রবিবার বাংলায় তিন সভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। প্রথম সভা পুরুলিয়ায়। সেখানে বিজেপির প্রার্থী জ্য়োতির্ময় মাহাতো। তাঁর হয়ে প্রচার করবেন মোদী। ২৫ মে, ষষ্ঠ দফায় ভোট রয়েছে পুরুলিয়ায়। রবিবার পুরুলিয়ার পর বিষ্ণুপুর এবং মেদিনীপুরে রয়েছে মোদীর পরের দুই জনসভা।
দেশের সময় আগামী ২৫ মে পুরুলিয়ায় ষষ্ঠ দফায় ভোট রয়েছে। রবিবার সেখানেই পুরুলিয়া বিধানসভার অন্তর্গত গ্যাঙাড়া হাইস্কুল সংলগ্ন মাঠে বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় মাহাতোর হয়ে প্রচারে আসেন মোদী।
মোদী বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, ভারতের কথা বলতেন, তখন অনেক মানুষ তাঁর ভক্ত হন। যাঁরা ভারতকে ঘৃণা করতেন, তাঁরা অপমান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। কিন্তু তিনি মা ভারতীর অভিযান নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তিনি ভয় পাননি। বাংলায় আজ এমনই হচ্ছে। নির্বাচনে বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে সব সীমা পার করেছে।
দেশ, দুনিয়ায় ইস্কনকে সকলে চেনে। রামকৃষ্ণ মিশন করেছিলেন বিবেকানন্দ। সেবার জন্য ভারত সেবাশ্রমকে সারা দুনিয়া চেনে। এই সংগঠনগুলি ভারতের নাম উজ্জ্বল করে। কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে এঁদের ভক্তরা। সেবার কাজ করেন। বাংলার সরকার তাঁদের দিকে আঙুল তুলছে। নাম নিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এত সাহস! নিজের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে, তোষণ করতে তৃণমূল এত নিচুতে নেমেছে।
বাংলার মানুষ, লাখ লাখ মানুষের ভক্ত, ভাবাবেগ খেয়াল করে না। স্বামী বিবেকানন্দ, প্রভুপাদ, প্রণবানন্দ মহারাজের অপমান দেশ সহ্য করবে না। যে সরকার বাংলার মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করে না, তাদের ভোটের শক্তি দিয়ে সাজা দিন, যাতে ওরা আর সন্ত, সাধুদের অপমান করতে না পারে। ’’
সন্দেশখালির ভাইরাল ভিডিও নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির দাবি, ভুয়ো ভিডিও করে সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে তৃণমূল।
এদিন ফের সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন , এবার শাহজাহানকে বাঁচাতে সন্দেশখালিতে মহিলাদের বদনাম করা হচ্ছে, বাংলায় প্রচারে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমনই তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বেশ কয়েকদিন আগে সন্দেশখালির কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। স্টিং অপারেশনের সেই সব ভিডিওতে বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা গেছে, সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো। ধর্ষণের ঘটনাও মিথ্যে। যা নিয়ে লোকসভা ভোট চলাকালীন বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। যদিও ভুয়ো ভিডিও বলে দাবি করেছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চম দফার ভোটের আগে মোদীর বক্তব্যেও উঠে এল সেই ভিডিও প্রসঙ্গ।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “শাহজাহানকে বাঁচাতে সন্দেশখালির মহিলাদের বদনাম করছে তৃণমূল। তাঁদের চরিত্র নিয়ে আঙুল তুলছে। ওঁদের জন্য যে ভাষায় কথা বলছে, তার জবাব বাংলার সব মহিলা দেবেন। ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবেন। তৃণমূলকে বরবাদ করবেন।’’
