অর্পিতা বনিক, বনগাঁ : স্বপ্নকে জয় করার বাসনা মানুষের অনেককালের৷ এই বাসনায় যুগে যুগে মানুষ অনেক নজির তৈরি করেছে৷ ভারতীয় সাঁতারু মাসুদুর রহমান বৈদ্য প্রথম প্রতিবন্ধী সাঁতারু হিসেবে জিব্রাল্টার প্রণালী পার হয়েছিলেন৷ শৈশবে রেল দুর্ঘটনায় তিনি পা হারান৷ নজির গড়ার পরও প্রতিবন্ধীর তকমা দিয়ে উটকো সহানুভূতি দেখানো হতো তাঁকে৷ তাই একটা কথা তাঁর মুখে প্রায়ই শোনা যেতো, ‘‘আমি প্রতিবন্ধী নই৷
তেমনই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রামের মানুষ পরিমল বিশ্বাস ৷ প্রায় বত্রিশ বছর আগে ঠাকুর নগরে ট্রেন দূর্ঘটনায় মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন তিনি৷ প্রাণে বাঁচলেও সেই ঘটনায় বাঁ পা হারান ৷
রেল দুর্ঘটনায় পা হারানোর ট্র্যাজেডি তাঁর জীবনে রয়েছে৷ হাসপাতালে পড়ে থেকে সারারাত যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পরিমল দেখেছিলেন, তাঁর কাটা পড়া পায়ে ইঁদুরের দলের সশব্দ উপস্থিতি৷
কিন্তু পা হারালেও জীবনের ছন্দ হারাতে দেননি৷ বরং নিজের প্রতিবন্ধকতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নয়া লক্ষ্য স্থির করেন পরিমল বাবু৷ সিদ্ধান্ত নেন, নকল পা নিয়েই শুরু করবেন জীবনের নতুন ইনিংস। প্রস্থেটিক পা নিয়েই তিনি শুরু করেন দৌড় , সাঁতার এবং সঙ্গে যোগা৷ তারপর পিছনে ফিরে তাকাতে চায়নি পরিমল৷ পেশায় মাছ বিক্রেতা এখন প্রতিষ্ঠিত দৌড়বিদ৷ দেখুন ডিডিও
গড়পরতা অনেক মানুষের জীবন এখানেই থেমে যায়৷ কিন্তু, হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই পরিমল ঠিক করেছিলেন, তিনি দৌড়বিদ হবেন৷ আরো কঠিন, দুঃসাধ্য লক্ষ্য অর্জনে নামবেন৷ এরপর পরিকল্পনা মতো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সাঁতারে ৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাওভাঙা, ইছামতীর বুকে সাঁতরে বেড়াচ্ছেন ৷ পাশা পাশি এখন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ৷ একদিকে যোগাসন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অন্যদিকে তাঁর পুরোন সাইকেল চালিয়ে অসুস্থ মানুষদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ফিজিওথেরাপি করে পরিষেবা দিয়ে চলেন নিয়ম করে৷
ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সন্তোষ দাস জানান, পরিমল বিশ্বাস ছয়ঘরিয়া গ্রামের দৃষ্টান্তমূলক একজন মানুষ৷ যে রেল দূর্ঘটনায় একপা হারিয়ে রুটি-রুজির টানে পেশা বদলে জীবন যুদ্ধে কি ভাবে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায় তা চাক্ষুষ প্রমাণ করে ৷ এমন মানুষকে কুর্নিশ জানাই৷
এবার কি সাঁতার – যোগায় জয় করলে সেটা প্রমাণ হবে?’’ মাসুদুরের কথাটাই আক্ষরিকভাবে প্রমাণ করার চেষ্টায় রয়েছেন পরিমলও ৷
মনের জোর ও অধ্যবসায়ে যে পায়ের অভাবও পুষিয়ে দেওয়া যায়, তা প্রমাণ করতে এখনও অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিমল ৷
ইচ্ছেশক্তির জোরেই সাইকেলে চেপে অসুস্থদের পরিষেবায় প্রতিনিয়ত ছুটছেন বনগাঁর পরিমল ৷এ এক অন্য দৌড় । এক অন্য ম্যারাথন ৷