হৃদয়ের কোমলতার চিত্র ফুটে ওঠে আবার আর একদিকে তার বিদ্রোহিনী ভাব, একদিকে রক্তকরবী অন্যদিকে কুন্দ ফুলের মালা এইসব নিয়ে নন্দিনী যে শাসকের কাছে মাথা নোয়ায় না আবার ভালোবেসে পাষাণ হৃদয়হীন রাজাকে তার খোলোস থেকে বার করে আনে। রক্তকরবী সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ রূপক সাংকেতিক নাটক।