
পুরীর সঙ্গে জুড়ে গেল কৃষ্ণনগর। মিশ্রের সঙ্গে সংসার পাতলেন মৈত্র। চার হাত এক হল প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদের। চুপিসারে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তবে এই বিয়ের সাক্ষী ছিল না কলকাতা বা দিল্লি। জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক রাজপ্রাসাদের ছাদে, অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হল এই রাজনীতিক যুগলের বিয়ে। মহুয়ার বর— বিজু জনতা দল (বিজেডি)-র প্রাক্তন সাংসদ ও বিশিষ্ট আইনজীবী পিনাকী মিশ্র।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ৫১ বছর বয়সি মহুয়া এবং ৬৫ বছর বয়সি পিনাকী, দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিবাহ। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বলেজানা গেছে, তবে এবারই প্রথম তাঁরা আইনত সেই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিলেন। মহুয়ার ঘনিষ্ঠমহলে এই সম্পর্কের কথা জানা থাকলেও, সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশ পেল বিয়ের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। বার্লিনের ব্রেন্ডেনবার্গ গেট সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় নবদম্পতিকে, সেই ছবিই ভাইরাল হয়ে যায়।

পিনাকী মিশ্র একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা এবং দেশের প্রথম সারির আইনজীবীদের একজন। ১৯৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর ওড়িশায় জন্ম পিনাকীর। আইনজীবী হিসেবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের ‘সিনিয়র অ্যাডভোকেট’, এবং প্রায় সব বড় হাইকোর্ট ও ট্রাইবুনালে আইন লড়েছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি পাশ করেন।

তিনি প্রথম ১৯৯৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে পুরী লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ব্রজ কিশোর ত্রিপাঠিকে পরাজিত করেন। পরে তিনি বিজু জনতা দলে যোগ দেন এবং একাধিকবার পুরী কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
তবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি বিজেডি। ওড়িশা রাজনীতিতে গুঞ্জন, মহুয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েই বিতর্ক এড়াতে তাঁকে প্রার্থী করেননি নবীন পট্টনায়েক। যদিও, পাল্টা মতে, পিনাকী নিজেই প্রার্থী হতে চাননি।
তৃণমূল ও বিজেডি—ভারতের দুই আঞ্চলিক দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ মুখের এমন সংযোগ নিঃসন্দেহে নজরকাড়া। একদিকে আগ্রাসী ও স্পষ্টভাষী হিসাবে পরিচিত মহুয়া মৈত্র, অন্যদিকে অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান আইনজীবী ও রাজনীতিক পিনাকী মিশ্র—তাঁদের এই যুগলবন্দি ভারতের রাজনৈতিক জগতের নতুন চর্চার জন্ম দিচ্ছে।
তাঁদের বিয়ের পোশাকেও ছিল নজরকাড়া রুচি ও ঐতিহ্য। ঘিয়ে ও গোলাপি শাড়িতে সজ্জিত মহুয়া ছিলেন মোহময়ী, তাঁর সঙ্গে রঙ মেলানো সাদা কুর্তা-পাজামা ও জহরকোটে পিনাকী মিশ্রও ছিলেন রাজকীয় চেহারায়। সাধারণত বলিউড তারকাদের মধ্যে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এখন ফ্যাশন হলেও, ভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এমন দৃশ্য বিরল।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে সরে দু’জনে যেভাবে ব্যক্তিগত পরিসরে সুখ খুঁজে নিলেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন দেখার, এই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোনও রাজনৈতিক সমীকরণকেও নতুন রঙ দেয় কি না!