দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সকাল থেকেই ছিল জল্পনা। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে, সংসদে সংঘর্ষের ঘটনায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করল দিল্লি পুলিশ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় এই এফআইআর করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার উপযুক্ত ধারার আওতায় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত করা, কারও জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন করা, বল প্রয়োগ, হুমকি দেওয়া দেখানোর মতো অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
এ দিন বিজেপি সাংসদ প্রতাপ চন্দ্র ষড়ঙ্গির দাবি করেন, রাহুল গান্ধীর ধাক্কার জেরে পড়ে গিয়ে তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছে। তার পরই বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে FIR দায়েরের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল শাসকদল। তবে রাহুলের অভিযোগ, তাঁকেই সংসদে ঢোকার সময়ে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। তবে কি গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কংগ্রেস সাংসদের? কী বলছে সংসদের নিয়ম?
সংসদের রুলবুক অনুযায়ী, লোকসভার স্পিকার অনুমতি দিলে পুলিশ যে কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। এই ক্ষেত্রে লোকসভার বিরোধী দলনেতার আলাদা করে কোনও বিশেষ ক্ষমতা নেই। বিজেপি সাংসদ প্রতাপ চন্দ্র ষড়ঙ্গি দাবি করতে পারেন, তাঁর স্বাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। যদিও এই ক্ষেত্রে সেই মুহূর্তের কোনও ভিডিয়ো তথ্য প্রমাণ হিসেবে না থাকলে দু’পক্ষের দাবি-পালটা দাবিতে বিষয়টি সেখানেই থেমে যেতে পারে।
লোকসভার প্রাক্তন সচিব পিডিটি আচারি বলেন, ‘ভিডিয়োর ফুটেজ এ ক্ষেত্রে আসল তথ্য প্রমাণ। তা না থাকলে তবে এই ঘটনা কেবলমাত্র কথার লড়াই হয়ে থেকে যাবে। কে কাকে ধাক্কা মেরেছিলেন, তা প্রমাণ করা সম্ভব হবে না ভিডিয়োর ফুটেজ ছাড়া।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাহুল গান্ধী কোথায় ছিলেন, ঘটনার সময়ে তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, এগুলি খতিয়ে দেখা হবে। যদি বিক্ষোভের সময়ে দু’পক্ষই একে অপরের জায়গা থেকে সরে না থাকেন, তবে ধাক্কা দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রমাণ করাও সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
সংবিধান কী বলছে?
সংবিধান বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেয় সাংসদদের।
সংসদে বাক স্বাধীনতার অধিকার।
সংসদে বলা কোনও মন্তব্য কিংবা ভোটের প্রেক্ষিতে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় এক জন সাংসদ রক্ষাকবচ পেতে পারেন।
সংসদের উভয় কক্ষে আনা রিপোর্ট, কাগজ, ভোটের প্রেক্ষিতে যে কোনও আদালতে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় রক্ষাকবচ পেতে পারেন এক জন সাংসদ।
সংসদে বক্তব্য পেশ করা, সংসদ ভবনে প্রবেশ কিংবা প্রস্থান করার সময়ে কোনও সদস্যকে বাধা দেওয়া হলে, তাঁর পথ আটকানো হলে কিংবা তাঁকে হেনস্থা করার অর্থ সংসদের অবমাননা।তবে স্বাধিকার ভঙ্গ বলা যাবে না যদি অভিযুক্ত সংসদে ওই মুহূর্তে কোনও ডিউটি পালন না করে থাকেন।
তবে রুলবুক অনুযায়ী, কোনও সাংসদকে হেনস্থা করার অর্থাৎ স্বাধিকার ভঙ্গ করা।
ঠিক কী ঘটেছিল সংসদে?
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সংসদের মকর দ্বারের সামনে বিজেপি এবং বিরোধী শিবিরের সাংসদরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। অমিত শাহের বিরুদ্ধে আম্বেদকরকে অসম্মান করার অভিযোগে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী-সহ একাধিক সাংসদরা। সে সময়ে ধাক্কাধাক্কিতে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ ষড়ঙ্গির মাথায় চোট লাগে। তাঁর মাথা ফেটে যায়। অভিযোগ ওঠে, রাহুল গান্ধী এক সাংসদকে ধাক্কা মারেন। ওই সাংসদ প্রতাপ ষড়ঙ্গির গায়ের উপর পড়ায় তাঁর মাথা ফাটে। রক্তাক্ত অবস্থায় বিজেপি সাংসদকে নিকটবর্তী আর এম এল (RML )হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পীযূষ গোয়েল এবং প্রহ্লাদ যোশীর মতো সাংসদরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
https://x.com/ANI/status/1869642601932165439?t=DkjPzEFbFV72v6CnGHprKg&s=19
এক বিজেপি সাংসদ রাহুলকে ডেকে বলেন, ‘আপনার কোনও লজ্জা নেই। দেখুন কী করেছেন। ওঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন। গুণ্ডাগিরি করতে এসেছেন সংসদে?’ পালটা রাহুল বলেন, ‘আমাকেই তো ধাক্কা মারা হয়েছে।’ মল্লিকার্জুন খাড়গের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদদের ধাক্কায় তাঁর হাঁটুতে চোট লেগেছে। কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈর অভিযোগ, বিজেপি সাংসদরা লাঠি নিয়ে রাহুল গান্ধীকে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন।
https://x.com/ANI/status/1869620697074668006?t=-ZFdkcwBw7GdoR7zo64R3w&s=19
জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি সাংসদদের ফোন করে আহতদের খবর নিয়েছেন।
https://x.com/PTI_News/status/1869623008106836104?t=O7Kx3vbTotPLzOSsCo27EA&s=19