সৌদি আরব সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । তবে তাঁর সফরে থাকাকালীনই জম্মু-কাশ্মীরে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে । ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। এই খবর পাওয়া মাত্রই সৌদি সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরলেন মোদী। মঙ্গলবার রাতেই দিল্লির বিমান ধরেছিলেন। বুধবার ভোরে দেশে পৌঁছেছেন তিনি। এদিন সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর এ বার কী করবে কেন্দ্র? কোন পথে অ্যাকশন হবে, তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।
মোদীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। উপস্থিত ছিলেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। বৈঠকের শুরুতেই মোদীকে ঘটনার বিস্তারিত জানান আধিকারিকরা। তারপর শুরু হয় বৈঠক।
মঙ্গলবার দুপুরে পাহাড় ঘেরা পহেলগামের বৈসরনে আচমকাই হামলা চালায় জঙ্গিরা। পর্যটকরা তখন ঘুরছিলেন রিসর্টের সামনে সবুজ উপত্য়কায়। জানা গিয়েছে, রীতিমতো ধর্ম পরিচয় জেনে বেছে বেছে খুন করা হয়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম বহু।
মঙ্গলবার সকালে দু’দিনের সফরে সৌদি গিয়েছিলেন মোদী। জঙ্গি হামলার খবর পেতেই সফর কাটছাঁট করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মোদী। ফোন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এই জঘন্য কাজের পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে…কেউ রেহাই পাবে না! তাদের অসৎ উদ্দেশ্য কোনওদিন কখনও সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্পে আমরা অটল এবং এই সংকল্প আরও শক্তিশালী হবে।’
ঠিক কী হয়েছিল?
স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে বৈসারণ উপত্যকায় ঢোকে এবং হঠাৎ করেই পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, প্রথম ওরা সকলের নাম, ধর্ম জিজ্ঞেস করছিল। মুসলিম না হওয়ায় গুলি চালিয়েছে! ২৬ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ২০ জন। কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা থেকে আসা বহু পর্যটক সেখানে ছিলেন।
ওই এলাকা কেবলমাত্র হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে করেই পৌঁছনো যায়। জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার স্থানীয় শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
ইতিমধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরব, ইতালি, ইজরায়েল, ইরান, শ্রীলঙ্কা… সবই দেশই এই জঙ্গি হামলার ঘটনার ব্যাপক নিন্দা করেছে। তাঁদের মূল বক্তব্য একটাই, কোনও মতেই জঙ্গি হামলার মতো ঘটনা প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। তাঁরা এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে এবং ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কাশ্মীর জুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই কাশ্মীর পৌঁছন অমিত শাহও। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং উপরাজ্যপাল মনোজ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তখনই জানানো হয়েছিল, সৌদি সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরছেন মোদী। এই নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন। ঘটনার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে আরও একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দাবি তুলেছেন নেটিজেনরা। এখন দেখার কেন্দ্র কী করে।