R G Kar Hospital Incident আজ মধ্যরাতে রাজপথ দখল নেবেন মহিলারা, প্রস্তুত সীমান্ত শহর বনগাঁও

0
399

দেশের সময় : দীর্ঘ সময় ধরে কাজ শেষ করে ক্লান্ত হয়ে  মাঝরাতে চোখ বন্ধ করে নিজের হাসপাতালে ক্ষণিকের বিশ্রাম খুঁজছিলেন মেয়েটি। সেই চোখ আর খোলেনি তাঁর। তা হলে কি নিজের কর্মস্থলে রাতে আর নিরাপদ নন মহিলা কর্মীরা? তরুণী-চিকিৎসকের জীবন ও সম্ভ্রমহানি এ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতিবাদে উত্তাল চিকিৎসক থেকে আমজনতা। এরই মধ্যে অভিনব প্রতিবাদের রাস্তা নিলেন মহিলারা।

আহ্বান সাদামাটা- ‘মেয়েরা, রাত দখল কর- দ্য নাইট ইস আওয়ার্স।’ সময় বাছা হয়েছে স্বাধীনতার মধ্যরাত।

পোশাকি নাম ‘রিক্লেম দ্য নাইট’। বাংলায় ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’। ১৯৭৫ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে জনৈক মাইক্রো বায়োলজিস্টকে খুনের ঘটনায় ওই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তার পরে নানা ঘটনায় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে এই আন্দোলনে পথে নেমেছেন মেয়েরা। দিল্লির ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় কয়েক বার ওই নামে আন্দোলনও হয়েছিল। ২০১২ সালের শেষ রাতেও অ্যাকাডেমির সামনে মেয়েরা ওই ডাক দিয়ে পথে নেমেছিলেন। এখন আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতেও সেই আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৪ অগস্ট, মাঝ রাতে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল শহরের তিন স্থান কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর আর অ্যাকাডেমি চত্বরে। কিন্তু এই আহ্বানে উত্তাল হয়েছে নেটপাড়া। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে তিলোত্তমার গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই ডাক পৌঁছে গিয়েছে শহরতলি থেকে জেলাতেও। ফলে আজ বুধবার, এক অন্যরকম আন্দোলনের সাক্ষী হতে চলেছে বাংলা।

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের নজিরবিহীন ঘটনার প্রতিবাদে সমাজমাধ্যমে ওই আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়েছিল। যাঁরা সেই আন্দোলনের আহ্বায়ক, তাঁরা কেউই রাজনৈতিক দলের কেউ নন। প্রথম যে পোস্টারটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাতে স্বাধীনতা দিবসের আগে, অর্থাৎ ১৪ অগস্ট (বুধবার) রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে মেয়েদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সোমবার রাত থেকেই সেটি অন্য মাত্রা পেতে শুরু করে। মঙ্গলবার তা গোটা বাংলার মানচিত্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা শহর এবং মফস্সলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মতো করে মহিলারা ওই আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছেন। জমায়েত করতে উদ্যোগী হচ্ছেন।

শুরুটা যদিও হয়েছিল কলকাতার তিনটি জায়গা দিয়ে, কিন্তু মঙ্গলবার রাতে দেখা গিয়েছে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে। জুড়ছে নতুন নতুন নাম।

দেখা যায় সোমবার রাত থেকে উত্তরপাড়া শখের বাজার, সোদপুর বিটি রোড মোড়, চন্দননগর স্ট্র্যান্ড, কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে মধ্যরাতে মেয়েদের দখল নেওয়ার ওই পোস্টার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ঘটনাচক্রে, আরজি করের ইস্তফা দেওয়া অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ করার নির্দেশের পর থেকেই মধ্যরাতে রাস্তা দখলের আন্দোলনের আহ্বানটি সমাজমাধ্যমে সংক্রমিত হতে শুরু করে। মঙ্গলবার তাতে যুক্ত হয় বনগাঁ নীল দর্পণ, বর্ধমান শহরের কার্জন গেট, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, মালদহ শহর, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া শহর, ব্যান্ডেল, শ্রীরামপুরের মতো জেলায় জেলায় মফস্‌সল শহরের মহিলারাও।কলকাতার উত্তর-দক্ষিণের সঙ্গে শহরের পূর্বেও জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। বীরভূমের শান্তিনিকেতনের বার্তা, ‘দেখা হবে রাস্তায়’, নদিয়ার রানাঘাট জানাচ্ছে ‘সঙ্গে আছি’।

উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের ঘড়ির মোড়ে মঙ্গল-রাত থেকেই সাজো সাজো রব, পিছিয়ে নেই বহরমপুরের ঐতিহাসিক স্কোয়ার ফিল্ড। মালদার ইংলিশ বাজার কিংবা সমাজমাধ্যমে একই আহ্বান বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বরেও। কোনও কোনও শহরে একাধিক জমায়েতেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। রাতে দেখা গিয়েছে, তালিকায় বাদ নেই কোনও জেলা-ই।

রাতের রাস্তায় মেয়েদের জমায়েত নিয়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, তথাগত মুখোপাধ্যায়, কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলেখা মিত্ররা ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন৷ শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বস্তিকা লেখেন, ‘এই শহর আমাদের। এই দেশও আমাদের। সবাই আসুন। যে যেখানে পারবেন আসুন। নিজের এলাকায় জড়ো হোন। নিজের পাড়ায় জড়ো হোন। ওদের জানান৷ এই রাস্তা আমাদেরও।’

অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মেয়েদের জন্য অন্যরকম রাতের কল্পনা করেছেন৷ নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এটা যেন সত্যি হয়…।’ এই আন্দোলনকে সমর্থন করে বার্তা দিয়েছেন পুরুষরাও। অনেকেই জানিয়েছেন, এই আন্দোলনে সামিল হতে চান তাঁরাও। স্বাগত জানিয়েছেন অভিনেত্রীরাও। তাঁদের সাফ কথা, ‘রাতের বেসামাল শহরকে তাঁরা বুঝে নিতে পারেন, যুঝে নিতে পারেন, এটা তারও শুরু।’

এক্স প্ল্যাটফর্মে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আসব, তোমাদের পাশে থাকতে দিও।’ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘দেখা হবে।’ বাংলা ছবির জগতের বেশ কিছু নামী মুখকে যাদবপুরে স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে জড়ো হতে দেখা যাবে বলেও জানা গিয়েছে। নায়িকা মিমি চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা কোথায় কোথায় থাকবেন।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৩১ বছরের চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদ করছেন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ। এর মাঝেই টেলি অভিনেত্রী ও নাট্যকর্মী গুলশনারা খাতুনের মন্তব্যের জেরে তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নেটপাড়ায়। গুলশনারা নিজেও এই প্রতিবাদ জমায়েতে থাকবেন জানিয়ে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রতিটি পুরুষ চরিত্রেরই ধর্ষক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চিৎকার করে বলছি। যদি আপত্তি থাকে আমাকে বন্ধুতালিকা থেকে সরিয়ে দেবেন।’ আর তাতেই প্রায় গর্জে উঠেছেন টলিপাড়ার অনেকে। সেখানে শুধু পুরুষেরা নন, মহিলারাও প্রতিবাদ করেছেন সমস্বরে।

Previous articleRG Kar Doctor Death আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে দিল্লি থেকে এল সিবিআই-এর বিশেষ টিম
Next articleWeather update: ফের ভাসতে চলেছে বাংলা , স্বাধীনতা দিবসে বৃষ্টি বাড়বে কলকাতা সহ একাধিক জেলাতে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here