চব্বিশের লোকসভা ভোটে আগাগোড়াই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব তো বটেই বাংলায় প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ কেন্দ্রের প্রথম সারির বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের উঠে এসেছে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। কিন্তু মে মাসের প্রথম দিকে সন্দেশখালির ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। একের পর এক ভাইরাল ভিডিওতে সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো এমন তত্ত্ব উঠে এসেছে। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। যা মনিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে নতুন করে উত্তপ্তও হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। সেখানকার মহিলাদের একাংশের বক্তব্য, মিথ্যে অভিযোগে তাঁদের বদনাম করা হচ্ছে। সেই সুর টেনে এদিন মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল মা, মাটি, মানুষের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু বাংলার মহিলারা আর তৃণমূলকে ভরসা করেন না। সন্দেশখালিতে যে পাপ হয়েছে, তাতে পুরো বাংলার মহিলাদের ভাবাচ্ছে। সন্দেশখালির মহিলাদের বদলাম করছে তৃণমূল।’’
পুরুলিয়ায় বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় মাহাতোর সমর্থনে প্রচারে বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্নীতি, টাকা উদ্ধার, শেখ শাহজাহান ইস্যুতে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী কী কী বললেন , এক নজরে দেখুন …
আপনার কাছ থেকে কেবল ভোট চাইতে আসিনি। আমি আপনাদের আর্শীবাদ নিতে এসেছি। বিকশিত ভারতের জন্য আর্শীবাদ চাই। ৪ জুন আর বেশি দিন বাকি নেই। মোদী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পোল খুলে ফেলেছে।
ওরা ভোট ব্যাঙ্কের খুশি করতে CAA বিরোধিতা করে। তৃণমূল দলিত, আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। কর্নাটকে OBC কোটা মুসলমানদের দিয়ে দিয়েছে। TMC কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে।
তৃণমূল ও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক আপনারা নন। তাই ওদের আপনাদের জন্য একটুও কোনও দরদ নেই। তৃণমূল মিথ্যা বলছে, যে মা মাটি মানুষের রক্ষা করবে। আজ তৃণমূল মা মাটি মানুষেরও ভক্ষক হয়েছে। বাংলার মানুষের ভরসা তৃণমূলের ওপর থেকে চলে গিয়েছে।
সন্দেশখালিতে যে পাপ হয়েছে, তাতে বাংলার মহিলাদের ভাবাতে বাধ্য করছে। SC, ST পরিবারের লোকদের তো তৃণমূল মানুষই ভাবে না। শাহজাহানদের বাঁচাতে গিয়ে সন্দেশখালির বোনদেরই দোষী সাব্যস্ত করছে।
সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের জন্য যে ভাষা ওরা ব্যবহার করছে, তার জবাব বাংলার মহিলারা ভোট দিয়ে উত্তর দেবে।
তোলাবাজি করা, চুরি করা, তৃণমূলের আচার-বিচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাতেও চুরি করেছে। শিক্ষকদের নিয়োগে হাজারও যুবকের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। ওদের দেনায় ডুবে দিয়েছে। যুব সমাজ লোন নিয়ে তৃণমূলের লোকেদের টাকা দিয়েছে। বাংলার গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষক নেই। তৃণমূল হোক, কংগ্রেস হোক, একই থালার এপাশ-ওপাশ।
কংগ্রেসের মন্ত্রী, সাংসদের পাশ থেকে নোটের পাহাড় মিলছে। আমি আমার জীবনে চোখের সামনে নোটের পাহাড় দেখেনি, যা এই চোরদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হচ্ছে। এখানে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের কাছ থেকেও নোটের পাহাড় উদ্ধার হয়। আর গালি মোদীকে দেয়। আমি কি দেশবাসীর কাছ থেকে কিছু লুকোই? ৪ জুনের পর ভষ্ট্রাচারীদের জীবনে জেলের বাইরে বেরোতে দেব না।
লুঠের পয়সা মোদী যে উদ্ধার করছে, তা গরিবদের। আমি চেষ্টা করব, সেই পয়সা যেন তাঁরা ফেরত পান। মোদীর সবাইকে প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। সবাই ঘর পেয়েছেন, বাথরুম-গ্যাস সবাই পেয়েছেন। বিনা পয়সায় রেশন দিয়েছে, কোথাও কোনও ভেদাভেদ করেনি।
পুরুলিয়ায় জলের সঙ্কটের কথা আমি জানি। মোদী চেষ্টা করছে, দেশের প্রত্যেক বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া। গত পাঁচ বছরে ১২ কোটির বেশি ঘরে জল পৌঁছেছে। পুরুলিয়ায় তৃণমূল সরকার এই অভিযানকে এগোতে দিচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশে, যেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে, সেখানে প্রত্যেক দিন ৩০ হাজার ঘরে জল পৌঁছাচ্ছে।